শিক্ষা

লক্ষ্য যখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়

মো. সোয়াদুজ্জামান সোয়াদ : এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বেশিরভাগ শিক্ষার্থীদের প্রথম চাওয়া বা স্বপ্ন থাকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া। কিন্তু চাইলেই তো আর ভর্তি হওয়া যায় না, তার জন্যে মুখোমুখি হতে হয় ভর্তিযুদ্ধের। বিগত বছরগুলোতে দেখা গেছে, জিপিএ কম থাকার পরও অনেকে ভর্তিযুদ্ধে জয়ী হয়েছে আবার অনেকে জিপিএ ভালো থেকেও এই যুদ্ধে নাম লিখিয়েছে পরাজিত সৈনিকের দলে। পরিস্থিতি যখন এমন তখন অনেকের মনে বাসা বাঁধে নানা প্রশ্ন। ভর্তি যুদ্ধে কিভাবে অন্যদের থেকে নিজেকে এগিয়ে রাখা যাবে কিংবা কিভাবে পড়লে ভর্তিযুদ্ধটা সহজ হবে এমন প্রশ্নের উত্তর তখন জানতে চায় শিক্ষার্থীদের কৌতূহলী মন।

বাংলাদেশে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জবাবে যে উত্তরটি উঠে এসেছে তা হলো, ‘নিজেকে চাপমুক্ত রেখে কঠোর অধ্যবসায়, রুটিন মাফিক জীবন, হতাশাগ্রস্ত না হয়ে নিজের আত্মবিশ্বাস ধরে রাখা এবং সেই সঙ্গে খরগোশ এর গতি আর কচ্ছপের নীতিতে বিশ্বাস আনা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী এ. কে. এম নাজির আহমেদ ভর্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘দীর্ঘ ১২ বছর এর পরিশ্রম ও প্রস্তুতির বিনিময়ে ভর্তি পরীক্ষার এই সময়টুকু তোমরা পেয়েছ। এটাই সময় তোমাদের নিজেদের প্রমাণ করার। এইসময় কঠোর অধ্যবসায়ী হতে হবে। বিশ্বাস করো, এই সময়টা যদি হেসে খেলে কাটিয়ে দিয়ে চাও, দিতে পারবে। কিন্তু হ্যাঁ, অনেক পস্তাতে হবে জীবনে। এই কয়েকটা দিন এমন ভাবে পড়ো, যাতে বলতে পারো আমার সবটা দিয়ে চেষ্টা করেছিলাম। এমন কিছু করো না, যাতে আফসোস করতে হয়। নিজের সর্বোচ্চটা বের করে আনো। শুধু নিজের লক্ষ্যের দিকে তাকিয়ে পরিশ্রম করো। এমনভাবে প্রস্তুতি নেও যেন পরীক্ষার রুমে গিয়ে একবারের জন্যেও মনে না আসে যে, কোনো একটা জায়গায় তোমার কমতি ছিল। আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে রেখে নিজের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইটা চলিয়ে যাও। আবার অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসে ভুল উত্তর যেন দিয়ে না বসো। তাই সূক্ষ্মভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।’

শুধু অধ্যবসায়ী কিংবা পরিশ্রমী হলেই যে সব কিছু জয় করা যায় তা নয় আর যদি তাই যেত তাহলে গাধা হতো বনের রাজা। নিজেকে চাপমুক্ত রেখে মাথা খাটিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে নিজের সেরাটা দিতেই পারলেই ভর্তিযুদ্ধে হওয়া যায় সফল এমনটাই জানালেন আব্দুর রহমান সুমন। তিনি দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রিকালচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের লেভেল ২ সেমিস্টার ১ এর শিক্ষার্থী।

সুমন আরো বলেন, ‘আগামী মাস থেকেই শুরু হতে যাচ্ছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা নামক স্নায়ুযুদ্ধ। হাতে সময় ও খুব কম। পরীক্ষার সময় কতটা স্নায়ুবিক চাপ কাজ করে সেটা পরীক্ষা হলে গেলেই বোঝা যায় আবার, এ এমন এক পরীক্ষা যেখানে একসঙ্গে অনেকগুলো বিষয় থেকে প্রশ্ন করা হয়। যা পূর্বের অন্য সব পরীক্ষা থেকে ভিন্ন। তাই, বারবার প্রশ্ন-ব্যাংক কিংবা মডেল প্রশ্নগুলো সলভ করে নিজেকে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। বইতো সবাই পড়ে। কিন্তু জয়ী তারাই হয় যারা এই চাপের মাঝেও নিজেকে সামলিয়ে নিতে পারে। তাই, নিজেকে চাপমুক্ত রেখে মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকলে জয় হবেই হবে।’

