বিনোদন

পূজার উজ্জ্বল স্মৃতি কলুষিত হয়েছে: জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়

আমার সর্বজনীন পূজা উদযাপনের স্মৃতি উজ্জ্বল, খুবই উজ্জ্বল। কিন্তু সেই স্মৃতি কলুষিত হয়েছে। রাগ, ঘৃণা আর দুঃখ জমা হয়েছে। চারপাশে যা দেখছি এই সংস্কৃতি কি আমাদের? না। একেবারেই নয়। আমার গ্রামের বাড়ি যশোরের ঈশ্বরীপুর। যেখানে গ্রামে হিন্দু-মুসলিম প্রায় সমানুপাতে বসবাস করে। আমাদের অতীতের গল্প এমন যে, ঈদও হিন্দু-মুসলিমের; পূজাও হিন্দু-মুসলিমদের ছিল। আমি গল্পটা এখান থেকেই শুরু করতে চাই, ঈদুল আজহাতে খিচুরী, খাসির মাংস রান্না হতো। আমরা যারা নন মুসলিম ছিলাম তারা অবাধে মুসলিম বাড়িতে যেতাম এবং ঈদ উদযাপন করতাম। আর কোরবানির খাসি বা ছাগলটি ছিল বাড়ির। এমন কোনো বাড়ি ছিল না, যে বাড়িতে দুইটি ছাগল বা খাসি থাকত না। এখন যেমন হাঁট থেকে গরু-ছাগল কেনা হয় ঠিক এরকম ছিল না তখন। ওই সময়ের পরিবেশ বোঝানোর জন্য আমাকে আর একটা গল্প বলতে হবে। আমাদের গ্রামে একটা পূজা হয় খুব ঘটা করে, তিন দিনের মেলা বসে। এসব ঘটে কালী পূজায়। এখনো প্রতিবছর কালী পূজায় গ্রামের বাড়ি যাই। এই পূজার ব্যবস্থাপনায় থাকে মুসলিম পরিবারের ছেলেরা। বংশ পরম্পরায় এটা চলে আসছে। এখনো তাই হয়ে আসছে। পূজার যে রিচুয়াল সেটা শুধু দুইজন পুরোহিত করেন। পূজায় অনেক মুসলিম পরিবার থেকে মানতের পাঠা আসতো। হ্যাঁ, এই চিত্র খুব বেশি দিন আগের না। নন মুসলিমদের মধ্যে যারা একটু নিন্ম পরিবারের তারা মহিষ বলি দিতো। এই মহিষের মাংস হিন্দু-মুসলিম ভাগ করে খেয়েছি আমরা। এখন যা ঘটছে তাতে আমি হাতাশ। দেখুন, শোলাকিয়া ঈদের জামায়াতে হামলার চেষ্টা হলো, প্রতিমা ভাঙচুরের খবরও পাই। এ নিয়ে আসলে বলার কিছু নেই, কিচ্ছু নেই। মাঝখানে দুইটি প্রজন্ম চলে গেছে ভুল শিক্ষায়, ভুল ইতিহাসে আর ভুল ধারণায়। তাদের বিশ্বাস তৈরি হয়েছে অন্য কথায় অন্য স্বরলিপিতে। তাদের স্বরলিপি ভুল স্বরলিপি। তারা জীবনের গান রচিত করেছে ভ্রান্ত স্বরলিপিতে। প্রজন্মকে সম্প্রীতিতে ফিরতে হলে প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা। সংস্কৃতি চর্চা আর সুশিক্ষা প্রজন্মকে দিতে হবে। আর আমাদের রাজনৈতিক ভবিষৎ বলে দেবে সেই সম্প্রতি সমাজে থাকবে কিনা! আমি জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় এই সময়ে দাঁড়িয়ে কোনো আশার আলো দেখছি না। আমাদের স্বপ্নের জায়গাটাতে পৌঁছানো কঠিন। অনুলিখন : স্বরলিপি রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭/শান্ত