শিক্ষা

পরীক্ষার নতুন নির্দেশনাকে মন্দের ভালো বলছেন শিক্ষাবিদরা

চলতি বছরে এসএসসি-এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুধু গ্রুপভিত্তিক (বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্যসহ অন্যান্য গ্রুপ) তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ে সময় ও নম্বর কমিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নেওয়া হবে। এবার আবশ্যিক ও চতুর্থ বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া হবে না। শুধু সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে আবশ্যিক বিষয় এবং চতুর্থ বিষয়ের নম্বর যোগ করে ফল ঘোষণা করা হবে।

গত সোমবার এবারের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের বিষয়ে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করেছে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড।

সরকারের এমন রূপরেখার বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত দিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও শিক্ষাবিদরা।

শিক্ষকরা বলছেন, এই প্রক্রিয়া মন্দ হবে না। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের একদম পড়াশোনার বাইরে রাখার সুযোগ থাকছে না। অবশ্যই সুনির্দিষ্ট বিষয়ে পড়তে হবে। সবকিছুই টাচে রাখতে হবে।

এদিকে শিক্ষার্থীরা বলছেন, আমরা অটোপাস চাই না। যেভাবেই হোক যাতে পরীক্ষার ফর্মুলায় আসে। নইলে ভবিষ্যতে ক্যারিয়ার গঠনে এটিকে দুর্বলতা হিসেবে দেখছেন তারা।

সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষাবিদ সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার যে রুপরেখা দিয়েছেন এটাই বাস্তবসম্মত। যে রুপরেখা ঘোষণা করা হয়েছে সেখানকার মূল্যায়নে ঘাটতি থাকতে পারে, যদি তাতে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করা হয়। 

তিনি বলেন, পরিস্থিতি অনুকূলে আসামাত্র পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে আগামী সেপ্টেম্বর মাসকে টার্গেট করতে হবে।

গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, যে তিনটি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো প্র্যাকটিক্যাল-নির্ভর। ওই সময়ে কীভাবে প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষাগুলো নেওয়া হবে, তার একটা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা দরকার। আর অ্যাসাইনমেন্টে মূল্যায়ন ও প্রধান শিক্ষকদের অ্যাসাইনমেন্ট সংগ্রহ পদ্ধতি আরও শক্তিশালী করা দরকার। পরীক্ষার ক্ষেত্রে এক প্রতিষ্ঠানের খাতা অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা দেখেন। অ্যাসাইনমেন্টেও তা করা দরকার মূল্যায়নে নিরপেক্ষতার জন্য।

জাতীয় শিক্ষানীতি প্রনয়ন কমিটির সদস্য অধ্যাপক শেখ একরামুল কবির বলেন, সঠিক মূল্যায়ন যে হবে না এটা ধরেই নিতে হবে। যেখানে কিছুই হতো না, সেখানে এখন অন্তত কিছুটা হবে। এটা যে যথাযোগ্য কিছু হবে তা কিন্তু না। তবে যদি একেবারে পরীক্ষা না হয় একেবারে অটোপাশ হয়ে যায় তাহলে তো কিছুই হতো না। বলা যায় এটা মন্দের ভালো।

তিনি বলেন, সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে হতে পারলেও ভাল হতো। সম্পূর্ণ সিলেবাসে নিতে পারলে সবচেয়ে ভাল হতো। তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ে সময় ও নম্বর কমিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নেওয়া হবে। এটা মন্দের ভাল।

এর আগে গতকাল ঢাকা শিক্ষাবোর্ড থেকে জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চলতি বছরে এসএসসি ও সমমান এবং এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষা শুধু গ্রুপভিত্তিক তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ে সময় ও নম্বর কমিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নেওয়া হবে। করোনা অতিমারির কারণে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আবশ্যিক বিষয় ও চতুর্থ বিষয়ে কোনো পরীক্ষা নেওয়া হবে না। 

এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, জেএসসি ও সমমান এবং এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতে চতুর্থ বিষয়ের নম্বর যোগ করে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে এসএসসি ও সমমান এবং এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা-২০২১ এর ফলাফল দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে উচ্চ শিক্ষায় ভর্তিতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।

এ মুহূর্তে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন কার্ডে চতুর্থ বিষয় পরিবর্তন বা সংশোধনের সুযোগ নেই বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।