বিনোদন

সীমাবদ্ধতার মধ্যে নাটক লিখতে হয় : বাবু

বিনোদন ডেস্ক : শ্যামল দত্তের সঙ্গে ২০০৬ সালে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন সাজিন আহমেদ বাবু। ২০০৯ সালে ‘আগে ঘর পরে বর’ নামে একটি নাটক রচনা ও পরিচালনা করেন তিনি। এরপর আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের সঙ্গে সহকারী পরিচালক হিসেবে বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাণ করেন। সম্প্রতি তার লেখা বেশ কয়েকটি নাটকের শুটিং শেষ হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-‘আকাশ বেশি দূরে নয়’, ‘তুমি দাঁড়িয়ে’। আবু হায়াৎ মাহমুদ পরিচালিত এ নাটক দুটির শুটিং ভারতের চেরাপুঞ্জিতে শেষ হয়েছে। তাছাড়া সৈয়দ শাকিল পরিচালনা করেছেন ‘ওপারেই আকাশ’, সকাল আহমেদ পরিচালনা করেছেন ‘মন’। এ নাটক দুটির শুটিং নেপাল ও ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন স্থানে হয়েছে। সাজিন আহমেদ বাবু এ পর্যন্ত প্রায় ১০০টির মতো নাটক রচনা করেছেন। এর মধ্যে দুটি ধারাবাহিক নাটক। আর পরিচালনা করেছেন প্রায় ৪০টি নাটক-টেলিফিল্ম। বর্তমান ব্যস্ততা প্রসঙ্গে এ নাট্যকার রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘নাটক লেখার কাজ নিয়েই বেশি ব্যস্ত সময় পার করছি। যাদেরকে চিত্রনাট্য দিচ্ছি তাদের প্রত্যেককে ব্যক্তিগতভাবে চিনি, জানি। যাদেরকে চিনি না তাদেরকে দিচ্ছি না তেমনটা নয় বরং পরিচিতজনদের দেওয়ার পর তাদের দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছি না। তবে নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে কাজ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া বর্তমানে ছোট গল্প লিখছি। লেখালেখিটা নিয়েও ভাবছি।’ ‘আসলে সব সময় একটি সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকে নাটক লিখতে হয়। এই কজন আর্টিস্ট, এই লোকেশন হবে আবার দেশের বাইরে শুটিং থাকলে আর্টিস্ট কম থাকতে হবে এমন আরকি। ধরাবাঁধা একটি ফরম্যাটে নাটক লিখতে হয়। এজন্য স্বাধীনভাবে সৃজনশীল চিন্তা করা যায় না। এটা একটি প্রতিবন্ধকতা। একজন পরিচালক বা নাট্যকারের জন্য এটা অনেক কষ্টের।’ বলেন বাবু। বর্তমানে প্রচুর নাটক নির্মিত হচ্ছে। কিন্তু নাটকের গল্প ও নির্মাণ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে  তিনি বলেন, ‘অনেকেই বলেন- স্বাধীন চিন্তা করতে টাকা লাগে না কিন্তু স্বাধীন চিন্তা বাস্তবায়ন করতে টাকা প্রয়োজন। ৪০ মিনিটের একটি নাটক ২ দিনে বানাতে হয়। ৬০ মিনিটের একটা টেলিফিল্ম ২ দিনে বানাতে হয়। দুই দিনের চেয়ে বড় ব্যাপার বাজেট ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। কেউ কেউ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকাতেও বানান। এ অবস্থায় ভালো নাটক কেন, একটা খারাপ মানের নাটকও নির্মাণ করা যায় না। একটি নাটকে যে পরিমাণ ফুটেজ লাগে এই বাজটে তা ধারণ করাই কঠিন হয়ে পড়ছে। ধরুণ, একটা শট ঠিক হলো না সেটা আবার নিব কিন্তু সেই সময় কোথায়? লোকেশন পরিবর্তন করা প্রয়োজন কিন্তু সেই সময় কোথায়? এখন ভালো বাজেট ছাড়া ভালো নাটক নির্মাণ কখনই সম্ভব না। এর মধ্যেও যেসব ভালো কাজ হচ্ছে সেগুলো পরিচালক, অভিনয়শিল্পী বা টিমের সবার ত্যাগ আর ভালোবাসার কারণে হচ্ছে। কিন্তু এভাবে আর বেশি দিন করা সম্ভব না। অনেক গুণী নির্মাতারাই নাটক বানানো কমিয়ে দিয়েছেন-শুধু বাজেট স্বল্পতার কারণে। আমার মতো কিছু ছোট পরিচালকরা এখন একটু বেশি নাটক বানাচ্ছেন। সুতরাং ভালো কাজের জন্য ভালো বাজেট খুবই দরকার।’  সাজিন আহমেদ বাবু আরো বলেন, ‘অনেকে বড় বাজেট পাওয়ার পরও ভালো নাটক নির্মাণ করতে পারছেন না, এটাও ঠিক। কারণ বড় বাজেট হলেই সব কাজ ভালো হবে তা নয়। খারাপ বাজেট হলেই সব কাজ খারাপ হবে সেটাও না। তবে যেসব কাজ ভালো হচ্ছে সেসবের বেশির ভাগই বড় বাজেটের কাজ। বর্তমানে অনেক মেধাবীরা কাজ করছেন। তারা অনেক পড়াশোনা করেই কাজ করছেন। নির্মাণ কাজটি আগে শুধু গুরুমুখী বিদ্যা ছিল-এখন তা নেই। কারণ বিশ্বের বিখ্যাত ফিল্ম বা অন্য কাজগুলো তারা সহজেই দেখতে পারছেন। আমাদের বর্তমান সময়ের কাজের সঙ্গে কলকাতার কাজের তুলনা করলে দেখবেন-আমাদের কাজ অনেক ভালো। ওদের চেয়ে গল্প, নির্মাণসহ সব দিকে থেকেই এগিয়ে আছি। গল্প ও নির্মাণের বৈচিত্রে আমরাই এগিয়ে। কিন্তু আমাদের বাজেটটা নেই।’ সব পরিচালকের সর্বশেষ লক্ষ্য থাকে চলচ্চিত্র নির্মাণ করা। পরিচালনা নিয়ে আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা জানতে চাই। এমন প্রশ্নের উত্তরে সাজিন আহমেদ বাবু বলেন, ‘অবশ্যই ফিল্ম বানাব। তবে তার আগে মার্কেট ঠিক হোক। পাশাপাশি নিজেকে প্রস্তুত করা প্রয়োজন। আমি যতটুকু কাজ শিখেছি তা ফিল্ম বানানোর জন্য উপযুক্ত নয়, এটা আমরা ভাবনা। আমাকে আরো পড়তে হবে আরো শিখতে হবে। আমি লিখছি, লেখার মধ্যে শিখছি। পরিচালনা করছি আর শিখছি। তাই আপাতত নাটক রচনা ও নির্মাণ করে যেতে চাই।’ রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ ডিসেম্বর ২০১৮/শান্ত/মারুফ