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী কে এম হিমেল আহমেদের মতে, ‘ভর্তি যুদ্ধ’, ‘অনেক পড়া’, ‘অনেক শিক্ষার্থী’ অনেক অনেক টেনশন। এই ভেবে গোসল, খাওয়া, ঘুম বাদ দিয়ে সময় অসময়ে পড়তে বসলে চলবে না। দরকার একটা প্রত্যাহিক রুটিনের যার মধ্যে খাওয়া, ঘুম, খেলাধুলা সব কিছুর জন্য থাকবে আলাদা ভাবে সময়ের উল্লেখ।

তার মতে, ‘এসময়ে অনেকে অনেকরকম চাপ নিয়ে পড়ে, টেনশনে ঘুম হয় না, মানসিক ভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পরে। তা না করে প্রতিদিন রুটিন ধরে পড়তে হবে। সময় আর নিজের অবস্থা বিবেচনা করে রুটিন নিজের মতো করে বানাও, ভাঙ, যেটা কার্যকরী মনে হবে সেভাবে রুটিন করে নাও। রুটিনের মধ্যে ঘুম, খাওয়া-দাওয়া, খেলাধুলা সবগুলোর জন্য আলাদা ভাবে সময় উল্লেখ্য কর। ভর্তি যুদ্ধে তুমি জয়ী হবেই। আর রুটিনে যে সময়টা পড়ার সে সময়টা শুধু পড়ার জন্যই রাখ। পড়তে বসে মোবাইল চাপা কিংবা অন্য কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখ। মোট কথায় পড়ার সময় মনোযোগ সহকারে পড়। সম্ভব হলে মোবাইল সুইচ অফ করে দূরে রাখাটাই শ্রেয়।’

এসময় অধিকাংশ শিক্ষার্থী কোচিং সেন্টার কিংবা প্রাইভেট প্রোগ্রাম এর সাথে জড়িয়ে পড়ে। সেগুলোর বেশিরভাগগুলোতেই পরীক্ষা নেয়া হয় নিয়মিত। এ পরীক্ষাগুলোতে যে শিক্ষার্থীরা তুলনামূলক ভাবে কম নম্বর পায় তারা ভেঙে পড়ে ভাবতে শুরু করে তাকে দিয়ে হবে না। আবার কেউ অধিক নম্বর পেতে পেতে হয়ে পড়ে অতি আত্মবিশ্বাসী। নেতিয়ে যাওয়া আর অতি আত্মবিশ্বাস দুটোকেই ভর্তি যুদ্ধে জয় পাওয়ার প্রথম ও প্রধান বাধা হিসেবে অভিহিত করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ডিসিপ্লিন বিভাগের মো. আরাফাত মিলন।

মিলন আরো যোগ করে বলে, ‘কয়েক বছরে অনেক লম্বা সময় ধরে অল্প অল্প করে তুমি অনেক পড়েছ, তুমি অনেক জানো। তোমার কোচিং কিংবা প্রাইভেট প্রোগ্রাম এর পরীক্ষায় ভালো নম্বর তুলতে পারছ না এটা তোমার কমতি। তোমাকে আরো শ্রম দিতে হবে, মনের মধ্যে ক্ষোভ জমিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। বিজয়ের ঝান্ডা উড়ানোর জন্য। আর যারা অনেক অনেক নম্বর পেয়ে প্রথম হচ্ছে তারা অবশ্যই ভালো করতেছে কিন্তু তারা আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠে। মনে রাখতে হবে কোচিং এর পরীক্ষা মূল এবং শেষ পরীক্ষা না। কয়েক লাখ শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে নিজের জায়গা করে নিতে হবে। অনেকে অতি আত্মবিশ্বাসী হওয়ার কারণে উত্তরপত্রে ভুল কিছুও উত্তর করে সেদিকে নজর রাখতে হবে।’

পরিশেষে মনে রাখতে হবে, শরীর সুস্থ থাকলে মন ভালো থাকবে আর মন ভালো থাকলে পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়বে। তাই, আনন্দ-বিনোদন ও সুস্বাস্থ্য রক্ষার মাধ্যমে নিজেকে শানিয়ে স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে জায়গা করে নেয়াই হোক একমাত্র লক্ষ্য। রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ আগস্ট ২০১৯/ফিরোজ