বিনোদন

‘আশা করছি তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন’

বিনোদন ডেস্ক : নগরীর অ্যাপোলো হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন রয়েছেন নাট্যকার অধ্যাপক মমতাজউদ্দীন আহমেদ। গত শুক্রবার দুপুরে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার কারণে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে আগের চেয়ে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। রাইজিংবিডিকে এ তথ্য জানিয়েছেন, মমতাজউদ্দীন আহমেদের ছাত্র মুক্তিযোদ্ধা, অধ্যাপক-অভিনেতা জিয়াউল হাসান কিসলু। জিয়াউল হাসান কিসলু রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘গত শুক্রবার সকাল থেকে স্যারের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। দুপুরবেলা আরো বেড়ে গেলে স্যারকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কৃত্রিমভাবে অক্সিজেন দেওয়া হয় এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আইসিইউ-তে ভর্তি করা হয়। স্যারের শ্বাসকষ্ট প্রকট হওয়ার কারণে স্যার অনেকটা অবচেতন ছিলেন, কারো সঙ্গে কথা বলতে পারছিলেন না। তবে গতকাল সোমবার থেকে টুকটাক কথা বলছেন। ভাবির (মমতাজউদ্দীন আহমেদের স্ত্রী) সঙ্গেও অল্প কথা বলেছেন। আমরাও অ্যাপোলো হাসপাতালে গিয়েছিলাম। আইসিইউ-এর বাইরে থেকে মনিটরে আমরাও তা দেখেছি।’ মমতাজউদ্দীন আহমেদের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা প্রসঙ্গে জিয়াউল হাসান কিসলু বলেন, ‘‘বর্তমানে হাসপাতালে স্যারের ভাতিজা সেলিম আছে। আজ সকাল ১১টার দিকে (মঙ্গলবার) তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। সেলিম বলল, ‘গতকাল আপনি যেমন দেখে গেছেন তেমনি আছেন। তার চেয়ে শারীরিক অবস্থার অবনতি কিংবা উন্নতি কোনটাই হয়নি।’’ তিনি আরো বলেন, ‘স্যারের দুই ছেলে দেশের বাইরে ছিলেন। আজ সকালে তারা দেশে ফিরেছেন। তারা এখন আরো হাই প্রোফাইল ট্রিটমেন্টে হয়তো যাবেন। স্যারের এক ছেলে চিকিৎসক। সবাই এখন পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিবেন। আর যেহেতু স্যার এখন অল্প অল্প কথা বলছেন সেহেতু আমরা আশা করছি, তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন।’ দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের সংক্রমণ ও অ্যাজমার সমস্যায় ভুগছেন মমতাজউদ্দীন আহমেদ। ১৯৩৫ সালের ১৮ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন মমতাজউদ্দীন। রাজশাহী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী থাকাকালে ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। তৎকালীন রাজশাহীর ছাত্রনেতা ভাষাসৈনিক গোলাম আরিফ টিপুর সান্নিধ্যে ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন এবং দেশের পশ্চিমাঞ্চলে ভাষার দাবিতে আন্দোলনে ভূমিকা পালন করেন তিনি। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজশাহী সরকারি কলেজের মুসলিম হোস্টেলের ইট কাদামাটি দিয়ে যে শহীদ মিনার গড়ে উঠেছিল, তাতে মমতাজউদ্দীনও ভূমিকা রেখেছিলেন। তখন একাধিকবার জেল খেটেছেন তিনি। কর্মজীবনে মমতাজউদ্দীন চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগে অধ্যাপনা করেন। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি প্রণয়ন কমিটিতে একজন উচ্চতর বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব পালন ছাড়াও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের পরিচালক ছিলেন। মমতাজউদ্দীনের লেখা নাটক ‘কী চাহ শঙ্খচিল’ এবং ‘রাজার অনুস্বারের পালা’ কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য তালিকাভুক্ত হয়েছিল। নাট্যচর্চায় অবদানের জন্য ১৯৯৭ সালে একুশে পদক লাভ করেন তিনি। তা ছাড়াও বাংলা একাডেমি পুরস্কার, শিশু একাডেমি পুরস্কার, আলাউল সাহিত্য পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন এই বরেণ্য নাট্যকার। তার রচিত নাটকগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-‘হৃদয়ঘটিত ব্যাপার স্যাপার’, ‘নাট্যত্রয়ী’, ‘জমিদার দর্পণ’, ‘সাত ঘাটের কানাকড়ি’, ‘স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা’, ‘প্রেম বিবাহ সুটকেশ’, ‘ক্ষত বিক্ষত’, ‘রঙ্গপঞ্চাদশ’, ‘বকুল পুরের স্বাধীনতা’ প্রভৃতি। এ ছাড়াও তার প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘চার্লি চ্যাপেলিন-ভাঁড় নয় ভব ঘুরে নয়’, ‘আমার ভিতরে আমি’, ‘জগতের যত মহাকাব্য’, ‘বাংলাদেশের নাটকের ইতিবৃত্ত’, ‘বাংলাদেশের থিয়েটারের ইতিবৃত্ত’, ‘নীলদর্পণ’ (সম্পাদনা), ‘সিরাজউদ্দৌলা’ (সম্পাদনা), ‘লাল সালু ও সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ’, ‘মহানামা কাব্যের গদ্যরূপ’ ‘সাহসী অথচ সাহস্য’ ‘নেকাবী এবং অন্যগণ’ প্রভৃতি। রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ অক্টোবর ২০১৮/শান্ত/মারুফ