বিনোদন

‘অনুভব করার চেষ্টা করি বাবার হৃদস্পন্দন’

শমী কায়সার : ২০০৬ সাল থেকে আমি বাবার ওপর একটি তথ্যচিত্র নির্মাণের কাজ করছি। এই কাজ করতে গিয়ে বাবাকে আরও নতুনভাবে চিনেছি, জেনেছি। এ তথ্যচিত্র নির্মাণ করতে গিয়েই আমি বুঝতে পেরেছি, আমার বাবা শহীদুল্লা কায়সার কত বড় মাপের মানুষ ছিলেন! আমার এই জানাটুকু আমি এখন তরুণ প্রজন্মের হাতে তুলে দিতে চাই। এছাড়া বেশ কিছু অসমাপ্ত উপন্যাস রয়েছে। এ উপন্যাসগুলো পরবর্তীতে প্রকাশের ইচ্ছে রয়েছে।

 

আসলে বাবার বিশেষ স্মৃতি আমার নেই। কেননা আমি তখন ছোট, কোনো কিছু বুঝে ওঠার বয়স তখনও হয়নি। যে কারণে অনেক কিছু আমার মনেও নেই। বলছি, আজ থেকে ৪৫ বছর আগের কথা। আর ঠিক সে সময়টিতেই আমি বাবাকে (শহীদুল্লা কায়সার) হারিয়েছি। খুব আক্ষেপ লাগে, আফসোস হয়-তখন যদি একটু বড় থাকতাম, তাহলে বাবাকে নিয়ে এখন অনেক স্মৃতি শেয়ার করা যেত। কিন্তু তা আর হবার নয়। মায়ের কাছে বাবার কিছু কথা শুনেছি, এতটুকুই।     

 

বাবার ব্যবহৃত কোনো কিছু দেখলে আজও বাবাকে ভীষণভাবে মিস করি। বাবার কথা মনে পড়লেই বাবার ব্যবহৃত জিনিসগুলো উল্টেপাল্টে দেখি। সেখান থেকে অনুভব করার চেষ্টা করি বাবার হৃদস্পন্দন। বাবার কয়েকটি অপ্রকাশিত ডায়েরি আছে আমার কাছে। বাবার কথা মনে পড়লে সেগুলোর পাতায় চোখ বুলাই; ঝাপসা হয়ে আসে দৃষ্টি, তারপরও অক্ষরগুলো পড়ার চেষ্টা করি। পড়ে বুঝতে চেষ্টা করি আমার বাবার ভাবনা, প্রতিদিনের দিনলিপি, জীবন দর্শন।

 

বাবার ব্যবহৃত কিছু হাত দিয়ে স্পর্শ করলে মনে হয়, বাবাকেই আমি স্পর্শ করছি। তখই দেশ, দেশপ্রেম, ভালোবাসা, স্নেহ, ত্যাগ-তিতিক্ষা, জীবনের চড়াই-উতরাইয়ের কথাগুলো মাথায় আসে। বাবা ছাড়া এই ৪৫টি বছরে আমার জীবনের বেড়ে ওঠার প্রতিটি প্রেক্ষাপট আমাকে ক্ষত-বিক্ষত করে। কিন্তু সেখানে দাঁড়িয়ে আমি আমার বাবার জীবন থেকে প্রেরণা নেই। 

 

৪০ বছর পর দেশে যুদ্ধাপরাধীর বিচার কাজ শুরু হয়েছে। বিচার শেষে কয়েকজনের সাজা কার্যকর হয়েছে। কিন্তু তারপরও এখনও অনেক কাজ বাকি আছে। সুতরাং অপেক্ষা করতে হবে। অন্য বদ্ধভূমি চিহ্নিত করতে হবে। শহীদদের সঠিক তালিকা তৈরির কাজগুলো দ্রুত শুরু করতে হবে।

 

অনুলিখন : রাহাত সাইফুল

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ ডিসেম্বর ২০১৬/রাহাত/তারা