বিনোদন

অমিতাভের অজানা কিছু

আহমেদ শরীফ : ১১ অক্টোবর বলিউড শাহেনশা অমিতাভের বয়স ৭৫ পূর্ণ হতে চলেছে। এই বয়সেও এখনো বলিউডের অন্যতম ব্যস্ত অভিনেতা তিনি। তার ব্যক্তিত্বের আলো বিকশিত হচ্ছে সর্বত্র। তবে এবার জন্মদিন পালন না করার কথাই জানিয়েছেন বলিউড সম্রাট। তাতে কি, তার ভক্তরা তো আর বসে থাকবে না। তারা সব ধরনের আয়োজনই করতে চলেছেন। ৭৫ এর এই মাইলফলক ছুঁতে চলা অমিতাভের অজানা কিছু তথ্য জেনে নিই চলুন- তার উচ্চতা ৬ ফুট ২ ইঞ্চি, বলিউডে এখনো এতো লম্বা অভিনেতা দেখা যায় না খুব একটা।  লেখাপড়া শেষ করে কলকাতায় একটি শিপিং ফার্মে এক্সিকিউটিভ হিসেবে যোগ দেন তিনি। তার প্রথম বেতন ছিল ৩০০ রূপি। তার দ্বিতীয় চাকরিও ছিল কলকাতার একটি ফার্মে। ছবিতে যোগ দেওয়ার আগে সেখানে তার শেষ বেতন ছিল ১ হাজার ৬৮০ রূপি। কণ্ঠ ভালো না হওয়ায় খবর পাঠক হিসেবে অল ইন্ডিয়া রেডিওতে পরীক্ষা দিয়ে বাদ পড়েন অমিতাভ। ক্যারিয়ারের শুরুতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে অমিতাভকে। মুম্বাইয়ে এসে থাকার ঘর ছিল না তার। সে সময় মেরিন ড্রাইভ এলাকায় রাত কাটিয়েছেন অনেক। তার দুরবস্থায় পাশে ছিলেন মিউজিক কম্পোজার কল্যাণজী আনন্দজি। কৌতুকশিল্পী ও অভিনেতা মেহমুদের বাসায় অনেক দিন থেকেছেন অমিতাভ। মেহমুদও তার দুঃসময়ে পাশে ছিলেন। ১৯৭৭ সালে সত্যজিৎ রায় তার ছবি ‘শতরঞ্জ কি খিলাড়ি’তে অমিতাভের কণ্ঠ ব্যবহার করেন। সুনীল দত্ত তার ছবি ‘রেশমা অর শেরা’ তে তাকে প্রথম কাস্ট করেন। সুনীলের স্ত্রী অভিনেত্রী নার্গিস ছিলেন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির বান্ধবী। আর অমিতাভ ছিলেন রাজীব গান্ধির বন্ধু। সেই সুবাদে অমিতাভকে ছবিতে নিতে নার্গিসকে চিঠি লেখেন ইন্দিরা। সেই ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৭১ সালে। তবে ছবিতে অমিতাভ অভিনয় করেন বোবার চরিত্রে। মানে, তাকে কোনো ডায়লগ বলতে হয়নি। ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেতে যখন পরিচালকদের কাছে ধর্না দিচ্ছিলেন তিনি, তখন তাকে ভারি কণ্ঠ কোমল করার পরামর্শ দিয়েছেন অনেকে। তবে তার সেই কণ্ঠই খুব বড় এক সম্পদে পরিণত হয় পরে।   ১৯৬৯ সালে ‘সাত হিন্দুস্তানি’ ছবি দিয়ে বলিউডে ক্যারিয়ার শুরু হয় অমিতাভের। ছবিটির জন্য পারিশ্রমিক পান এক হাজার রূপি। ওই ছবির জন্য সেরা নবাগত হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পান। ছবিটি তার একমাত্র সাদা কালো ছবি।   অমিতাভের প্রথম ১২টি ছবি ফ্লপ হয়। তার প্রথম হিট ছবি ১৯৭৩ এর ‘জানজির’। ওই ছবির মাধ্যমেই অ্যাংরি ইয়াং ম্যান খেতাব পান তিনি। পর্দায় অমিতাভ সবচেয়ে বেশি অভিনয় করেছেন ‘বিজয়’ নামে। ২০টি ছবিতে তাকে এ নামের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গেছে। অমিতাভই বলিউডের প্রথম অভিনেতা ছবি প্রতি যার পারিশ্রমিক এক কোটি রূপি ছাড়িয়েছিল। ১৯৯০ এর দশক পর্যন্ত একমাত্র অভিনেতা হিসেবে এই পারিশ্রমিক পেয়েছেন তিনি।   অমিতাভ ও জয়া বচ্চন একমাত্র দম্পতি, যারা একসঙ্গে ৩০টিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন। অনিল কাপুর অভিনীত আশির দশকের সুপারহিট  ছবি ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’তে অমিতাভকে ভেবেই স্ক্রিপ্ট লেখা হয়েছিল। ১৯৮৩’র ছবি ‘কুলি’তে একটি অ্যাকশন দৃশ্যে অভিনয় করতে গিয়ে, পেটে ভয়াবহ আঘাত পেয়ে প্রায় মরেই যাচ্ছিলেন অমিতাভ। সে সময় ভারতজুড়েই চলে তার জন্য প্রার্থনা। অমিতাভ-শ্রীদেবীর ছবি ‘খুদা গাওয়া’ (১৯৯৩) আফগানিস্তানে সবচেয়ে বেশি দেখা বলিউড ছবি। কারণ ছবিটির শুটিং হয়েছে ওই দেশে। সে সময় আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট নাজিবুল্লাহ আহমেদজাই অমিতাভের নিরাপত্তার জন্য দেশটির বিমানবাহিনীর অর্ধেক সদস্যকে নিয়োজিত করেন।

