বিনোদন

এ বছরটি সিনেমার জন্য ভয়াবহ খারাপ হবে : জায়েদ খান

জায়েদ খান : ২০১৭ সালের শেষটা খুব ভালো কেটেছে। সিনেমাকে ভালো না বেসে ব্যক্তি মানুষকে ভালোবাসার কারণে আমাদের চলচ্চিত্র আজ অনেক পিছিয়ে। শুধু নিজেকে নিয়ে চিন্তা করছি সার্বিক চিন্তা করি না। আমি এবার ‘অন্তর জ্বালা’ সিনেমা মুক্তি দিতে গিয়ে দেখেছি বাইরের হলগুলোর অবস্থা খুব খারাপ। সিনেমা ঘুরে দাঁড়াতে হলে সিনেমা হলগুলোকে আগে সংস্কার করতে হবে। আমি চাই, ভালো গল্পের বড় বাজেটের সিনেমা নির্মিত হোক। এখন প্রায়ই দেখি টেলিফিল্ম মার্কা সিনেমা হচ্ছে। এসব সিনেমায় যেকোনো ছেলে-মেয়েকে নায়ক-নায়িকা বলে হলে চালিয়ে দিচ্ছে, এগুলো বন্ধ করতে হবে। এগুলোর জন্য কঠোর নীতিমালা হওয়া প্রয়োজন। এ ধরণের সিনেমা যখন হলে মুক্তি পায় তখন বাংলাদেশের সিনেমার প্রতি মানুষের একটা খারাপ ধারণা তৈরি হয়। পরে ভালো সিনেমা দেখতেও দর্শক হলে যেতে চায় না। স্বপ্ন দেখি ২০১৮ সালে সিনেমা ঘুরে দাঁড়াক। কিন্তু এ বছর ঝামেলাও আছে। যেহেতু এ বছরটা নির্বাচনের বছর। রাজনৈতিক অস্থিরতাও বিরাজ করবে। এ ক্ষেত্রে সরকার সিনেমার দিকে কতটা নজর দিবে তাও ভাবার বিষয়। তারপরও আমাদের সকল সংগঠন মিলে কাজ করতে না পারলে, এ বছরটি সিনেমার জন্য ভয়াবহ খারাপ হবে। ব্যক্তি স্বার্থ ভুলে সার্বিক স্বার্থে কাজ করতে হবে। ভালো নির্মাতাদের এগিয়ে আসতে হবে। এখনকার শিল্পীদের একটা সমস্যা রয়েছে গল্প না বুঝেই দাম হাঁকিয়ে বসে, টাকা বেশি চেয়ে বসে। এদের এই জায়গা থেকে সরে আসতে হবে। সংযত হতে হবে। সময় মতো আসতে হবে। আমরা পরিচালক সমিতিকেও অনুরোধ করব যারা সত্যিকারের সহকারী পরিচালক তাদেরকে সদস্য পদ দেয়া হোক। যাকে তাকে সিনেমার পরিচালক বানিয়ে দিলে তারা মানহীন সিনেমা নির্মাণ করবেন, এতে আমাদের চলচ্চিত্রে বিরূপ প্রভাব পড়বে। আমাদের একটা বিশেষ ইচ্ছে আছে- আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করব। হলগুলোর মান উন্নয়নের জন্য কথা বলব। হলগুলো আধুনিকায়ন করা দরকার। পরিবেশ ঠিক করতে হবে। আমি চাইব সরকার সার্ভারের ব্যবস্থা করবেন। সরকারের নিয়ন্ত্রণে এই সার্ভার থাকবে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অধীনে যেন না থাকে। শিল্পী সমিতিতে নির্বাচনের আগে আমাদের দশটি ইশতেহার ছিল। এরই মধ্যে ৬-৭টি ইশতেহার আমরা পূরণ করে ফেলেছি। নীতিমালা বিহীন যৌথ সিনেমা বন্ধ করা, অনুমতিবিহীন বিদেশি শিল্পীদের আসা বন্ধ করা, শিল্পীদের চাঁদা কমানো, নতুন শিল্পীদের সদস্য ফি কমানোসহ ৬-৭টি পূরণ করেছি। সফলভাবে একটি ইফতার পার্টি করেছি। ইচ্ছে আছে, জানুয়ারিতে শিল্পীদের নিয়ে পিকনিক করার। যদিও এগুলো দিয়ে সিনেমার উন্নতি হবে না। সিনেমার উন্নতির জন্য ভালো সিনেমা নির্মাণ করা প্রয়োজন। হলমালিক ১০০ টাকার টিকিটে একজন প্রযোজক মাত্র ১৩ টাকা পান। এভাবে হলে কিভাবে সিনেমা প্রযোজনা করবেন প্রযোজকরা। হল মালিকগণ বলেন, ‘হল না থাকলে সিনেমা বাঁচবে না।’ আমিও একইভাবে বলি, ‘প্রযোজক না থাকলে সিনেমা বাঁচবে না।’ উনারা যদি সেই স্বপ্ন দেখেন যে, বিদেশ থেকে সিনেমা এনে হলে চালাবেন। সেই স্বপ্ন কত দিন? বিদেশে দেখে আমদানি করা সিনেমা বাংলাদেশে চলেনি। বাংলাদেশের দর্শক এসব সিনেমা গ্রহণ করে না। ২০১৮ সালে সিনেমা করার আগে দেখে নিব ভালো পরিচালক ও ভালো গল্প কি না। এরই মধ্যে অনেকগুলা সিনেমার প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু আমি তা করিনি। ভালো সিনেমা বছরে দুটি মুক্তি পেলেই যথেষ্ট। মানহীন সিনেমা ১০টা মুক্তি পেলেও কোনো লাভ নেই। ২০১৭ সালে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। এগুলো আমাদের কাম্য ছিল না। এসব ঘটনার কিছু ঘটনা মানুষ না বুঝে করেছে। শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে মামলা হবে এটাও আমাদের কাম্য ছিল না, সাবেক সভাপতি আমাদের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি করবেন সেটাও কাম্য ছিল না। নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখান করে অনেকে অনেক কথা লিখে যাচ্ছেন এটাও কাম্য নয়। দুইটা বছর অপেক্ষা করা উচিৎ ছিল, আমরা সফল না হলে ব্যর্থতার দায় নিয়ে চলে যাব। এগুলো হয়তো ভুল বুঝেই করেছেন। আমার আশা, নতুন বছরে সমস্ত গ্লানি, ব্যর্থতা, হীনমন্যতা ভুলে একটা পরিবার হয়ে কাজ করার। আর কিছু শিল্পীদের বলব, ব্যক্তিগত সর্ম্পকগুলো লোকচক্ষুর সামনে নিয়ে আসছেন, হাসির পাত্র হচ্ছেন এগুলো যেন না হয়। নিজেদের ব্যক্তিগত সমস্যা ঘরে বসেই নিজেরা সমাধান করে ফেলুন। কারণ শিল্পীরা সমাজের আইডল। শিল্পীদের কাছ থেকে মানুষ শিখে। এদেরকে যখন নোংরামি করতে দেখে দর্শকদের তখন পুরো চলচ্চিত্রের উপরে বিদ্বেষ চলে আসে। সর্বোপরি চলচ্চিত্রের সকল সংগঠনের সদ্যসদের জানাই নতুন বছরের শুভেচ্ছা। আর আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি দর্শক তাদেরকেও বাংলাদেশ শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা। অনুলিখন : রাহাত সাইফুল

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২ জানুয়ারি ২০১৮/শান্ত