বিনোদন

‘শিল্পী সমিতির নির্বাচনে আবার উপর মহল কী?’

আগামী ২৫ অক্টোবর বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন। তবে এই নির্বাচন নিয়ে রয়েছে পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ। বর্তমান সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানের দিকে এই অভিযোগের তীর। এছাড়া মৌসুমী, ওমর সানি, রিয়াজের বিরুদ্ধেও আছে অপর পক্ষের অভিযোগ। গত দুই বছরের সফলতা ও ব্যর্থতা নিয়ে রাইজিংবিডির এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেছেন শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান।

রাহাত সাইফুল : গত পরশু শিল্পী সমিতির সাধারণ সভা হয়েছে। সেখানে সংগঠনের সহ-সভাপতি রিয়াজকে কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে- বিষয়টি কতটা সত্যি?

জায়েদ খান : স্বাগত বক্তব্যের পরই মৌসুমী ম্যাডামকে কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়। এরপর সানি ভাই কথা বলতে চেয়েছেন, তাকেও সুযোগ দেয়া হয়েছে। কথা বলতে চাইলে সবাইকেই কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়েছে। রিয়াজ ভাইকে কেন দিব না? সাধারণ সভায় সভাপতি প্রথমে কথা বলেন। এরপর সাধারণ সম্পাদক প্রতিবেদন পেশ করে। কোষাধ্যক্ষ আয়-ব্যয়ের হিসাব দেন। এর বাইরে কারো কিছু বলার থাকলে সভাপতির অনুমতি নিয়ে কথা বলতে হয়। আমরা সবাইকে কথা বলতে দিয়েছি। হঠাৎ করে কিছু না বলে রিয়াজ ভাই মঞ্চে উঠে যান। তখন খালেদা আক্তার কল্পনা কথা বলছিলেন। সভাপতি এ কারণে রিয়াজ ভাইকে বলেছিলেন: ‘রিয়াজ তুমি একটু পরে বলো’। এরপর তিনি মঞ্চে দাঁড়িয়ে এক-দুমিনিট কথা বলেই ঘোষণা দিলেন- ‘আমি স্থান ত্যাগ করছি’। ২৫৩জন শিল্পী নিয়ে আমাদের এজিএম হয়েছে। এর আগে কখনও এটা হয়নি।

রাহাত সাইফুল : আপনি বলেছেন, সমিতির কফিমেকার আপনি উপহার দিয়েছেন। কিন্তু হিসাবে এর বিল ধরা হয়েছে!

জায়েদ খান : হ্যাঁ, কফিমেকার আমি কিনে দিয়েছি। কিন্তু বারো মাস তো কফি পান করা হয়েছে। কফি কেনার বিল তো আমি দেইনি। ফলে সেই বিল ধরা হয়েছে। আমি শুধু মেশিনটা দিয়েছি।

রাহাত সাইফুল : আপনাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ- আপনারা ফোন করে, চাপ দিয়ে অনেককে নির্বাচন করতে দেননি। এর সত্যতা কতুটুকু?

জায়েদ খান : এটা মিথ্যে কথা। শিল্পীদের হুমকি দিয়ে বসানো যায় না। আমাদের প্যানেল দেখে হেরে যাওয়ার ভয়ে অনেকে নির্বাচনে আসেনি। অন্তত একজন শিল্পীকে দেখানো হোক যাকে আমরা হুমকি দিয়ে বসিয়ে দিয়েছি। এটা কেউ প্রমাণ করতে পারবে না।

রাহাত সাইফুল : বলা হচ্ছে- উপর মহল থেকে চাপসৃষ্টি করা হচ্ছে…

জায়েদ খান : শিল্পী সমিতির নির্বাচনে আবার উপর মহল কি? আমাদের উপর মহল হলো- সোহেল রানা, আমাদের উপর মহল- নায়ক ফারুক।

রাহাত সাইফুল : কথিত আছে, আপনার সঙ্গে প্রশাসনের লোকজনের সুসর্ম্পক আছে। আপনি তাদের ব্যবহার করছেন।

জায়েদ খান : এটা সাধারণ শিল্পীরা বলতে পারবেন। এখানে যারা প্রতিনিয়ত আসেন তারা কি কোন দিন দেখেছেন প্রশাসনের লোক নিয়ে মিটিং করছি?

রাহাত সাইফুল : নির্বাচনে প্রশাসনের কোন প্রভাব থাকবে কি?

জায়েদ খান : কেন থাকবে? আমাকে ভোট না দিলে মাথা নিচু করে চলে যাব। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সমাজের প্রতিছায়া। আমরা তাদের সঙ্গে ভালো সর্ম্পক রাখলে লাভ ছাড়া ক্ষতি নেই। আমাদের যে কোন শিল্পী বিপদে পরলে তাদের কাছে পাই। তারাও আমাদের সম্মানিত করেন। র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজির ভাই আমাদের সংগঠনে অনেক উপহার দিয়েছেন। সাবেক আইজিপি আমাদের সংগঠনে তিন লক্ষ টাকা দিয়েছেন। কিছু লোক আমার প্রতি জেলাস হয়ে এসব অপপ্রচার করছে।

রাহাত সাইফুল : গতবার নির্বাচনে কিছু অপ্রিতীকর ঘটনা ঘটেছে। এবার এর পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?

জায়েদ খান : এবারে শিল্পী সমিতির নির্বাচন কমিশনার হিসেবে কাঞ্চন ভাইকে রেখেছি। তিনি সর্বজন প্রিয়। এছাড়া শিল্পীদের আমরা অনুরোধ করেছি যাতে কেউ যেন এমন ঘটনা না ