বিনোদন

‘বিদেশি সিরিয়াল বন্ধের দাবি অপ্রয়োজনীয়’

বিনোদন ডেস্ক : ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনাল অর্গানাইজেশন (এফটিপিও)।  দেশের টেলিভিশন মিডিয়ার শিল্পী ও কলাকুশলীদের সম্মিলিত একটি প্লাটফর্ম। ‘শিল্পে বাঁচি, শিল্প বাঁচাই’- এই স্লোগান নিয়ে পাঁচ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে মাঠে নেমেছে এই সংগঠনটি।

 

আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে দাবি না মানলে টেলিভিশন শিল্পী ও কলাকুশলীরা সারাদেশে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনাল অর্গানাইজেশনের (এফটিপিও) আহ্বায়ক মামুনুর রশীদ। ইতোমধ্যে তাদের বেশ কিছু দাবি পূরণ করেছে সরকার। সম্প্রতি আরো কিছু দাবি উপস্থাপন করেছে এই সংগঠনটি।

 

বেশ কিছু দাবি পূরণ করায় সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। সঙ্গে এই আন্দোলনের নানা বিষয়ে আলোচনা করে তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি। রাইজিংবিডির পাঠকদের জন্য স্ট্যাটাসটি হুবুহু তুলে ধরা হলো।

 

‘আমরা সবসময় সরকার ভুল করলে সমালোচনা করি। কিন্তু ঠিক করলে চুপ থাকি, প্রশংসা করি না। আমি জানি আপনারা বলবেন ‘সরকারকে ঠিক কাজ করার জন্যই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তার জন্য আলাদা করে প্রশংসা করতে হবে কেন।’ কিন্তু আমি ভালো কাজের জন্য গলা ছেড়ে প্রশংসার পক্ষে।

 

বিদেশী চ্যানেলে প্রতারণার মাধ্যমে বিজ্ঞাপন ব্যবসার যে দোকান খোলা হয়েছিল সেটা যে রকম দ্রুততা এবং সততার সাথে সরকার বন্ধ করেছে তা অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমরা সরকারের কাছে দেশের স্বার্থে সবসময় এইরকম দায়িত্বপূর্ন আচরণ দেখতেই চাই।

 

সরকার আরো ঘোষণা দিয়েছে, ভারতীয় চ্যানেলের ডাউনলিংক ফিতে ভারসাম্য আনবে অতি দ্রুত । পাশাপাশি দর্শক সংখ্যা নিরুপণের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ব্যাপারেও সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে। শোনা যাচ্ছে, দ্রুতই সব চ্যানেলকে কন্ডিশনাল একসেস সিস্টেম বা সেট টপ বক্সের আওতায় নিয়ে আসা হবে। আশা করা যায়, এতে করে এই সেক্টরের বহু অনিয়ম আর দূর্নীতি দুর হবে, লড়াই হবে ভালো কনটেন্টের, এবং ভালো কনটেন্টের দামও বাড়বে । এবং আমি বিশ্বাস করি এই লড়াইয়ে জেতার মতো তরুণ প্রতিভা আমাদের আছে এবং সামনে আরো প্রতিভার উদয় ঘটবে। সরকারকে দিলখোলা অভিনন্দন ।

 

এবার এফটিপিও নিয়ে দুয়েকটা কথা বলতে চাই। আমাদের কোনো ট্রেড বডি নাই এটা সত্য । এটা না থাকার খারাপ দিক যেমন আছে, ভালো দিকও আছে। খারাপ দিক হলো, ইন্ডাষ্ট্রি বিপদে পড়লে কোনো সাংগঠনিক জায়গা থেকে প্রতিবাদ করা যায় না। আর ভালো দিক হলো, কোনো ধরনের দাদাগিরির বাইরে নতুন প্রতিভা বিকাশে লাভ করতে পারে।

 

যদিও অনেকে বলাবলি করছেন, যারা টেলিভিশন ইন্ডাষ্ট্রিতে বাণিজ্যিকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে নাই তারা এখন তাদের ব্যক্তিগত ঝাল এবং হতাশা মেটানোর চেষ্টা করছেন। এই কথা কিছু কিছু ক্ষেত্রে সত্য বলে মনে হলেও আমি মনে করি এফটিপিও একটা কার্যকর বডি হওয়ার চেষ্টা করে দেখতে পারে। তবে সেইজন্য তাদেরকে দুরদর্শী, উদার, এবং বাস্তব বোধ সম্পন্ন হতে হবে।

 