 

অমিতাভ একমাত্র অভিনেতা যিনি কিনা তার ছবির রিমেকেও অভিনয় করেছেন। ১৯৭৫’র ক্লাসিক ছবি ‘শোলে’র রিমেক হয় ২০০৭ এ। নাম দেওয়া হয় ‘রাম গোপাল ভার্মা কি আগ’। তাতে ভিলেনের চরিত্রে ছিলেন তিনি। ২০০৬ সালের ছবি ‘শুট আউট এট লোখান্ডওয়ালা’ তে একটানা ৫ ঘণ্টায় ২৩টি দৃশ্যতে অভিনয় করে স্পটের সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন অমিতাভ। এশিয়ার প্রথম অভিনেতা হিসেবে তার মোমের মূর্তি স্থান পায় লন্ডনের বিখ্যাত মাদাম তুসোর মিউজিয়ামে। সত্তরের দশক থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত বলিউডের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেতা ছিলেন তিনি। তার বাবা হরিবংশ রাই বচ্চন ভারতের বড় এক কবি ছিলেন। তিনি অমিতাভের নাম প্রথমে রেখেছিলেন ইনকিলাব। পরে তার নাম রাখেন অমিতাভ (অমিত আভা)।  বয়স যখন ৫৮, তখন অমিতাভ ২০০১ সালের আলোচিত ছবি ‘আক্স’ এর জন্য বিশেষ টেকনিক্যাল সহায়তায় অভিনেতা মনোজ বাজপেয়িসহ ৩০ ফুট উঁচু ঝর্ণা থেকে লাফিয়ে পড়েছিলেন। এ পর্যন্ত মোট ১০টি ছবিতে দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করেন অমিতাভ। একমাত্র ছবি ‘মহান ’(১৯৮৩) এ তাকে দেখা যায় তিনটি চরিত্রে। দিলীপ কুমারের পর অমিতাভ একমাত্র অভিনেতা, যিনি টানা ১৬ বছর ধরে বলিউডের শীর্ষ অভিনেতা হিসেবে সাফল্য পান। দিলীপ কুমার ১৯৪৮ থেকে ১৯৬৩ ও অমিতাভ ১৯৭৬ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত এই সাফল্য ধরে রাখেন। অমিতাভের প্রিয় অভিনেতা দিলীপ কুমার, প্রিয় অভিনেত্রী ওয়াহিদা রেহমান। অনেক ছবিতেই অমিতাভকে মাতাল চরিত্রে দেখা গেলেও তিনি বাস্তবে অ্যালকোহলের ধারে কাছেও যাননি। অ্যাজমা রোগে ভুগছেন অমিতাভ। এ ছাড়া মাংসপেশি দুর্বল হয়ে যাওয়ার বিরল রোগ মায়াসথেনিয়া গ্রেভিস রোগেও ভুগছেন তিনি। অমিতাভ ছবিতে বাম হাতেই পিস্তল চালান, অ্যাকশন করেন। তবে বাস্তবে তিনি দুহাতেই সমান দক্ষতায় লিখতে পারেন। নিজের প্রোডাকশন প্রতিষ্ঠান এবিসিএলের কারণে ঋণগ্রস্ত হয়ে যখন দেউলিয়া হতে চলেছিলেন, তখন টিভি শো ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পাতি’ দিয়ে আবারও সাফল্যের পথে  ফিরে আসেন তিনি। এখন এই শো-এর নবম সিজন চলছে। অমিতাভ একমাত্র অভিনেতা যিনি পেশাদার গায়ক না হয়েও এ পর্যন্ত তার অভিনীত অনেক ছবিতে প্রায় ৪০টির মতো গান গেয়েছেন। বিশ্বে তিনিই একমাত্র অভিনেতা যিনি কিনা পর্দায় তার নিজের ছেলের (অভিষেকের) সন্তানের ভূমিকায় অভিনয় করেন। ২০০৯ সালের ছবি ‘পা’তে ১২ বছর বয়সি প্রোজেরিয়া আক্রান্ত রোগীর চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। অমিতাভের দুটি বাড়ি ‘প্রতিক্ষা’ ও ‘জলসা’র মূল্য ২০০ কোটি রূপির বেশি। শোলের পরিচালক রমেশ সিপ্পি তাকে জলসা নামের বাড়িটি উপহার হিসেবে দিয়েছেন। ১১টি বিলাসবহুল গাড়ি আছে অমিতাভের। পরিচালক বিধু বিনোদ চোপড়া ‘একলব্য’ ছবিতে অভিনয়ের পারিশ্রমিক হিসেবে তাকে একটি রোলস রয়েস ফ্যান্টম উপহার দেন। অমিতাভের মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার।  স্যুট পরতে ভালোবাসেন অমিতাভ। তার প্রিয় ব্র্যান্ড গাবানা। এ প্রতিষ্ঠান ৩০ বছর ধরে তার স্যুট তৈরি করে আসছে। বিবিসির এক জরিপে গডফাদার খ্যাত অভিনেতা মার্লোন ব্রান্ডো, চার্লি চ্যাপলিনকেও পেছনে ফেলে ‘স্টার অব দ্য মিলেনিয়াম’ খেতাব পান অমিতাভ।

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ অক্টোবর ২০১৭/আহমেদ শরীফ/এসএন