বিনোদন

সত্যিকারের ভালোবাসার ১০ সিনেমা

নাবীল অনুসূর্য : ভালোবাসাকে বিষয়বস্তু করে এ পর্যন্ত যে কত সিনেমা বানানো হয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। সত্যি বলতে, ভালোবাসা ছাড়া কোনো সিনেমা বানানোই তো সম্ভব নয়। তার মধ্যে যে সিনেমাগুলোর কাহিনি স্রেফ ভালোবাসাকে ঘিরেই আবর্তিত হয়, সেগুলোকেই ভালোবাসার সিনেমা বা রোমান্টিক তকমা দেয়া হয়।

 

এ ধরনের সিনেমার অনেকগুলোই আবার সত্যিকারের ভালোবাসার কাহিনি অবলম্বনেই নির্মিত।সত্যিকারের প্রেম কাহিনি অবলম্বনে নির্মিত হলিউডের সিনেমা নিয়েই সাজানো হয়েছে এ প্রতিবেদন।

 

ক্লিওপেট্রা (১৯৬৩)

এলিজাবেথ টেইলরের জীবনের অন্যতম সেরা কাজ হয়ে আছে এই ৪ ঘণ্টার ধ্রুপদী সিনেমা।সিনেমাটি মিশরের কিংবদন্তি রাণী ক্লিওপেট্রার জীবন কাহিনি নিয়ে নির্মিত। তবে তাতে মিশরীয় রাণীর জীবনের রাজনৈতিক দিকগুলো যতটা এসেছে, তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে মার্ক অ্যান্টনির সঙ্গে তার প্রেমের আখ্যান। সিনেমাটিতে মার্ক অ্যান্টনির চরিত্রে অভিনয় করেন রিচার্ড বার্টন।

 

মাই লেফট ফুট (১৯৮৯)

সিনেমাটি মূলত বিখ্যাত আইরিশ লেখক-চিত্রশিল্পী ক্রিস্টি ব্রাউনের জীবনের উপর ভিত্তি করে বানানো।ক্রিস্টি ব্রাউন তার বাঁ পায়ের কেবল বুড়ো আঙুল নাড়াতে পারতেন। এই শারীরিক সীমাবদ্ধতা নিয়েও পরিবারে-সমাজে সংগ্রাম করে তিনি শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। তবে কাহিনিতে বেশি মনোযোগ পেয়েছে তার পরিচারিকা মেরিকারের সঙ্গে তার ভালোবাসার সম্পর্কটাই। অবশ্য সত্যিকারের কাহিনিটা সিনেমার মতো অতটাও মনোহর ছিল না।

 

টোটাল এক্লিপস (১৯৯৫)

আধুনিক যুগের অন্যতম প্রভাবশালী কবি হিসেবে ধরা হয় আর্তুর র‌্যাঁবোকে। বিশেষ করে তিনি সুররিয়ালিজমের অন্যতম প্রবক্তা হিসেবে বর্ণিত হন। র‌্যাঁবোর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন আরেক ফরাসি কবি পল ভার্লেইন। পূর্বসূরীদের মধ্যে ভার্লেইে-ই তাকে প্রথম কবি হিসেবে স্বীকৃতি দেন। পরে তাদের সম্পর্ক বেশ গভীর হয়ে পড়ে। এমনকি তারা দুজনে প্যারিস থেকে লন্ডনে চলে যান এবং একসাথে থাকতেও শুরু করেন। ভার্লেইন তার স্ত্রী-সন্তানকেও ত্যাগ করেন। পরে অবশ্য তাদের মধ্যে সংঘাত বাঁধে, তাদের ছাড়াছাড়ি হয়। এমনকি একদিন মাতাল অবস্থায় ভার্লেইন গুলিও করেন র‌্যাঁবোকে। পরে মামলা হলে কোর্ট-কাচারিতে তাদের সম্পর্কের ধরণ নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। তাদের এই অস্বাভাবিক সম্পর্ক নিয়েই আগ্নিয়েস্কা হল্যান্ড বানান টোটাল এক্লিপস।

 

এ বিউটিফুল মাইন্ড (২০০১)

সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত বিখ্যাত গণিতবিদ জন ন্যাশের অবিশ্বাস্য জীবনযুদ্ধ নিয়ে বানানো মাস্টার পিস এই সিনেমাটি। তাতে সিজোফ্রেনিয়াকে জয় করে নোবেল জয়ী এই গণিতবিদের চরিত্রে অভিনয় করেন রাসেল ক্রো। বিপরীতে জন ন্যাশের স্ত্রী অ্যালিসিয়ার চরিত্রে অভিনয় করেন জেনিফার কনেলি। সিনেমাটিতে জন ন্যাশের সিজোফ্রেনিয়া জয় করার গল্প যেমন গুরুত্ব পেয়েছে, পাশাপাশি উঠে এসেছে জন ন্যাশ-অ্যালিসিয়া জুটির গল্পও। তাদের প্রেম বিয়েতে পরিণতি পাওয়ার ৬ বছরের মাথায় সিজোফ্রেনিয়াক জন ন্যাশের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় অ্যালিসিয়ার। কিন্তু এরপরও তারা কেউ কাউকে ছেড়ে যাননি। পরে তারা আবার বিয়েও করেন। পরে ২০১৫ সালে তারা দুর্ঘটনায় একসঙ্গে্ই মারা যান।