দুয়েকটা উদাহরণ দিই, বিদেশি সিরিয়াল বন্ধের দাবিটা একটা অপ্রয়োজনীয় দাবি। বলা যেত, বিদেশী সিরিয়ালের চাংক এক ঘণ্টা বেশি রাখা যাবে না।  তারপর বলা হচ্ছিল, নাটকের বাজেট দ্বিগুণ করতে হবে। মানে কি? যে প্রোডাকশন চলবে না সেটারও টাকা দ্বিগুণ দিতে হবে? বাজেট নির্ধারণ করবে বাজার।  কোনো সংঘশক্তি না।

 

আবার কোনো চ্যানেল তার ব্র্যান্ড ইমেজের জন্য খুব একটা ভালো মানের প্রোডাকশন বানাতে পারে অনেক টাকা দিয়ে, যা হয়তো জনপ্রিয় হবে না। সেটাও চ্যানেলের এখতিয়ার, এফটিপিওর না।

 

আজকে দেখলাম বলা হচ্ছে, যোগ্য ব্যক্তিদের দিয়ে প্রিভিউ কমিটি গঠন করা হোক। টেলিভিশনগুলোর প্রিভিউ কমিটির বেহাল দশা নিয়ে আমার সমালোচনা থাকলেও এটাও আমি মনে করি অর্ধ সেদ্ধ দাবি। কেমন যোগ্য ব্যক্তি? যোগ্য ব্যক্তির সংজ্ঞা কি? এফটিপিওর অনেকেই যাদের যোগ্য ব্যক্তি মনে করে, এদেশের অনেক দর্শক তাদের কাজকে যোগ্য মনে করে না। তো করণীয় কি? করণীয় সিম্পল। অডিয়েন্স কাউন্ট জেনুইন হয়ে গেলে অডিয়েন্সই জানাবে তার মতামত । তখন আর আজেবাজে কাজ দিয়ে পার পাওয়া যাবে না। আর জনপ্রিয় নয় অথচ আর্টিস্টিক্যালি রিচ কাজগুলার ক্ষেত্রে কি হবে? ওটা টিভি চ্যানেল তার ব্র্যান্ড ইমেজে বাড়ানোর জন্যই করবে। সে বিচার করবে কাকে দিয়ে কাজ করালে তার ইমেজ বাড়বে। সেখানেও সংঘশক্তির কিছুই করার নাই।

 

পরিশেষে, এক ভয়াবহ দাবি তারা করে বসেছে। টেলিভিশনের জন্য প্রোডাকশন বানাতে হলে এফটিপিওর সদস্য হতে হবে বা অনুমোদন নিতে হবে- এই রকম কিছু একটা।

 

না জনাব, এইরকম নিয়মের আওতায় পান্ডাগিরি করার ক্ষমতা কাউকেই দেয়ার কোনোই কারণ নাই। কারণ এফটিপিওর নেতৃস্থানীয় অনেকেই অতীতে প্রমাণ করেছেন নানারকম রুচির কাজকে এপ্রেশিয়েট করার ক্ষমতা তাদের নাই। কেউ উচ্চ আসনে বসে বসে তাদের রুচি দিয়ে তরুণ অনাগত নির্মাতাদের আর্টিস্টিক এক্সপ্রেশন নিয়ন্ত্রণ করবেন, এই দিন আর নাই। আপনাদের মধ্যে অনেকে এই নির্ধারণী ক্ষমতায় থাকলে, আজকের বাংলাদেশের বহু তরুণ নির্মাতা ছবি বানানো দুরের কথা, ইন্ডাস্ট্রিতেই ঢুকতে পারত না। আজকে বাংলাদেশের নাম যে বারবার ভ্যারাইটি, হলিউড রিপোর্টার, স্ক্রিন ডেইলিতে আসছে তার আশি ভাগই বন্ধ হয়ে যেত। ইটিভি বাংলাদেশে বড় বিপ্লব করেছিল এই মোগল কালচার ভেঙে দিয়ে অজস্র তরুণ প্রতিভাকে খুঁজে বের করার মধ্য দিয়ে। এই মোগলামির প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার চেষ্টা আজকে এত পরে এসে করা যাবে না।  বরং এটা ভাবতে পারেন, যে বা যারাই টিভির জন্য কাজ করবে, তাদের একটা কাজ প্রচারিত হলেই তাদেরকে ট্রেড বডির সদস্য করে এই বডিকে শক্তিশালি করবেন।

 

সকলের মঙ্গল হোক।’

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ ডিসেম্বর ২০১৬/শান্ত