বিনোদন

‘শাকিবের জন্য বন্ডে স্বাক্ষর দিতে হয়েছে’

রাহাত সাইফুল : ঢাকাই চলচ্চিত্রে বর্তমানে শাকিব খানকে তার শত্রুরাও অপ্রতিদ্বন্দ্বী মানেন। তার সিনেমা মানেই বিগ বাজেট, ব্যাপক আয়োজন। আর অন্তত পুঁজি ফেরৎ পাবার একটা স্বস্তি থাকে প্রযোজকের মনে। ১৯৯৯ সালের ২৮ মে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়েছিল তার। আজকের জননন্দিত অভিনেতা সেদিন ছিলেন তরুণ মুখ। ১৮ বছরের অক্লান্ত সাধনায় এখন শীর্ষ নায়ক। দীর্ঘ অভিনয়জীবনে অনেক নায়িকা শাকিব খানের বিপরীতে পর্দায় অভিনয় করেছেন। অথচ ক্যারিয়ারের শুরুতে এই নায়ককে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করতেও দেখা গেছে। জনপ্রিয় নায়িকাদের সঙ্গে জুটি বাঁধতে তাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে। এখন বর্তমান প্রজন্মের নায়িকারা তার সঙ্গে অভিনয় করতে অপেক্ষায় থাকেন। সে-সময়ের জনপ্রিয় নায়িকাদের অনেকেই চলচ্চিত্র থেকে বিদায় নিয়েছেন। দীর্ঘ বিশ বছরের ক্যরিয়ারে শাকিব খানের নায়িকাদের নিয়ে এই আয়োজন। এবারের পর্বে থাকছেন সাদিকা পারভিন পপি। ১৯৯৭ সালে সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘আমার ঘর আমার বেহেশত’ সিনেমায় অভিনয়ের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে পা রাখেন পপি। কিন্তু তার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘কুলি’। মনতাজুর রহমান আকবর পরিচালিত এই সিনেমায় সেই সময়ে ৭ কোটি টাকা ব্যবসা করে। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। এরপর রিয়াজ, মান্নাসহ জনপ্রিয় নায়কের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেন তিনি।

এদিকে ১৯৯৯ সালে চলচ্চিত্রে পা রাখেন শাকিব খান। পরপর তার অভিনীত দুটি সিনেমা ফ্লপ হয়। এরপর নির্মাতারা তাকে নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী ছিলেন না। সে সময় চিত্রনায়িকা পপি বন্ডে স্বাক্ষর দিয়ে শাকিব খানকে তার বিপরীতে ‘দুজন দুজনার’ সিনেমায় নিয়েছিলেন। 

এ প্রসঙ্গে পপি বলেন, ‘একদিন আজিজ রেজা ভাই শাকিবকে নিয়ে আমার বাসায় আসেন। আমার সিনেমায় তাকে নিতে অনুরোধ করেন। আমি আপত্তি করিনি। কিন্তু প্রযোজক তাকে নিতে চাচ্ছিলো না। তখন দায়িত্ব নিয়ে ‘দুজন দুজনার’ সিনেমায় তাকে নেয়া হয়। এ জন্য আমার রেমুনেশনও কম নিতে হয়েছে। আমি যখন সাত লাখ টাকা নিয়েছি তখন শাকিব ১৫ হাজার টাকা নিত। আমার অনুরোধে ওর পারিশ্রমিক বেড়েছে। আমার প্রত্যেকটা প্রডাকশনে আমি বলার পরে ওকে নেয়া হয়েছে। সবগুলোতেই বন্ডে স্বাক্ষর দেয়া আছে। এই সিনেমাগুলো হিট হওয়ার পরই শাকিব খান আজকের পর্যায়ে এসেছে।’

শাকিব খান স্টার হয়ে ওঠার পরে আপনাদের দুজনকে জুটি বেঁধে অভিনয় করতে দেখা যায়নি কেন? এ প্রসঙ্গে পপি বলেন, ‘তখন শাকিবের সঙ্গে অপুর প্রেম, বিয়ের কারণে আর হয়ে ওঠেনি হয়তো। তাছাড়া তখন ও একটা ব্লকে কাজ করেছে। আমরা যে যার ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত থেকেছি। আমি কখনও নায়ক নির্ভর ছিলাম না। আমাদের দেশে অনেক শিল্পী আছেন যারা জুটি হিসেবে কাজ করেছে। এক সময় কেউ কাজ ছেড়ে দিলে বা জুটি ভেঙ্গে গেলে তাদের তখন সমস্যা হয়েছে। আমি একমাত্র হিরোইন যে কোনো নায়কের সঙ্গে জুটি বেঁধে কাজ করার চেষ্টা করিনি। আমি কখনও অন্য হিরোর উপর নির্ভর করিনি।’

শাকিব খান-পপি জুটির ‘দস্যু’, ‘ডাকু রানী’,  ‘ওরা সাহসী’, ‘ক্ষমতার দাপট’, ‘ভয়ংকর পরিণাম’, ‘জুয়াড়ি’, ‘হিরা চুনি পান্না’, ‘বস্তির রানী সুরিয়া’, ‘বাপ বেটির যুদ্ধ’, ‘গণ দুশমন’, ‘বিশ্ব বাটপার’, ‘জমজ’, ‘দানব সন্তান’ সিনেমা রয়েছে। শাকিব খান এসব সিনেমায় অভিনয় করে চলচ্চিত্রে নিজের অবস্থান শক্ত করেছেন। শাকিবের হাত পাকা হওয়ার আগেই পপি জনপ্রিয় নায়িকা। যদিও তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া অভিনেত্রী পপির চলচ্চিত্রে চলার পথ এখন অনেকটাই মন্থর। অন্যদিকে চারিদিকে শাকিব খানের জয় জয়কার। একটা সময় পপির বিপরীতে অভিনয় করাটা ছিলো শাকিব খানের জন্য আশীর্বাদ। দিনে দিনে চলচ্চিত্রে পপির অবস্থান কমতে থাকে। পপির পরন্ত বিকেলে শাকিব খান কি তার জন্য আশীর্বাদের ভূমিকা নিতে পারতেন না? রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯/রাহাত/তারা