শিক্ষা

এনটিআরসিএর নিয়োগ: অভিযোগের পাহাড় প্রার্থীদের

দেশের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫৪ হাজার শূন্যপদে নিয়োগের গণবিজ্ঞপ্তির বিপরীতে প্রাথমিকভাবে ৩৮ হাজার শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। তবে, এই তৃতীয়  গণবিজ্ঞপ্তির নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে অনেক অসঙ্গতি ও  অভিযোগ তুলছেন নিয়োগ বঞ্চিত প্রার্থীরা।

তারা বলছেন, ৫৪ হাজার শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করার কথা থাকলেও মাত্র ৩৮ হাজার জনকে প্রাথমিকভাবে সুপারিশ করা হয়েছে। ১৫ হাজার পদ শূন্য থাকার বিষয়ে প্রার্থীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।  এতগুলো পদে নিয়োগ না দেওয়াকে তারা বলছেন, যেখানে ৮৯ লাখ আবেদন পড়েছে সেখানে মাত্র ১৫ হাজার পদে যোগ্য শিক্ষক পাওয়া না যাওয়ার কোনো কারণ নেই।  

তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তির সুপারিশের প্রাথমিক ফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সুপারিশকৃত ৩৮ হাজার পদে প্রায় ২০ হাজারের ও বেশি পদ ইনডেক্সধারীদের দখলে চলে গেছে। অর্থাৎ, আগের চাকুরিপ্রাপ্তরা প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করেছে।  যার ফলে, নতুন প্রার্থীরা নিয়োগ বঞ্চিত হয়েছেন।  গত কয়েক ব্যাচের নিবন্ধিত প্রার্থীদের ভালো নম্বর থাকা সত্ত্বেও সুপারিশপ্রাপ্ত হয়নি বলে অভিযোগ তাদের।

গণবিজ্ঞপ্তিতে ইনডেক্সধারীদের আবেদন নিয়ে ক্ষোভ: নিয়োগ বঞ্চিতরা বলছেন, গণবিজ্ঞপ্তির উদ্দেশ্য অ্যান্ট্রি লেভেল বা প্রবেশনারী পর্যায়ের শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া।  কিন্তু, এবারের ফলাফলে মনে হচ্ছে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি নয় বদলি বিজ্ঞপ্তি হয়েছে।  এতে বেকারত্ব বাড়ছে।  যোগ্য প্রার্থীরা নিয়োগ বঞ্চিত হচ্ছেন। তারা বিষয়টিকে নতুনভাবে বিবেচনার দাবি জানান। 

তাদের দাবি, ইনডেক্সধারীদের আগে আবেদন সম্পন্ন করে তারপর নতুন প্রার্থীদের আবেদন নেওয়া উচিত। তাহলে, ইনডেক্সধারী ও নতুন প্রার্থীরা যেমন সমানভাবে উপকৃত হবে তেমনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক শূন্য থাকার অভাবটুকু অনুভূত হবে না। 

পয়ত্রিশোর্ধ নিয়োগ নিয়ে অসন্তোষ:  এবারের গণবিজ্ঞপ্তিতে ৩৫ বছরের বেশি বয়সী প্রার্থীদেরও আবেদনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।  এর ফলে ৪৫- ৫০ বছর বয়সী প্রার্থীরাও সুপারিশ পেয়েছেন। এটি নিয়ে অসন্তোষ নিয়োগ বঞ্চিতদের মাঝে। 

তারা বলছেন, এমপিও নীতিমালার কোথাও ৩৫ বছরের বেশি প্রার্থীদের আবেদনের সুযোগের কথা উল্লেখ নেই। এরপরও এনটিআরসিএ আবেদন বাড়ানোর জন্য এই সুযোগ রেখেছে।  এতে তাদের ৯০ কোটি টাকা আয় হয়েছে। তবে নিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন মেধাবী ও তরুণ প্রার্থীরা বঞ্চিত হয়েছেন। 

