বিনোদন

মুক্‌তি মজুমদার স্মরণে অনুষ্ঠান

বিনোদন প্রতিবেদক : খুলনার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে রবীন্দ্রনাথের মানসকন্যা হিসেবে পরিচিত মুক্‌তি মজুমদার। রবীন্দ্রদর্শন ধারণ করা যে গুটিকয়েক মানুষ বাংলাদেশে জাজ্বল্যমান তাদের মধ্যে অন্যতম মুক্‌তি মজুমদার। প্রচারবিমুখ, নিভৃতচারী থেকেও সকলের কাছের প্রাণের মানুষ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। রবীন্দ্রনাথের বাণিজ্যিক ব্যবহারের বিপরীতে মননশীল প্রয়োগের জন্য আজীবন কাজ করেছেন। শিক্ষাগুরু মুক্‌তি মজুমদারের প্রয়াণ দিবস উপলক্ষ্যে ‘আমি তোমাদেরই লোক’ শিরোনামে এক স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় শাহবাগের সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রে এ আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের মুখবন্ধ ও সঞ্চালনা করেন দখিনদুয়ারের আহবায়ক- আবদুস সবুর খান চৌধুরী। মুক্‌তি মজুমদারের প্রতিকৃতিতে পুষ্প অর্পণ, মোমবাতি প্রজ্জ্বলন  এবং ‘আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে’, ‘আকাশজুড়ে শুনিনু ওই বাজে’ সমবেত সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করেন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব রাহুল রাহা, অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, যশোর বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাধব রুদ্র, জ্যোতি  চট্টোপাধ্যায় ও ডালিয়া রহমান।  

এ সময় সংগীত পরিবেশন করেন কৃষ্ণ সেন, অদিতি সেন, বর্ষা রাহা, আনন্দময়ী মজুমদার, দীপ্র, সাগরিকা জামালী, জান্নাতুল ফেরদৌস লাকী, অশোক মন্ডল, নিহার হাওলাদার, কাজী শিলা, বাবু সরকার ও মুসা কলিম প্রমুখ। আবৃত্তি করেন সাজেদুর রহমান সজল, আতিকুজ্জামান মির্জা ও মঞ্জুরুল আলম পান্না। অধ্যাপক মুক্‌তি মজুমদার ১৯৩৮ সালের ২৮ নভেম্বর খুলনার মহেশ্বরপাশায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৯ সালে ম্যাট্রিক পাশ করেন এবং ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন শাস্ত্রে এম. এ. ডিগ্রি লাভ করেন। তার পিতা সুবোধচন্দ্র মজুমদার ছিলেন একজন বিশিষ্ট আইনবিদ ও শিক্ষাবিদ। সুবোধচন্দ্র একাধারে বেহালা, সেতার, বীণা, পাখোয়াজ, তবলা, হারমোনিয়াম, বাঁশি, এস্রাজ জানতেন। কলকাতার সংগীত একাডেমিতে গিয়ে তালিম নিয়েছিলেন। সেইসব আবার শিখেছিলেন তাঁর ছেলেমেয়েরা। যোগ্যপিতার যোগ্যকন্যা হয়ে বেড়ে উঠেছিলেন দর্শনের অধ্যাপক মুক্‌তি মজুমদার। জীবন ও জগৎ সম্পর্কে তার গভীর জ্ঞান, মুক্তচিন্তুা, উদার ও নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি এবং প্রতিবাদী ব্যক্তিত্ব সুধী মহলে বিশেষভাবে পরিচিত। অন্যায়ের বিষয়ে তিনি ছিলেন আপোসহীন, দৃঢ় ও নির্ভীক। খুলনার মূলধারা সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অসাম্প্রদায়িক, মুক্তচিন্তার আন্দোলনে পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি।  

সাম্রাজ্যবাদী শোষণের বিরুদ্ধে যে সুকঠিন সংগ্রাম, তাতে উজ্জীবিত করেছেন শত শত তরুণকে। গ্রামের প্রান্তিক মানুষগুলোর কাছে অধ্যাপিকা মুক্‌তি মজুমদারের গৃহকোণ আরণ্যক ছিল নিজের আলোর ঠিকানা। জীবনের শেষ দিনগুলোতে আরণ্যকে বৃক্ষরাজি, ফুল আর পাখিরাই ছিল তার নিকটজন। কী দিয়েছেন-বিলিয়েছেন, কী পেলেন তার প্রতিদান, সে চিন্তার সংকীর্ণতা তাকে কখনো স্পর্শ করতে পারেনি। তাই মানুষ গড়ার কারিগর অধ্যাপিকা মুক্‌তি মজুমদার ভিন্ন ও অনন্য। খুলনার ঐতিহ্যকে হৃদয়ে লালন করে প্রগতিশীল ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঋদ্ধ দখিনদুয়ার শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে মানুষ গড়ার কারিগর অধ্যাপিকা মুক্‌তি মজুমদারকে। রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ নভেম্বর ২০১৮/রাহাত/শান্ত