 

ফ্রিদা (২০০২)

শিল্পী ফ্রিদা কাহলোর জীবন নিয়ে বানানো হয় এই জীবনীমূলক সিনেমাটি। এর একটা বড় অংশই হচ্ছে শিল্পীর প্রেম জীবনের অনুসন্ধান। তাতে এসেছে ডিয়েগোরিভেরার সঙ্গে তার ঝটিকা প্রেম-বিয়ে। এসেছে তার অসংখ্য নারী-পুরুষের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর বিষয়ও। এসেছে তার শিল্প কর্মে তাদের স্থান করে নেয়ার প্রসঙ্গও।

 

রে (২০০৪)

সিনেমাটিতে রেচার্লসের চরিত্রে অভিনয় করে জেমি ফক্স অস্কার জিতে নেন। সিনেমাটিতে এই কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পীর জীবনের মাদক ও নারী বিষয়ক অধ্যায়ের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে উঠে এসেছে তার প্রেম জীবনের দ্বৈততা—তিনি যেমন তার স্ত্রীর প্রতি বিশেষভাবেই অনুরক্ত ছিলেন, একই সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে ছিলেন এক ব্লুস শিল্পী ও এক ব্যাক আপ সিঙ্গারের সঙ্গেও।

 

দ্য নোট বুক (২০০৪)

সাম্প্রতিক সময়ের তো বটেই, সর্বকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রেমের সিনেমার সংক্ষিপ্ত তালিকা করলেও তাতে জায়গা করে নেয় দ্য নোট বুক। এই সিনেমাটাও একটা সত্যি কাহিনি থেকেই বানানো। সিনেমাটি বানানো হয় একই নামের উপন্যাস থেকে। সেই উপন্যাসের লেখক নিকোলাস স্পার্কস নিজেই তার ওয়েব সাইটে জানান, গল্পটা তিনি লিখেছেন এক সত্যিকারের প্রেম কাহিনি থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে। কাহিনিটা তার মাথায় আসে তার স্ত্রীর দাদা-দাদির প্রেম কাহিনি থেকে।

 

ওয়াক দ্য লাইন (২০০৫)

সিনেমাটিতে অভিনয়ের জন্য রিজ উইদারস্পুন অস্কার জেতেন। সিনেমাটির কাহিনি নেয়া হয়েছে গত শতকের মাঝামাঝি সময়ের একটি প্রেম কাহিনি থেকে। জুন কার্‌টার ও জনি ক্যাশের প্রেম কাহিনি। জুন-জনির প্রথম পরিচয় হয় ১৯৫৫ সালে। ততদিনে জনির প্রথম বিয়ে সাড়া। পরে জনির প্রথম স্ত্রী ভিভিয়েনের সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হওয়ার বছর দুয়েক পরে তারা বিয়ে করেন। জুন ২০০৩ সালে মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত তারা একসাথেই ছিলেন। জুন মারা যাওয়ার মাস চারেকের মধ্যে জনিও মারা যান।

 

এ রয়েল অ্যাফেয়ার (২০১২)

ডেনিশ এই সিনেমাটি অ্যালিসিয়া ভিকান্দারের ক্যারিয়ারের শুরুর দিকের অন্যতম সিনেমা। কস্টিউম ড্রামা ঘরানার সিনেমাটি মূলত ডেনমার্কের রাণী নিক্যারোলিনা মাথিল্ডার গল্প। কাহিনির কেন্দ্রে রাণীর সঙ্গে জার্মান চিকিৎসক ইয়োহান স্ট্রুয়েন্সের প্রেম। রাজা আবার মানসিক রোগী। কাজেই রাজ্যের কলকাঠি নাড়েন রাণীই।সঙ্গে তার নতুন উপদেষ্টা। তাতে বেশ সফলও ছিলেন তিনি। রাজ্যে নতুন আলোরও সঞ্চার করছিলেন। শেষমেশ তার ওই প্রেমকেই অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে তার বিরোধীরা।

 

রিচ ফর দ্য মুন (২০১৩)

ব্রাজিলিয়ান এই সিনেমাটির কাহিনি নেয়া হয়েছে ৫০-৬০-র দশকের একটা প্রেম কাহিনি থেকে। সে সময় মার্কিন কবি এলিজাবেথ বিশপের সঙ্গে প্রেম হয় ব্রাজিলিয়ানস্থ পতিমা সেদোসোরেসের। তখন আবার ব্রাজিলে চলছিল রাজনৈতিক অস্থিরতা। সেই অস্থির সময়ের প্রেক্ষাপটে তাদের সেই প্রেমের গল্পই উঠে এসেছে সিনেমাটিতে।

     

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/নাবীল/শান্ত