শিক্ষা

অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা: নানা জনের নানা মত

অনেক জল্পনা কল্পনা শেষে আগামী বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হতে যাচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনলাইন ভর্তি-পরীক্ষা। আগামীকাল বুধবার এর খসড়া প্রকাশ হতে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

তবে এ কার্যক্রম কতটা সফল হবে, এটি নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন শিক্ষাবিদরা। তারা বলছেন, সারাদেশের সব প্রতিষ্ঠানে এটি চালিয়ে যাওয়া কিছুটা অসম্ভব। তবুও প্রযুক্তির অগ্রগতি ও শিক্ষা কার্যক্রম ধারাবাহিক উন্নয়নের পথযাত্রায় এর বিকল্পও দেখছেন না তারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, অবশ্যই সবাই পারবে না, এটা আমাদেরকে এককথায় মেনে নিতে হবে। কারণ আমাদের বাংলাদেশের আর্থসামাজিক কথা বিবেচনা করে সকল শিক্ষার্থীর অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় এটি সবার পক্ষে সম্ভব না। তবে এটাকে অবশ্যই শুরু করা দরকার। এটি আমাদের আশার দিক। বিশ্বের অন্যান্য দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে এর বিকল্প নেই।

শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. একরামুল কবীর বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব কিছুর সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলাম। যেটার মাধ্যমে আমি বলতে পারি অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে এটি একেবারেই সম্ভব নয়। সবার আর্থ সামাজিক অবস্থা সমান না। অনেকে প্রাইভেট টিউশনি করে পড়াশোনা চালায়। তাদের পক্ষে এত টাকার ডাটা কিনে চালানো সম্ভব না। অনেকে গ্রামে থাকতে হচ্ছে, তাদের নেটের প্রবলেম হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে তাদের সক্ষমতার নাই।

ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম ওমর এজাজ রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সবার হাতেই এখন স্মার্টফোন। সবাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেন। ফেইসবুক হোয়াটসঅ্যাপসহ নানা মাধ্যম রয়েছে। এসবের মাধ্যমে অনলাইন কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব কিছু না। তাছাড়া যারা বিরোধিতা করেন, তাদের কাছে বিকল্প পন্থা হচ্ছে কিছুই না করা। সেটিতো একদমই করা যাবে না।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এখন একটা ক্রান্তিকাল আসছে। এটি আমাদের একটা সুযোগ করে দিয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের। অনলাইন কার্যক্রমে অনেক সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারবে না। সরকারের সহযোগিতা নিয়ে হলেও সেটি চালিয়ে যেতে হবে। অন্যথায় দীর্ঘ সময় শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার বাইরে চলে যাবে। এবং দেশের সার্বিক শিক্ষাব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমি মনে করি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি কন্টিনিউ করা একটু কঠিন হলেও অতটা অসম্ভব না।

এ কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. ইঞ্জিনিয়ার দিল আফরোজা বেগম বলেন, বর্তমানে ৯৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে রানিং রয়েছে। এর মধ্যে ৫০টির উপরে রয়েছে শুধু ঢাকার মধ্যে। তারা অনেকে আমাদেরকে অনলাইন কার্যক্রমের তথ্য দিয়েছেন। সেখানে দেখা গেছে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ শতাংশের উপরে শিক্ষার্থী অনলাইন কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। আর কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৫০ শতাংশের নিচে। এছাড়া কিছু শিক্ষক ইমেইল বা বিভিন্ন মাধ্যমে আমাদের কাছে জানিয়েছেন যে তারা বেতন পাচ্ছেন না। আমরা সবকিছু বিবেচনায় রেখেই মূলত অনলাইন কার্যক্রমের সঙ্গে সম্মত হয়েছি।

জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে এ কার্যক্রমের চেষ্টা করে আসছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন অনুমতি না দেওয়ায় তারা শুরু করতে পারছিল না। অবশেষে গত ৩০ এপ্রিল শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হলে সেখানে মন্ত্রী এর অনুমতি দেয়। পরিস্থিতি তাৎক্ষণিকভাবে ভর্তি ও শ্রেণিকাজ অনলাইনে চালানোর ব্যাপারে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতি-নির্ধারকরা সম্মত হন। ঢাকা/ইয়ামিন/সাজেদ