শিক্ষা

আওয়ামী ও বিএনপিপন্থী অধ্যাপকদের বাকবিতণ্ডা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষা বিষয়ক সর্বোচ্চ ফোরাম একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় আওয়ামী ও বিএনপি -জামায়াতপন্থী অধ্যাপকদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়েছে।

অবৈধভাবে ৩৪ ছাত্রলীগ নেতার ভর্তি ও ডাকসু জিএস গোলাম রাব্বানীকে অনিয়মের মাধ্যমে এম.ফিলে ভর্তির সুযোগ দেওয়াকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে।

গত সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে এক সভার আয়োজন করা হয়।

সভা সূত্র জানায়, সভায় প্রায় ১ ঘণ্টাব্যাপী অধ্যাপকদের মধ্যে নিয়ম বহির্ভূত ভর্তির পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্ক চলে। এ সময় ডাকসু নির্বাচনকে সামনে রেখে ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান ৩৪ নেতাকে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের অধীনে পরিচালিত সান্ধ্যকালীন 'মাস্টার্স অব ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামে’ বিনা ভর্তি পরীক্ষায় বিধি বহির্ভূতভাবে ভর্তি করানো এবং ডাকসুর নির্বাচিত জিএস’র অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে এম.ফিল ভর্তি সংক্রান্ত অনিয়মের বিষয়টি উপস্থাপিত হলে একে রাজনীতি বলে আখ্যায়িত করেন ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।

এ নিয়ে বিএনপি-জামায়াত সমর্থক সাদা দলের শিক্ষক এবং আওয়ামীপন্থী নীল দলের শিক্ষকদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়।

জানা যায়, সাদা দলের শিক্ষকদের মধ্যে আহ্বায়ক অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. মো. লুৎফর রহমান, অধ্যাপক ড. মো. ছিদ্দিকুর রহমান খান, অধ্যাপক লায়লা নূর ইসলাম বক্তব্য রাখেন।

অন্য দিকে বক্তব্যে জানানো তাদের দাবির বিপরীতে নীল দলের শিক্ষকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক জিনাত হুদা, অধ্যাপক আবুল মনসুর আহাম্মদ, অধ্যাপক ড. মো. অহিদুজ্জামান, অধ্যাপক ড. মো. মোশাররফ হোসেন, অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান প্রমুখ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিকেল তিনটার দিকে ঢাবির সিনেট ভবনে একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠক শুরু হয়। ঢাবি ভিসি অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অধ্যাপক, বিভাগের চেয়ারম্যান, বিভিন্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালকবৃন্দ, একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য সব মিলিয়ে প্রায় দেড়শতাধিক শিক্ষক সভায় অংশগ্রহণ করেন। বিভিন্ন বিষয়ে সভায় আলোচনা হয়। সভায় কথা বলার জন্য একাধিকবার সুযোগ চান ঢাবির পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম। তবে সভার শেষ দিকে তাকে সুযোগ দেয়া হয়।

তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনকে বিশেষ সুবিধা দানের উদ্দেশ্যে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ব্যাংকিং এন্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের অধীনে পরিচালিত 'মাস্টার্স অব ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামে’ ৩৪ জন শিক্ষার্থীকে অবৈধভাবে ভর্তির প্রতিকার না হতেই ডাকসুর নির্বাচিত জিএস’র অপরাধবিজ্ঞান বিষয়ে এম.ফিল ভর্তি সংক্রান্ত অনিয়মের কথা প্রকাশিত হয়েছে। আমরা মনে করি এটি ঢাবির ঐতিহ্য ও সুনামের জন্য অত্যন্ত হানিকর ঘটনা।’

তিনি আরো বলেন, ‘আজকের এই একাডেমিক কাউন্সিলের সভা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বডির সভা। এই সভায় মোট ৩৪ জন অবৈধ ভর্তি প্রক্রিয়ার তদন্ত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বরেণ্য ব্যক্তিদের নিয়ে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠনের প্রস্তাব করছি। এই তদন্ত কমিটির কাজ হবে উক্ত ভর্তির অনিয়ম তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা।’

পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যানের এই বক্তব্যের পরই আওয়ামী লীগ সমর্থিত নীল দলের বহু শিক্ষক হট্টগোল শুরু করেন। তারা বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানান।

এসময় ভিসি বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আপনারা এখানে রাজনীতি করতে এসেছেন। এখানে রাজনৈতিক দলের নেতা আছেন।’

তুমুল বাকবিতণ্ডা আর হট্টগোলের মধ্যেই অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলামের বক্তব্য এক্সপাঞ্জের ঘোষণা দেন ভিসি আখতারুজ্জামান। ঢাকা/ইয়ামিন/জেনিস