দ্রুত ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে নীতিমালা অনুসরণ দাবি:  নিয়োগ প্রার্থীরা বলছেন, ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে পয়ত্রিশোর্ধ  প্রার্থীদের সুযোগ দেওয়া এমপিও নীতিমালা ও যেকোনো সরকারি নিয়োগ নীতিমালার নিয়ম বহির্ভূত। তাদের দাবি, নিয়োগের বয়সসীমা ৩৫ বছরের মধ্যেই হতে হবে। 

১৩তম নিবন্ধনকৃত বাকিদের নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন: ৩য় গণবিজ্ঞপ্তিতে ১৩তম নিবন্ধিত ব্যাচের ২ হাজার ২০৭টি পদে সরাসরি নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। যদিও এ পদগুলোর মামলার কার্যক্রম এখনো চলমান। অন্যদিকে, ১৩তম ব্যাচের বাকি প্রার্থীদের বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না থাকায় হতাশ হয়ে পড়েছেন ১৩তম ব্যাচের নিবন্ধনধারীরা। তারা বলছেন, ২ হাজার ২০৭ জন সরাসরি নিয়োগ পেলে বাকিরাও তাহলে সরাসরি নিয়োগের অধিকার রাখে। কিন্তু এনটিআরসিএর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। 

নারী কোটা পূরণ না হওয়ার মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দাবি:  যেসব প্রতিষ্ঠানে নারী কোটা পূরণ হয়নি সেগুলো দীর্ঘদিন খালি থাকে। এসব জায়গায় মেধার ভিত্তিতে নিয়োগে দাবি করেছেন প্রার্থীরা। 

সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য: সার্বিক বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গণবিজ্ঞপ্তি প্রত্যাশী ফোরামের একাধিক নেতাকর্মী রাইজিংবিডিকে জানান, আজ বাংলাদেশে ৩৮ হাজার পরিবারে হাসি ফুটেছে। তবে, নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান এনটিআরসিএ এর কিছু প্রক্রিয়ার পরিবর্তন বা পরিমার্জন জরুরি হয়ে পড়েছে। শতভাগ তরুণ মেধাবী ও দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ করতে হলে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগেই চাকরিরত ইনডেক্সধারীদের প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন বা বদলির আবেদন সম্পন্ন করা জরুরি। 

তারা বলেন, আবেদনের ক্ষেত্রে তরুণ মেধাবীদের বঞ্চিত করে এবং এমপিও নীতিমালাকে অবজ্ঞা করে পয়ত্রিশোর্ধ   বয়সী প্রার্থীদের সুযোগ দেওয়া কখনই সমীচীন হবে না। উল্লেখিত বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনটিআরসিএ এর দ্রুত পদক্ষেপ নেবে বলে আমরা আশায় আছি।

তাদের দাবি, প্রকাশিত গণবিজ্ঞপ্তির সুপারিশে ১৩তম, ১৪তম ও ১৫তম ব্যাচের মধ্যে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে, যা ঠিক নয়।  ১৩তম ব্যাচে ২২০৭ টি পদের সরাসরি নিয়োগের সুপারিশ দেওয়া হলো কিন্তু বাকিদের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই। যা এসব ব্যাচের প্রার্থীদের হতাশ করেছে।

পরবর্তী নিয়োগের গণবিজ্ঞপ্তি অবশ্যই ইনডেক্সধারীমুক্ত, রিটমুক্ত, সংরক্ষিত পদমুক্ত ও সম্পূর্ণ নতুনদের জন্য রাখার দাবি জানান ফোরামের নেতারা। একইসঙ্গে আবেদকারীদের বয়সসীমা সর্বোচ্চ ৩৫ রাখার দাবি তাদের।

এসব বিষয়ে কথা বলতে এনটিআরসি এর সচিবকে একাধিক বার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এবারের নিয়োগে যারা বঞ্চিত হয়েছেন তাদের পক্ষ থেকে অনেক অভিযোগ দেখা যাচ্ছে। তবে এনটিআরসি এর পক্ষ থেকে হাইকোর্টের নির্দেশনা ও নীতিমালার বাইরে কোন কার্যক্রম চালানো হয়নি।পরবর্তী নিয়োগের ক্ষেত্রেও পর্যালোচনার মাধ্যমে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে।