শিক্ষা

‘শিক্ষার সম্প্রসারণ হলেও মনোজগতের উন্নতি ঘটেনি’

আবু বকর ইয়ামিন : আজ পয়লা জুলাই। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯২১ সালের এই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সেই হিসাবে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘গুণগত শিক্ষা, প্রতিবন্ধকতা ও উত্তরণ’।

আর মাত্র দুই বছর পর বিশ্ববিদ্যালয় শতবর্ষে পা দিতে যাচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘ এসময়ে এসে এখনো প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির হিসাবের খাতা কষতে হচ্ছে। কতটুকু সাফল্য অর্জিত হয়েছে সে বিষয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।

এসময় তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অন্যতম লক্ষ্য ছিল বুদ্ধিভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা। সে লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে আমাদের শিক্ষার বিভিন্ন দিক সম্প্রসারিত হলেও মন মানসিকতার দিক থেকে সম্প্রসারিত হতে পারিনি। আমাদের শিক্ষার পরিকল্পনার মাঝে এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে।

‘আমাদের বিভিন্ন দিকে এখনো সংকীর্ণতা রয়ে গেছে। একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে দেশ ও জাতির জন্য কিছু একটা করবে সেটার চেয়ে বেশি চিন্তা করছে একটা চাকুরি নিয়ে। অথচ এখানে গবেষণা ও বুদ্ধিভিত্তিক চর্চার প্রয়োজন ছিল। তাদের ভাবতে হবে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে দেশ ও জাতির সেবা নিয়ে।’

সাবেক উপাচার্য আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি থাকতেই পারে। তবে সেটা যেন হয় জনকল্যাণের স্বার্থে। শিক্ষক রাজনীতিকেও উদারতার সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। সেখানে যাতে কোন ব্যক্তি, দল গোষ্ঠীর স্বার্থে নিজেদের কুক্ষিগত করে ফেলা না হয় সেটিও লক্ষ্য রাখতে হবে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ আজ উন্নয়নের শীর্ষে রয়েছে। তার অন্যতম কারণ হচ্ছে শিক্ষার সম্প্রসারণের পাশাপাশি মনোজগতের সম্প্রসারণ। সংকীর্ণ মন মানসিকতা নিয়ে কেউ কোনোদিন সফল হতে পারেনি। সেটি আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। শিক্ষার দিক থেকে আমাদের যেমন সর্বোচ্চ জায়গায় যেতে হবে তেমনি মন মনোযগতের দিক থেকেও উন্নতি লাভ করতে হবে।

বিশ্বমানের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করলে একজন যেমন বিশ্বমানের শিক্ষা অর্জন করবে তেমনি তাকে বিশ্বমানের উদার মানসিকতার পরিচয় দিতে হবে। সংকীর্ণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয় যে বিশ্ববিদ্যালয় একটি দেশের জন্ম দিয়েছে। বহু জ্ঞানী-গুণী-বিজ্ঞানী আর লাখো গ্র্যাজুয়েট উপহার দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ১৯৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে একাত্তরের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছে এ প্রতিষ্ঠানটি। ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবদান চির ভাস্বর হয়ে আছে লাল-সবুজের স্বাধীন পতাকায়।

একটি প্রতিষ্ঠাকালীন আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান উন্নয়নের অগ্রগতির জন্য যে সুযোগ সুবিধা থাকার দরকার ছিল তার অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত এ বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে তীব্র আবাসন সঙ্কটে শীত-বর্ষা উপেক্ষা করে হলের বারান্দায় থাকতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। তবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আকাশচুম্বী অট্টালিকা গড়া থেমে নেই।

অনেকেই বলছেন, শিক্ষা-গবেষণা অনেক পিছিয়ে রয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি। ছাত্ররাজনীতি হারিয়েছে তার আদর্শিক ধারা। পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষকের সংখ্যাও দিনদিন কমে যাচ্ছে। গবেষণার বর্তমানে নাজেহাল অবস্থা। শিক্ষকেরা জড়িয়ে পড়ছেন গবেষণা জালিয়াতিতে। প্রতিষ্ঠাকালীন যে খোলামেলা আর সবুজে ঘেরা ক্যাম্পাস ছিল তা যেন ক্রমান্বয়ে লোপ পাচ্ছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা হারাতে বসেছে সবুজ শ্যামল সুন্দর রুচিশীল পরিবেশ।

শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, লাল ফিতার দৌরাত্ম, শিক্ষকদের নোংরা রাজনীতি, দায়িত্বে অবহেলার কারণে পিছিয়ে রয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি। রাইজিংবিডি/ঢাকা/১ জুলাই ২০২৯/ইয়ামিন/লাকী