বিনোদন

বাথরুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে বসে থাকতাম: সজল

আমি বাবাকে নিয়ে গর্ববোধ করি। আমার বাবা অসম্ভব রকম ট্যালেন্ট। এসএসসিতে তিনি যশোর বোর্ডে স্ট্যান্ড করেছিলেন। বাবা যে স্কুলে পড়তেন সে স্কুলে তখন বিজ্ঞান বিভাগ ছিল না। যে কারণে বাড়ি থেকে দুই তিন মাইল দূরের একটি স্কুলে ভর্তি হন। এতটা পথ পায়ে হেঁটে স্কুলে যেতেন। খুবই সংগ্রামী একজন মানুষ তিনি। জীবনে যা কিছু করেছেন নিজের যোগ্যতায়। বাবা এসব কথা আগে কখনো বলেননি। গত ঈদুল ফিতরে বাবার সঙ্গে আড্ডা দিতে গিয়ে এসব গল্প তার মুখ থেকে শুনেছি। বাবা আড্ডা দিতে ভীষণ পছন্দ করেন। বাবার ধারণা ছিল, তার গল্প শুনে আমরা বিরক্ত হবো। কিন্তু আমি খুব উপভোগ করেছি। ছোটবেলায় আমি খুব দুষ্টু প্রকৃতির ছিলাম। বাবা যখন আমাকে পড়াতেন তখন পড়তে চাইতাম না। কিন্তু পরীক্ষায় ফল ভালো করতাম। এজন্য চাপ দিতেন না। তবে সারাক্ষণ ফাঁকিবাজির মধ্যে থাকতাম। বাবা যখন পড়াতে বসাতে চাইতেন আমি ডাইনিং টেবিলের চারপাশে ঘুরতে থাকতাম। টেবিল বা চেয়ারের নিচে ঢুকে যেতাম। অথবা বাথরুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে বসে থাকতাম। দুষ্টুমি করলেও বাবার হাতে মার খাওয়ার ঘটনা একদমই কম। জীবনে একবার বাবার হাতে মার খেয়েছিলাম। আমরা তখন দুবাইয়ের আবুধাবিতে থাকতাম। ছুটি কাটাতে দেশে এসেছিলাম। কথা ছিল বাবা চাংপাই রেস্টুরেন্টে খেতে নিয়ে যাবেন। কিন্তু হঠাৎ বাবার কাজ পড়ে যাওয়ায় তিনি কোনোভাবেই যেতে পারছিলেন না। এদিকে আমার জেদ খেতে যাবোই। কোনোভাবেই বাবার কথা শুনছিলাম না। আমি সিঁড়িতে পা ছড়িয়ে বসে চিৎকার করতে লাগলাম। এসময় বাবা ঠাস করে একটা চড় মারেন।  ছোটবেলায় চুল কাটানোর জন্য বাবা সেলুনে নিয়ে যেতেন। গরমের সিজনে একবার বাবার সঙ্গে সেলুনে যাই। বাবা চিন্তা করলেন গরমে চুল একদম ছোট করে কাটা ভালো। সে অনুযায়ী আমার চুল একদম ছোট করে কেটে দিলেন। চুল কাটার পর বাবার উপর এমন রাগ উঠল যে, আমি বাসায় এসে চিৎকার করতে লাগলাম। শুধু তাই নয়, জিদ করে ওইদিন দুপুরের খাবারও খাইনি। বাবা এত ভালো যে, এত কিছুর পরও কোনোরকম রাগ করলেন না। রাতে জোর করে খাবার টেবিলে নিয়ে বসালেন। বললেন, ‘তোমাকে দেখতে রাজেশ খান্নার মতো লাগছে।’ একথা শোনার পর আমার মেজাজ আরো খারাপ হয়ে যায়! এবারের ঈদে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বাবার সঙ্গে সুন্দর একটি আড্ডা দিয়েছি। ঈদের নামাজ শেষ করে আমরা একসঙ্গে বসেছিলাম। দীর্ঘ ৯ ঘণ্টা আড্ডা দিয়েছি। বাবার কাছ থেকে পুরোনো দিনের সব গল্প শুনেছি। আমার দাদার দাদার নাম কী তা জেনেছি, যা আগে জানতাম না। বংশের ক্রমন্বয়সহ বিস্তারিত তথ্য বাবার মুখ থেকে জেনেছি। বাবা সবসময় চেয়েছেন তার ছেলেমেয়েরা যেন পড়াশোনা মনোযোগ দিয়ে করে। আমার ছাত্রজীবনে বাবা যা চেয়েছেন ঠিক তাই করেছি। বাবার ইচ্ছে ছিল, এসএসসিতে যেন সব বিষয়ে লেটার আসে। আল্লাহর রহমতে আমি সব বিষয়ে লেটার পেয়েছিলাম। বাবার ইচ্ছে পূরণ করতে পারায় তিনি ভীষণ খুশি হয়েছিলেন। তারপর বাবার ইচ্ছে ছিল, আমি যেন ঢাকা কলেজে পড়ি। কারণ বাবাও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। বাবার ইচ্ছে অনুযায়ী আমিও ঢাকা কলেজে পড়াশোনা করেছি। এরপর বাবা বিবিএ ও আইবিএ-তে ভর্তি হতে বললেন। বাবার এ দুটো ইচ্ছাও পূরণ করেছি। তবে অভিনেতা হওয়াটা বাবার ইচ্ছে ছিল না। শুটিংয়ের কাজে অধিকাংশ সময় ঢাকার বাইরে কিংবা দেশের বাইরে থাকতে হয়। এ সময়গুলোতে বাবাকে মিস করি। বিশেষ করে বাবার কনভারসেশনটা। কারণ বাবা খুব ভালো বক্তা। সাম্প্রতিক বিষয়, ভূগোল কিংবা সাহিত্য— যেকোনো বিষয়ে বাবাকে বলতে বললে খুব ভালো বলতে পারেন। কারণ আমার বাবা পড়ুয়া। একেকজন মানুষের একেক রকম পছন্দ থাকে, বাবার ক্ষেত্রে পড়াশোনাটা তার প্যাশন। আমাদের বাড়ি পটুয়াখালী। আমার বাবা গ্রামের ছেলে। ছোটবেলায় বর্ষায় দাদু বাড়ি বেড়াতে যেতাম। আমরা লঞ্চে যাতায়াত করতাম। লঞ্চঘাট থেকে দাদু বাড়ি খানিকটা দূরে। যাতায়াতের পথটা বৃষ্টির পানিতে কাদা হয়ে যেতো। এই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় কাদায় পড়ে গিয়ে ব্যথা পাব, জামা-কাপড় নোংরা হবে— এসব নিয়ে তিনি কখনো ভাবতেন না। বরং ছেড়ে দিতেন। আমরা দুই ভাই কাদায় মাখামাখি হয়ে যেতাম। বাড়িতে পৌঁছানোর পর বাবা গোসল করিয়ে দিতেন। কিন্তু কাদা মাখতে কখনো বারণ করতেন না। বরং বলতেন, এসবের মধ্যে চলতে শেখো।   শ্রুতিলিখন: আমিনুল ইসলাম শান্ত রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ জুন ২০১৯/শান্ত/তারা