বিনোদন

আমার একটা স্পেশাল রেসিপি আছে-দইবড়া

সন্তান যত বড়ই হোক, মায়ের কাছে সে সব সময় সেই ছোট্ট আদরের রয়ে যায়। ফারহানা মিলি আজ নামি অভিনেত্রী। কিন্তু মায়ের কাছে সে আজও তার আদরের মেয়ে। রাইজিংবিডির ঈদ আয়োজনে মা রানা আঞ্জুমানের কাছে আমরা জানতে চেয়েছিলাম মেয়ে মিলির পছন্দ-অপছন্দ এবং ছোটবেলার ঈদ নিয়ে। পাঠক, মায়ের মুখ থেকেই শুনুন মেয়ের ছোটবেলার ঈদ-আনন্দের কথা। ঈদ হোক অথবা অন্য কোনো দিন- এটা খাব, ওটা খাব এরকম কোনো ব্যাপার মিলির মধ্যে নেই।  মাছ, মাংস, সেমাই সবই কম-বেশি খায়। তবে আমার একটা স্পেশাল রেসিপি আছে-দইবড়া। এটা খেতে ও খুব পছন্দ করে! গরুর মাংসের কিমা দিয়ে এক ধরনের টিকিয়া বানিয়ে তারপর দই দিয়ে তৈরি করা হয় এই রেসিপি। ওরা যখন ছোট তখন থেকেই এই রেসিপিটা বানানো হতো; বিশেষ করে ঈদে। আমার দুই ছেলে মেয়ে। মিলি বড় আমার ছেলে আশফাক উজ্ জামান বিপুল ওর তেরো মাসের ছোট। ও এখন টিভিসি নির্মাণ করে। দুই ভাইবোন একইসাথে বেড়ে উঠেছে। স্বভাব্ও কাছাকাছি। আমাদের বাসা পুরান ঢাকার নবাবপুরে। তো আমাদের ভূতের গলির চার রাস্তার মোড়ে ঈদের দিন মেলা বসত। মিলি যখন ছোট আমার আব্বা ওকে সাথে নিয়ে মেলায় যেত। আর মাটির অনেক হাড়ি পাতিল কিনে দিত। ও এতেই খুব খুশি হত। খুব বেশি খেলনা নষ্ট করত না। আমি সেগুলো সংগ্রহ করতাম। যেহেতু প্রতি বছর কেনা হতো অনেক জমেছিল। মিলির বিয়ের পর ওগুলো আমার আত্মীয়ের ছেলেমেয়েরা নিয়ে গেছে। আমার এখনো মনে হয় সেগুলো যদি ঘরেই থাকত! এটা এক ধরনের মায়া। কত স্মৃতি তাতে জড়ানো ছিল।  

মিলি আমার বড় আদরের মেয়ে। ও কখনো কোনো বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি করেনি। ছোট সময় থেকে্ই শান্ত স্বভাবের। অনেক গোছানো। বিয়ের পর ও যখন শ্বশুরবাড়ি গেল আমি একা হয়ে পড়লাম। ফলে ঈদে আর ‘দইবড়া’ বানানো হয়নি। আসলে আমি চাইছিলাম মিলি আসুক তারপর বানাব একসঙ্গে; দুই ভাইবোন খাবে। আমার ছেলেটা আমাকে বলল, আমার একার জন্য ‘দইবড়া’ বানানো যাবে না! আমি আর ‘দইবড়া’ খাব না। ও যে রাগ করে বলেছিল তা নয়, আবদার থেকেই বলেছিল। কিন্তু মেয়েটাকে ছাড়া প্রথম ঈদ সব কিছুতে স্বাভাবিক হতে পারছিলাম না। ঈদে ওকে নতুন জামাকাপড় পরিয়ে দিলে খুব খুশি হতো। আমি আর ওর আব্বু পছন্দ করে পোশাক কিনে দিতাম। ও যখন একটু একটু করে বড় হলো তখনো পরিবর্তন হলো না। সব কিছু স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করার ক্ষমতা আছে ওর। খুব ঠান্ডা মাথায় সব ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে পারে মিলি। এভাবেই ছোট মিলি বড় হলো। মানুষের কাছে ও এখন অভিনেত্রী। আমার কাছে ও আমার মেয়ে। আর এটা এখন আমার পরিচয় আমি মিলি-বিপুলের মা। আমি মনে করি এটা আমার সৌভাগ্য। সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া জানাই। সময় তো পরিবর্তন হয়। মানুষের দায়িত্বেও পরিবর্তন আসে। এখন যখন মা দিবস বা ঈদ আসে মিলি আমার জন্য নিজেই কেনাকাটা করে। নিজের জন্য কখনো উচ্চ চাহিদা পোষণ করে না। ও ভালো থাকতে চায় ভালো রাখতে চায়।

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭/শান্ত/তারা