বিনোদন

জানালা দিয়ে কোলাকুলির দৃশ্য দেখতাম: সূচনা আজাদ

কার পোশাক বেশি সুন্দর, কে কতো সেলামি পেল, কার কতগুলো জামা হলো, কে কতো ভালো সাজলো- এগুলোই ছিল আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। এসব খুঁজে খুঁজে বের করাই ছিল ঈদের অন্যতম কাজ। আমাদের বাসার ঠিক সামনেই ঈদগাহ্। আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লাগে সেই দৃশ্য- নামাজ শেষে যখন সবাই কোলাকুলি করে। আমি জানালার কাছে দাঁড়িয়ে থাকতাম ওই দৃশ্য দেখার জন্য। মনে হতো ‘এরচেয়ে আর ভালো কিছু হতে পারে না’। আমি ছোটবেলা থেকেই খুব সাজগোজ করতাম আর ঈদের সময় তো কথাই নেই। রোজা শুরু হলেই বায়না শুরু হয়ে যেত। আম্মুকে বলতে শুরু করতাম ‘কবে আমরা শপিংয়ে যাবো?’ তারপর কেনাকাটা হয়ে গেলেই জামাকাপড় লুকিয়ে রাখতাম। ঈদের দিন সকালে গোসল করে খুব সাজতাম। আম্মু সাজিয়ে দিতেন। আর ঈদের দিন তো খাবারের বিশাল আয়োজন থাকতোই। আমি প্রচুর খেতাম। এই ফাঁকে বলে রাখি, এখনো অভ্যাসটা ছাড়তে পারিনি। আমাদের বাড়ি দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জ। ঈদে আমাদের বাড়িতে স্পেশাল সেমাই রান্না করা হয়। আমার মা-দাদীর স্পেশাল একটা রেসিপি হলো সেমাই। এই যেমন, দশ কেজি দুধ জ্বাল দিয়ে দিয়ে তারা তিন কেজি বানাবে। তারপর সেই দুখ যখন দধির মতো হয়ে যাবে, তখন সেই দুধ দিয়ে সেমাই রান্না করা হতো।  আমার কখনো মনে হয়নি এই উৎসবটা শুধু মুসলিমদের। কারণ আমাদের অনেক প্রতিবেশী হিন্দু। ঈদে তারা সবাই আমাদের বাড়ি আসতো। এবং পূজায় একইভাবে আমরা তাদের বাড়ি যেতাম। এখনও তাই হয়। এবারও বাড়িতে ঈদ উদযাপন করবো। যদিও পরিবারের অনেকেই ইউরোপে থাকে। তারা দেশে আসছে। অনেকদিন পর আমরা এই উৎসবে একত্রিত হবো। প্রতিবেশী সবার সাথে দেখা হবে। আমার কাছে মনে হয়, ঈদ কেবল একটি দিনের জন্যই আসে না, কয়েকটি উপলক্ষ্য ছড়িয়ে দিয়ে যায় শেকড়ে ফেরার। মানুষ তার প্রয়োজনে দূরে যাবে আবার কাছেও আসবে- সেই উপলক্ষ্য হলো ঈদ। অনুলিখন : স্বরলিপি

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ জুন ২০১৭/তারা