শিক্ষা

দশ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পাসের হার

আবু বকর ইয়ামিন : এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় গত ১০ বছরের মধ্যে এবার পাসের হার সবচেয়ে কম। ২০০৭ সালে পাসের হার ছিল ৬৫ দশমিক ৬০ শতাংশ। এর পরের নয় বছর পাসের হার বেশি হলেও এ বছর তা কমে হয়েছে ৬৮ দশমিক ৯১। ফলাফল পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ ৫ প্রাপ্তি দুটোই গতবারের চেয়ে কমেছে। ১০টি বোর্ডে গড় পাসের হার ৬৮ দশমিক ৯১। জিপিএ ৫ পেয়েছে ৩৭ হাজার ৭২৬ জন। গত বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় গড় পাসের হার ছিল ৭৪ দশমিক ৭০। জিপিএ ৫ পেয়েছিল ৫৮ হাজার ২৭৬ জন। মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তনের কারণে এবার পাসের হার ও জিপিএ ৫ কমেছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।  পাসের হার, জিপিএ ৫ পাওয়া, শতভাগ পাস ও শূন্য পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-সব সূচকেই অবনতি হয়েছে এবার। গত বছরের তুলনায় এবার পাসের হার ৫.৭৯ কম। গত বছরের তুলনায় এবার সারা দেশে জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ২০ হাজার ৫৫০ জন। সামগ্রিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০০৭ সালের পর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এটাই সবচেয়ে খারাপ ফল। বিগত কয়েক বছর ক্রমাগত উন্নতি করলেও ২০১৫ সালে পাসের হার কমে গিয়েছিল। সে বছর পাসের হার ছিল ৬৯.৬০ শতাংশ। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০০৭ সালে পাসের হার ছিল ৬৫.৬০। ২০০৮ সালে ৭৬.১৯। ২০০৯ সালে ৭২.৭৮। ২০১০ সালে ৭৪.২৮। ২০১১ সালে ৭৫.০৮। ২০১২ সালে ৭৮.৬৭। ২০১৩ সালে ৭৪.৩০। ২০১৪ সালে ৭৮.৩৩। ২০১৫ সালে ৬৯.৬০। ২০১৬ সালে পাসের হার ছিল ৭৪.৭০ শতাংশ। আট সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে আলিম, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি (ভোকেশনাল) এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ডিআইবিএস (ডিপ্লোমা ইন বিজনেস স্টাডিজ) পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয় আজ। সকালে শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যানদের নিয়ে গণভবনে পরীক্ষার ফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেন। দুপুর ১টায় সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এবারের ফলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী। দুপুর ২টা থেকে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট, মোবাইল ফোনে এসএমএস এবং নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ফল জানতে পারে।

 

পরীক্ষার খাতা ভালোভাবে মূল্যায়নের কারণেই এমন ফল হয়েছে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেন, ‘এবার ৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ কম পাস করেছে। পাস কম করায় আমরা বিস্মিত হইনি। পরীক্ষার খাতা ভালোভাবে মূল্যায়ন করার কারণেই এ ফল হয়েছে। গত মাধ্যমিক (এসএসসি) পরীক্ষাতেও একই ঘটনা ঘটেছিল। এসএসসিতে গতবারের চেয়ে ৮ শতাংশ কম পাস করেছে। সে ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে এইচএসসিতে কম খারাপ হয়েছে; এটা সাফল্য।’ ‘আমরা একটি কমিটি করে দিয়েছি, যার অধীনে পরীক্ষার খাতাগুলো বিশেষভাবে মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। এখানে ঢালাওভাবে খাতা মূল্যায়নের কোনো সুযোগ নেই। প্রথমে আমরা প্রধান পরীক্ষককে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। পরে তিনি অন্যদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। খাতা দেখার বিশেষ মূল্যায়নের কারণেই ফলের এই পার্থক্য হচ্ছে। এতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই, এটা আমাদের সাফল্য। ভবিষ্যতে এটা ধীরে ধীরে একটা স্থির অবস্থায় আসবে,’ বলেন শিক্ষামন্ত্রী। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘খাতা দেখার এই পদ্ধতিতে সবাই একমত হয়েছে। সংবাদমাধ্যমও এ ব্যাপারে আমাদের সাহায্য করেছে।’ এবার ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা ভালো ফল করেছে। ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এবার ২ দশমিক ৮২ ভাগ বেশি পাস করেছে। মাদ্রাসা, কারিগরিসহ ১০টি শিক্ষা বোর্ডের আওতায় এবার পরীক্ষায় অংশ নেয় ৮ হাজার ৮৬৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১১ লাখ ৮৩ হাজার ৬৮৬ পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে পাস করেছে ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৯৪২ জন। এবার জিপিএ ৫ পেয়েছে ৩৩ হাজার ২৪২ জন। গতবারের চেয়ে এবার প্রায় ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী কম পাস করেছে। গত ২ এপ্রিল সারা দেশে একযোগে শুরু হয় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। লিখিত পরীক্ষা শেষ হয় ১৫ মে। এ বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র ৬ লাখ ৩৫ হাজার ৬৯৭ জন, ছাত্রী ৫ লাখ ৪৭ হাজার ৯৮৯ জন। সারা দেশে মোট ২ হাজার ৪৯৭টি কেন্দ্রে পরীক্ষা হয়। ‘ফেল করে ভেঙে পড়লে হবে না’ রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ জুলাই ২০১৭/ইয়ামিন/রফিক