শিক্ষা

এইচএসসি পরীক্ষার বদলে মূল্যায়ন, বাড়ছে দুশ্চিন্তা  

করোনার কারণে চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষার পরিবর্তে মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অধিকাংশ অভিভাবক, শিক্ষক এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও দুশ্চিন্তা বাড়ছে শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশের। এই শিক্ষার্থীরা বলছেন, এর আগের পরীক্ষা খারাপ হওয়ায় তারা নতুন করে প্রস্তুতি নিয়েছেন।  কেউ কেউ বলছেন, তারা বিষয় পরিবর্তন করেছেন। এখন গড়ে মূল‌্যায়ন করলে ভালো ফল আসবে না। এসব কারণে তারা একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন পরীক্ষার ভিত্তিতে মূল্যায়নের দাবি জানান। 

তবে, মন্ত্রণালয় বলছে, মূল্যায়ন-প্রক্রিয়া নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাননি পরামর্শকরা। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।  জেএসসি-এসএসসি থেকে কত পার্সেন্ট করে নেওয়া হবে, সে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বিশেষজ্ঞদের অভিমতের ভিত্তিতে। 

শিক্ষাবিদরা বলছেন, মূল্যায়নের ক্ষেত্রে শুধু বিশেষজ্ঞরা নন, সব স্টেক হোল্ডারের অভিমতও নেওয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে শিক্ষার্থী-অভিভাবকেরও পরামর্শ নেওয়ার দাবি জানান তারা। টেলিফান কিংবা ই-মেইলে সব স্টেক হোল্ডার থেকে অভিমত নেওয়া যেতে পারে।  যেন এই মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে কোনো প্রশ্ন না ওঠে।

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানভিত্তিক মূল্যায়নকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।  শিক্ষার্থীদের যিনি পড়ান, তিনিই তাদের ব্যাপারে ভালো বলেত পারেন।  এটা কুদরত-এ খুদা কমিশনেও বলা আছে।’

শিক্ষাবোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, একজন এইচএসসি পরীক্ষার্থীর জেএসসি-এসএসসি পরীক্ষার প্রাপ্তফল গড়ের মাধ্যমে এইচএসসির গ্রেড দেওয়ার কথা।  তবে, এই গড় প্রকাশের ক্ষেত্রে আরও কয়েকটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। একজন পরীক্ষার্থী যদি জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পায় ও এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৪ পায়, তাহলে তার গড় জিপিএ আসে ৪.৫। অর্থাৎ ওই পরীক্ষার্থীদের এইচএসসি পরীক্ষার গ্রেড হওয়ার কথা জিপিএ-৪.৫। তবে, এভাবে গড় করে এইচএসসির ফল প্রকাশ করা হবে না।

উদ্বেগ প্রকাশ করে মাহমুদা সুলতানা নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমার এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৪ পয়েন্ট পেয়েছি। জেএসসিতে জিপিএ-৫ ছিল। এইচএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি ভালো ছিল। তবে, পরীক্ষা না হওয়ায় এখন ভালো ফল আসবে না। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি নিয়েও দুশ্চিন্তা বেড়ে গেলো।’

নাজমা আক্তার নামের এক শিক্ষার্থীর বাবা নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘সার্বিক মূল্যায়নের জন্য পরীক্ষার দরকার ছিল। প্রয়োজনে সংক্ষিপ্ত আকারে হতে পারতো।  এই সিদ্ধান্তের কারণে অনেকের ভালো ফলের আশা থাকলেও তার আর সুযোগ থাকছে না।’

জানা গেছে, জেএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার মান সমান নয়। আর এ কারণেই পরীক্ষার ফল প্রকাশের ক্ষেত্রে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় প্রাপ্ত গ্রেডের মান সমান ধরা হবে না। গ্রেড তৈরির ক্ষেত্রে জেএসসি থেকে কতটুকু ধরা হবে এবং এসএসসি পরীক্ষার গ্রেড থেকে কতটুকু নেওয়া হবে, তা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনেই করা হবে।    

উদয়ন কলেজের অধ্যক্ষ জহুরা বেগম বলেন, ‘কারিগরিতে অনেকেই জেএসসি ছাড়াই ভর্তি হয়েছেন।  এখানে সমস্যা তৈরি হবে। তবে, ফল নির্ধারণের সময় কলেজ কর্তৃপক্ষের সহায়তা নিলে কিছুটা জটিলতা কমতে পারে।’

নটরডেম কলেজের অধ্যক্ষ ড. হেমন্ত পিয়ূস রোজারিও বলেন, ‘বিভাগ পরিবর্তন করা শিক্ষার্থীদের মার্কশিট তৈরি করা নিয়ে জটিলতা তৈরি হবে।  এছাড়া, আমাদের এখানে মানবিক বিভাগে অনেকেই ৩.৫০ নিয়ে ভর্তি হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তারা এ প্লাস পায়। এক্ষেত্রে ফল মূল্যায়নে শিক্ষার্থীরা সঠিক রেজাল্ট পাবে না।’

মূল্যায়ন বিষয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, ‘আমরা পরীক্ষার্থীদের জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলের গড়ের বের করেই এইচএসসির গ্রেড দেবো। তবে এটি স্বাভাবিক যে গড়ের হিসাব করা হয়, সেভাবে করা হবে না। এরমধ্যে আরও কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত আছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী সময়ে আলোচনা করবো।’ সিদ্ধান্ত হলে সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে।