বিনোদন

লুকিং গ্লাসে অপুকে দেখেই প্রেমে পড়েছিলাম: মাহি

রাহাত সাইফুল: ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। চলচ্চিত্রের পর্দায় তার সৌন্দর্য্য আর সাবলীল অভিনয় দেখে প্রেমে পড়েছেন অসংখ্য ভক্ত। তিনিও কিন্তু একজন সাধারণ মানুষের প্রেমে হাবুডুবু খেয়েছেন। সেই মানুষের মন পেতে তাকেও সময় ব্যয় করতে হয়েছে। তিনি সিলেটের ছেলে অপু। অপুর সঙ্গে মাহির দীর্ঘ প্রেমের সফল পরিণতি তাদের বিয়ে এবং পরবর্তী সময়ের সুখী দাম্পত্যজীবন। বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে তাদের প্রেমের গল্প, ভালোলাগার বিশেষ মুহূর্তের কথা শুনিয়েছেন রাইজিংবিডির এই প্রতিবেদকের কাছে। যেভাবে হলো পরিচয় মাহি: ঘটনাটি ২০১২ সালের শেষের দিকে। আমার প্রিয় বন্ধু আশ্রাবের সঙ্গে পরিকল্পনা করলাম কোথাও ঘুরতে যাব। আমার ইচ্ছা ছিলো কক্সবাজার। ও বলল সিলেট যাবে। আমরা ওর কথা মেনে সবাই সিলেট গেলাম। আশ্রাবের বেস্ট ফ্রেন্ড অপু। অপুদের বাড়িও সিলেটে। অপুর সাথে প্রথম দেখা হওয়ার পর মনে হলো, হ্যাংলা-পাতলা আইনস্টাইন টাইপের একটা ছেলে। আমি একদমই যা অপছন্দ করি, ওর মধ্যে সেগুলো পেলাম। অনেক বেশি ফর্সা, চশমা পরে, চিকন- এসব আরকি! ওকে দেখার পর আশ্রাবকে খোঁচাচ্ছিলাম- তোর বন্ধু এমন কেন? আমি তো ভেবেছিলাম তোর বন্ধু অনেক সুন্দর হবে! যাই হোক, প্রথম দেখায় প্রেম- আমার ক্ষেত্রে এটা হয়নি। অপু: মাহি আমার এক বন্ধুর বান্ধবী। ঐ বন্ধুর সাথে সিলেট বেড়াতে এলে মাহির সঙ্গে আমার পরিচয় হয়।  

