শিক্ষা

রাজশাহী পলিটেকনিকে উপবৃত্তির টাকায় ভাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী : রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের বিদায়ী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকায় ভাগ বসাচ্ছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। উপবৃত্তির ১২ হাজার টাকার মধ্যে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এক হাজার টাকা করে কেটে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে ছাত্রলীগ নেতাদের দাবি, বিদায় অনুষ্ঠানের চাঁদা হিসেবে এই টাকা আদায় করা হচ্ছে। পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, এবার প্রতিষ্ঠানটির ৮টি বিভাগ থেকে ৭৩৮ জন শিক্ষার্থী অষ্টম সেমিস্টার শেষ করেছেন। এই শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন। এ জন্য সরকার থেকে তাদের ১২ হাজার টাকা করে এককালীন উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। রোববার সিভিল ও কম্পিউটার বিভাগের শিক্ষার্থীদের এই টাকা দেয়া হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীর মধ্যে টাকা বিতরণ করা হবে। বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীরা জানান, রোববার দুপুরে অফিস কক্ষে উপবৃত্তির টাকা বিতরণের আগে শিক্ষার্থীরা লাইনে দাঁড়ান। এ সময় ছাত্রলীগ পলিটেকনিক শাখার নেতাকর্মীরা তাদের জানান, সবাইকে এক হাজার টাকা করে দিয়ে যেতে হবে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা টাকা দিতে রাজি নয়। এ সময় তারা অধ্যক্ষ আলী আকবর খানকে বিষয়টি জানান। কিন্তু অধ্যক্ষও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পক্ষে সাফাই গান। তখন শিক্ষার্থীরা কিছু সময়ের জন্য অধ্যক্ষকে তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখেন। এর ফলে বন্ধ হয়ে পড়ে টাকা বিতরণ। এরপর বিকেলে অবশ্য টাকা বিতরণ আবার শুরু হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীদের মাথা পিঁছু এক হাজার টাকা করে ঠিকই দিতে হয়েছে । শিক্ষার্থীরা জানান, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রতিটি বিভাগে একজনকে দায়িত্ব দিয়েছেন টাকা আদায়ের জন্য। অফিস থেকে টাকা তোলার পরই বারান্দায় তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এবার ৭৩৮ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে এক হাজার করে মোট সাত লাখ ৩৮ হাজার টাকা তোলার টার্গেট নিয়েছে ছাত্রলীগ। উপবৃত্তি বিতরণের প্রথম দিন থেকেই টাকা তোলা শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীরা কেউ এর প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না। আবার সনদ আটকে দেওয়ার ভয়ে পলিটেকনিক প্রশাসনের বিরুদ্ধেও তারা কিছু করতে পারছেন না। তাই ভয়ে তাদের টাকা দিতে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ আলী আকবর খান বলেন, ‘টাকা আদায় করার জন্য কয়েকদিন আগে পলিটেকনিক ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা আবেদন করেছেন। এ টাকা দিয়ে বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে বলে জানানো হয়েছে। তাই তাদের টাকা আদায়ের মৌখিক অনুমতি দিয়েছি।’ তবে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এর আগেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অনুষ্ঠানের নামে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি থেকে টাকা আদায় করেছেন। কিন্তু তারা কোনো অনুষ্ঠানেরই আয়োজন করেননি। পরবর্তীতে ওই সব টাকার কোনো হদিসও পাওয়া যায়নি। ছাত্রলীগ রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট শাখার সাধারণ সম্পাদক রাশেদ রহমান বলেন, এবার আমাদের ‘মনোনীত’ সাধারণ শিক্ষার্থীরা টাকা আদায় করছেন। তবে এর সঙ্গে ছাত্রলীগের কোনো সম্পর্ক নেই। সাধারণ শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে, ছাত্রলীগ তাদের সহযোগিতা করবে। আগামী ১৫ জানুয়ারির পর যে কোনো দিন অনুষ্ঠান হবে বলেও দাবি করেন তিনি।

   

রাইজিংবিডি/রাজশাহী/১২ ডিসেম্বর ২০১৬/তানজিমুল হক/টিপু