বিনোদন

সিনেমা তিন রকম ব্যাড, গুড, হিট: রিজু

আমিনুল ইসলাম শান্ত: গত বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হয়েছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০১৫। এবার ‘বাপজানের বায়স্কোপ’ ও ‘অনিল বাগচীর একদিন’ যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে। সিনেমা দুটি নির্মাণ করেছেন যথাক্রমে রিয়াজুল রিজু ও মোরশেদুল ইসলাম। এ দুজন পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার। তবে ‘বাপজানের বায়স্কোপ’ সিনেমাটি মোট ৮টি বিভাগে পুরস্কার পেয়েছে। রাইজিংবিডির সঙ্গে পুরস্কারপ্রাপ্তি ও সিনেমা নির্মাণের নানা বিষয়ে কথা বলেছেন তরুণ নির্মাতা রিয়াজুল রিজু। এ আলাপচারিতার চুম্বক অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।     রাইজিংবিডি: প্রথম চলচ্চিত্রেই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এ বিষয়ে আপনার অনুভূতি জানতে চাই।

রিজু: সিনেমার পুরো কাজটি টিমওয়ার্ক। এজন্য প্রথমে টিমের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আর কাজের প্রতি ভালোবাসা মূল বিষয়। তবে এই প্রাপ্তি মানে প্রকৃতি তার ফিডব্যাক দিয়েছে। কারণ এই চলচ্চিত্রের জন্য আমি চাকরি ছেড়েছি। আমার বউ-বাচ্চাকে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি। এসব মিলিয়ে খুবই মানসিক একটা চাপে ছিলাম। এই পুরস্কার পাওয়ার পর মানসিক প্রশান্তি পেয়েছি। রাইজিংবিডি: জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাবেন-এমন প্রত্যাশা কী আগে থেকেই ছিল?

রিজু: যখন সিনেমার শুটিং শুরু করি তখন থেকেই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু এতগুলো বিভাগে পাব এটা কল্পনা করিনি। আসলে এমন ঘটনায় অনেকটা স্তম্ভিত হয়ে গেছি!

 

রাইজিংবিডি: সিনেমাটির নির্মাণের শুরু থেকে মুক্তির পর পর্যন্ত নানারকম সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। তারপর এই প্রাপ্তি। মাঝে যে সংগ্রাম করেছেন তা থেকে কতটা নির্যাস আপনার অভিজ্ঞতার থলিতে জমা হয়েছে?

রিজু: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যদি ৭ মার্চের ভাষণ না দিতেন তাহলে আজও বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। এখনো পরাধীন থেকে যেতাম। আসলে কাউকে না কাউকে শুরু করতে হয়, আওয়াজ তুলতে হয়, বলতে হয়। এই বলাটা ব্যক্তি বলেন না, সময় বা প্রকৃতি বলায়! আসলে প্রকৃতি উপলক্ষ্য তৈরি করে দেয়। প্রকৃতিই ইকো ব্যালেন্স করে বলে আমার মনে হয়। মানুষ মন থেকে কিছু চাইলে পরিশ্রম করলে অবশ্যই কিছু পাওয়া যায়। প্রকৃতি কাউকে ঠকায় না বরং সব হিসাব মিলিয়ে দেয়।

   

রাইজিংবিডি: বর্তমান সময়ে ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণে প্রধান অন্তরায় কী বলে মনে করেন?  

রিজু: প্রথমত দোকান থাকতে হবে। দোকান না থাকলে ক্রেতা আসবে কোথায়? এজন্য আমাদের সিনেপ্লেক্স নির্মাণ করতে হবে। সার্ভার সিস্টেম না হলে কাজের জায়গাটা স্থিতিশীল হবে না। এটা আমাদের জাতীয় সমস্যা। এসব সমস্যা কারো একার পক্ষে সমাধান করা সম্ভব না। সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা না পেলে এর সমাধান সম্ভব না।

 

রাইজিংবিডি: ভালো পণ্য তৈরি হলে তবেই তো ক্রেতা দোকানে যাবে। এই ভালো পণ্য অর্থাৎ ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে কি ভালো গল্প, চিত্রনাট্যের অভাব রয়েছে?

রিজু: ভালো গল্প, ভালো চিত্রনাট্যের জন্য ভালো সিনেমা নির্মিত হচ্ছে না আমার কাছে তা মনে হয় না। কারণ আমাদের দেশে অনেক মেধাবী ছেলেমেয়ে রয়েছে। আমরা অনেক মেধাবী। আমাদের দেশে যদি মেল গিবসনকে সিনেমা বানানোর জন্য ছেড়ে দেওয়া হয় তবে তিনি কান্নাকাটি করবেন। আমাদের ঢাল নেই তলোয়ার নেই তবুও নিধিরাম সর্দার হয়ে বসে আছি। আমরা তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা। আসলে আমাদের মধ্যে সম্ভাবনা অনেক। এজন্য একটু যত্ন দরকার। সিস্টেম পরিবর্তন হওয়া দরকার। এছাড়া ভালো সিনেমা তৈরির জন্য মানসিক শক্তি আর ভালোবাসাটাই বেশি প্রয়োজন। এর চেয়ে বড় অস্ত্র আর কিছু নেই।

 

রাইজিংবিডি: চলচ্চিত্র নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাই।           

রিজু: ‘বাপজানের বায়স্কোপ’ সিনেমাটি আমার কাছে মনে হয়েছে- এটি একটি গুড ফিল্ম। এখন একটি হিট ফিল্ম বানাতে চাই। প্রকৃতি যদি চায়, দর্শকদের ভালোবাসা যদি থাকে তবে নির্মাণ করতে পারব। তবে পরবর্তী সিনেমা নিয়ে এখুনি বিশেষ কোনো তথ্য জানাব না।  

 

রাইজিংবিডি: ‘হিট ফিল্ম’ বলতে কি বাণিজ্যিক ঘরানার সিনেমা বোঝাচ্ছেন?

রিজু: সব সিনেমাই তো বাণিজ্যিক। কারণ এটা নির্মাণ করতে গেলে টাকা খরচ হয়। আমি আসলে এসব বুঝি না। আমি সিনেমা বলতে ৩ ধরনের চলচ্চিত্র বুঝি। এক. ব্যাড ফিল্ম। দুই. গুড ফিল্ম। তিন. হিট ফিল্ম। একটা গুড ফিল্ম হিট নাও হতে পারে। হিট ফিল্ম গুড ফিল্ম নাও হতে পারে। আবার একটা ফিল্ম হিটও না, গুডও না তার মানে এটা ব্যাড ফিল্ম। তবে কখন কোন সিনেমা গুড, ব্যাড হয় এটা আসলে বিচার করবে দর্শক।

     

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ মে ২০১৭/শান্ত/মারুফ