ফাগুনের দিন শেষ হবে একদিন মাহি: দ্বিতীয় দিনের ঘটনা। অপুদের চা-বাগান আছে, ফিশারি আছে। আশ্রাব বললো, চল একটু ঘুরে আসি। অপু ওদের গাড়ি নিয়ে এলো। ওর সঙ্গে আরো দুজন বন্ধু ছিলো। আমি, আশ্রাব আরেকজন বন্ধু পেছনে বসলাম। অপু গাড়ি চালাচ্ছিল। আমি বরাবরই সিনেমাটিক। খুবই রোমান্টিক। গান শুনলে একটু আনমনা হয়ে যাই। তখন কল্পরাজ্যে বিচরণ করি। তো জাফলংয়ের রাস্তায় গাড়ি চলছিলো। ‘ফাগুনের দিন শেষ হবে একদিন’ গানটি বাজছিলো। অপুর সামনে লুকিং গ্লাস ছিলো। আমার হঠাৎ করেই লুকিং গ্লাসে চোখ পড়ল।  ঐ প্রথম ওকে দেখেই কেন জানি ভালো লেগে গেল। বলা যায় সেদিন লুকিং গ্লাসে দেখেই আমি অপুর প্রেমে পড়েছি। এদিকে অপুর কোনো ইচ্ছাই নেই। আমাকে দেখে ওর মনে হয় ভালো লাগেনি। অপু: যখন দুজন-দুজনার কাছাকাছি যাই তখনই ভালোলাগা তৈরি হয়। আমার প্রতি ওর ক্রেজিনেস দেখে আমার ভালোলাগা তৈরি হয়। ভালোবাসার প্রস্তাব মাহি দিয়েছে   মাহি: আমি তো ওর প্রেমে পড়লাম। এরপর শুরু হলো চিন্তা। কারণ আমি কীভাবে ওকে প্রপোজ করবো? এদিকে ওকে ভালোলাগার কথা না বলেও থাকতে পারছি না। বলা চলে আমি প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি তখন। আমার মোবাইল নাম্বার অপু জানতো। আমি বুদ্ধি করে আননোন নাম্বার থেকে অপুকে এসএমএস পাঠালাম। লেখা ছিলো: ‘আপনাকে আমার খুব ভালো লাগে’। এরপর আরো কিছু এসএমএস পাঠালাম। কিন্তু সে রিপ্লাই করে না। অপেক্ষার প্রহর কাটে। একদিন সেই প্রহর শেষ হলো। অপু রিপ্লাই করল। এরপর থেকে দুজনের এসএমএস-এর মাধ্যমে কথা হতো। আমি খুশি কারণ সে রিপ্লাই করছে। আবার রাগও হতো, তখনও সে জানত না আমি মাহি। এরপর আমি ‘ইনোসেন্ট অ্যাঞ্জেল’ নামে একটা ইয়াহু ম্যাসেঞ্জারে অ্যাকাউন্ট খুলি। আমি দেখতাম ২৪ ঘণ্টা সে আমার জন্য অনলাইনে থাকতো। এভাবে তিনমাস ধরে চলতে লাগলো। আমার একটা ডুয়েল সিমের ফোন ছিলো। সেখানে আমার আসল নাম্বার যেমন ছিলো তেমনি ওর জন্য যে নাম্বারটা ব্যবহার করতাম সেটাও ছিলো। একদিন হঠাৎ দেখি ও ফোন দিয়েছে। আমি ভেবেছিলাম, ও আমার আসল নাম্বারটায় ফোন দিয়েছে। ফলে ফোন রিসিভ করেই বলে ফেলি, ভাইয়া কেমন আছেন? তখন সে আমার কণ্ঠ শুনেই বুঝে ফেলে এটা আমি। এ ঘটনায় আমি তো মাটিতে বসে পড়েছি! সে আমার সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দিলো। এদিকে আমিও নাছোড়বান্দা। তাকে ফোন করতে করতে অবশেষে মোটামুটি বোঝাতে সক্ষম হই। অপু: আমরা প্রথমে অপরিচিত নাম্বারে মেসেঞ্জারে কথা বলতাম। কোনো কারণে আমি জেনে গিয়েছিলাম এটা মাহি। কিন্তু মাহি জানতো না যে, আমি জেনেছি বিষয়টা। হঠাৎ একদিন আমি ওর আসল নাম্বারে ফোন করি। তখন সে ভীষণ শকড হয়েছিল। বিষয়টি খুব মজার ছিলো! এভাবেই আমাদের প্রেম হয়ে যায়। ভালোবাসার প্রস্তাব মাহি দিয়েছে।

