শিক্ষা

বাগেরহাটের সরকারি পিসি কলেজ এখন শতবর্ষে

আলী আকবর টুটুল, বাগেরহাট :  বাগেরহাটের সরকারি পিসি কলেজ এখন শতবর্ষে । ১৯১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত কলেজটি ৯ আগস্ট বুধবার শতবর্ষে পদার্পণ করল। শিক্ষাবিদ তৈরি ও নানা কীর্তি গড়ার জন্য বাগেরহাটের সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী কলেজটি আজ ইতিহাসে গৌরবোজ্জল। ১৯১৮ সালের ৯ আগস্ট বাগেরহাট শহরের হরিণখানা এলাকায় ১২ বিঘা জমির উপর বাগেরহাট কলেজ নামে যাত্রা শুরু হলেও ১৯৩২ সালে আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র মহাবিদ্যালয় নামে নামকরণ করা হয়। যা সংক্ষেপে পিসি কলেজ নামে সর্বজন পরিচিতি পায়। এই কলেজ থেকে কৃতকার্য হওয়া প্রতিভাবান শিক্ষার্থীদের অনেকেই কবি, রাজনীতিক, মন্ত্রী, সাংসদ, আমলা, চিকিৎসক, শিক্ষক হয়ে দেশ সেবার কাজে নিয়োজিত ছিলেন ও রয়েছেন। স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু, কবি মেঘনাদ রায়, শেরেবাংলা একে ফজলুল হক এই কলেজেরই ছাত্র ছিলেন । ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলন ও একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধে এই বিদ্যাপিঠের শিক্ষক ও ছাত্রদের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। কলেজটির জন্ম অসহযোগ আন্দোলনের ঐতিহাসিক সময়ে। ১৯০৫ সালে বাগেরহাট শহরের কাড়াপাড়া শরৎচন্দ্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক সম্মেলনে রসায়ন বিজ্ঞানী কোলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের উপস্থিতিতে কাড়াপাড়ার তৎকালিন জমিদার প্রসন্ন কুমার ভট্টাচার্য বাগেরহাটে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেন। তখন আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র প্রস্তাবটিতে সম্মতি দিয়ে বাগেরহাটের উন্নয়নে হাবেলি হিতৈষিণী পরিষদ গঠন করেন। ওই পরিষদে স্থানীয় শিক্ষানুরাগীরা কলেজ প্রতিষ্ঠায় যোগ দেন। তারা তৎকালিন বাগেরহাট মহকুমার শহরের হরিণখানা এলাকায় কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিলে স্থানীয় কয়েকজন দরিদ্র জমির মালিক তাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে ১২ বিঘা জমি কলেজের নামে দলিল করে দেন। ১৯১৬ সালে তাদের দান করা জমিতে গড়ে তোলা হয় গোলপাতার ঘর। তৈরি হয় শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষকদের আবাস।  দুই বছর পর ১৯১৮ সালের ৯ আগস্ট ওই গোলপাতার ঘরে বাগেরহাট কলেজ নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু। প্রতিষ্ঠার পর কয়েক বছরেই কলেজের সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৩২ সালের দিকে কলেজটি আর্থিক দৈন্যতায় পড়ে। ওই সময়ে আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে টাকা দেন। ওই বছরই আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্রের ছাত্র অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের প্রচেষ্টায় বাগেরহাট কলেজ নাম পরিবর্তন করে আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র মহাবিদ্যালয় নামকরণ করা হয়। ১৯৩৩ সালে বাগেরহাট মহকুমার এসডিও বিষ্ণুপদ ভট্টাচার্য কলেজটির গোলপাতার ঘর ভেঙ্গে আধুনিকায়নে হাত দেন। তৈরি করেন নতুন অবকাঠামো। যার মধ্যে ছিল বিজ্ঞান ভবন, ছাত্রাবাস ও শিক্ষকদের আবাস। ১৯৭৯ সালের ৭ মে কলেজটি সরকারি হয়। ১৯৯৬ সালে ১৪টি বিষয়ে অনার্স ও ৯টি বিষয়ে মাস্টার্স কোর্স চালু হয়। বর্তমানে এখানে প্রায় সাড়ে আট হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত।

 

পিসি কলেজের প্রাক্তন ছাত্র বর্তমানে বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মীর শওকাত আলী বাদশা বলেন, ‘পিসি রায়ের অমর সৃষ্টি এই বিদ্যাপিঠ। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি আমার প্রাণের প্রতিষ্ঠান। ওই সময়ে এই প্রতিষ্ঠানে যারা আমার শিক্ষাগুরু ছিলেন তাদের কথা ভোলার নয়। তারা আমাদের সন্তানের মত ভালবেসে শিক্ষা দিতেন। যা এখন ভাবাই যায়না।’ এই কলেজের প্রাক্তন ছাত্র বর্তমানে বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ডা. মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘এই প্রজন্মের অধিকাংশই পিসি রায়ের কথা জানেনা।  শতবর্ষ পূর্তিতে পিসি রায়ের জীবনী তুলে ধরাসহ নানা অনুষ্ঠানমালা থাকবে।’ পিসি কলেজের প্রাক্তন ছাত্র ও শিক্ষক অধ্যাপক বুলবুল কবির বলেন, ‘পিসি রায়ের হাতে গড়া এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আমি ছাত্র থেকে শিক্ষক। যা আমি কোন দিন ভুলতে পারব না।’ সরকারী পিসি কলেজের উপাধ্যাক্ষ অধ্যাপক শেখ মুস্তাহিদুল আলম জানান,  পিসি কলেজের প্রাক্তন ছাত্র ও সুধিজনদের নিয়ে শতবর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠান উদযাপনে প্রস্তুতি সভা করা হয়েছে। আগামী বছরের মার্চ বা এপ্রিল মাস নাগাদ তারা শতবর্ষ উদযাপন করার প্রস্তুতি  নেওয়া হচ্ছে। এদিকে বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজের শতবর্ষে পদার্পণে বুধবার সকালে কলেজ ক্যাম্পাসে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বর্ণাঢ্য আনন্দ র‌্যালি বের করে। র‌্যালি শেষে তারা কলেজ চত্বরের আচার্য পিসি রায়ের ভাস্কর্যে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। পরে ভাস্কর্যের পাদদেশে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় অতিথি ছিলেন যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মাধব চন্দ্র রুদ্র। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ এইচ এম এ ছালেক। 

     

রাইজিংবিডি/বাগেরহাট/১০ আগস্ট ২০১৭/আলী আকবর টুটুল/শাহ মতিন টিপু