ভালোবাসার সেরা উপহার মাহি: অপু খুব কিপটা ছিলো। খুব একটা উপহার দিতো না। সে খুব সিরিয়াসও ছিলো না। ও মনে করতো, আমি হিরোইন। এর মধ্যে একদিন তার সাথে ঝগড়া হলো। এরপর আমি আট মাস ওর সঙ্গে কথা বলিনি। এর মধ্যে ওর বাসায় বিয়ের কথাবার্তা চলছে। মেয়ে দেখার জন্য আমেরিকা যাবে। এমন পরিস্থিতিতে হঠাৎ একদিন তার এক বন্ধু আমাকে ফোন করে বলল, মাহি, তোমাকে তো অপু গিফট করেছে। আমি অবাক হয়ে বললাম, আমাকে তো ও কোনো গিফট করেনি। তখন সে বললো, আমাদের সামনেই তো অপু কেনাকাটা করে প্যাকেট করেছে। আমি শুনে দুঃখে-কষ্টে শেষ। গিফট কাকে না কাকে দিয়ে দিলো! এরপর আর কোনো খবর নেই। রোজার ঈদের পরে হঠাৎ আমার মন খারাপ হলো ফেসবুকে একটা পোস্ট দেখে। পোস্টে লেখা ছিল: একটা বয়ফ্রেন্ড একটা গার্লফ্রেন্ডকে ড্রেস দিয়েছে। সঙ্গে একটি চিরকুটে লেখা ছিলো-এই ড্রেস পরে তুমি রেডি থেকো। আমরা ডিনারে যাব। আমি জানি অপু দেশে নেই। তারপরও রাত তিনটার দিকে ওকে একটা ফোন করি। একবার রিং হতেই দেখলাম ও ফোনটা ধরেছে। তার মানে ও বাংলাদেশে। আমি অপুকে বললাম, আমার ভীষণ মন খারাপ তাই ফোন করেছি। অপু বলল, কেন তোমার মন খারাপ আমি জানি। আমি ঐ পোস্টটা শেয়ার করেছিলাম। সেটা দেখে অপু বুঝতে পেরেছিল। এরপর অপু বলল, তুমি গিফট পেয়েছ? আমি আকাশ থেকে পড়লাম! অপু তখন একটা ক্যাশমেমোর ছবি পাঠাল। দুই মাস আগে একটি সালোয়ার-কামিজ আর এক বাক্স চালতার আচার সে কুরিয়ার করেছিল আমার ঠিকানায়। আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম ওর প্রথম উপহার পাইনি বলে। সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। পরদিন সকালবেলা কুরিয়ার অফিসে গিয়ে তন্ন তন্ন করে খুঁজে উপহারের প্যাকেটটি পেয়েছিলাম। এটাই ছিলো আমার জীবনের সেরা উপহার। আমিও সবসময় ড্রেস গিফট করতে পছন্দ করি। আমি ওকে ড্রেস গিফট করেছি। অপু: বউ হিসেবে মাহিকে পাওয়াটাই হচ্ছে আমার সেরা উপহার। প্রেমের ক্ষেত্রে বাধা মাহি: আমার বাধা ওকেই মনে হতো। কারণ ও সিরিয়াস ছিলো না। অপু: প্রেমের ক্ষেত্রে আমাদের কোনো বাধা ছিল না। বিয়ের পরে অভিনয় মাহি: অপু আগে বলতো, অভিনয় করা যাবে না। বিয়ের পর ও যখন আমার শুটিং স্পটগুলো দেখেছে, তখন সেখানকার পরিবেশ দেখে মত পাল্টেছে। এখন ও বলে, তুমি রেগুলার অভিনয় করো। যতদিন ভালো লাগে ততদিন করো। অপু: আমি মাহিকে বলেছি, তুমি আমার বউ হতে পারো। কিন্তু তোমার ফ্যান, ফলোয়ারদের কাছ থেকে আমি তোমাকে কেড়ে নিয়ে আসবো না। তোমার যতদিন ভালো লাগে অভিনয় করে যাও। অভিমান ভাঙায় যে মাহি: বিয়ের আগে আমি নরম ছিলাম। ও গরম ছিলো। এখন আমি গরম, ও নরম।(হা হা হা) অপু: জগতের রীতি হচ্ছে ছেলেরাই স্ত্রীর মান ভাঙায়। মেয়েরা যত অপরাধ করুক না কেন, ছেলেদেরই মান ভাঙাতে হবে। ওরা একটু অভিমানী হয়।  

যে কথা এখনও বলা হয়নি মাহি: বিয়ের পরে আমি খুব রুড হয়ে গেছি। অনেক বেশি ঝগড়া করি। অনেক বেশি রেগে যাই। বিয়ের আগো এগুলো প্রকাশ করিনি। ফলে ও মনে করে, আমি বদলে গেছি। আমি আসলে অনেক রুড ওর জন্য নয়। আমি অনেক বেশি ভালোবাসি ওকে। আমি ফর্সা ছেলে একদম সহ্য করতে পারতাম না। এখন ওর জন্য ফর্সা ছেলেই আমার পছন্দ। এটা শুধুই ওর জন্য। অপু: মাহি মনে করে যে, আমার ভালোবাসা ওর জন্য কম। ‍কিন্তু ও বোঝে না যে, আমার পৃথিবীজুড়েই মাহি। ও ছাড়া আমার পৃথিবী শূন্য। ভুল বোঝাবুঝি মাহি: আমি যা প্রত্যাশা করি ও তা করে না কেন? আমাকে ও লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে না কেন? এগুলো নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হয়। ও কেন সিনেমাটিক না? ও আসলে বেশি নরম। আমি ঝগড়া করলে ও চুপ থাকে। এজন্য আরো বেশি মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। অপু: আমাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয় না বললেই চলে। 

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/রাহাত/তারা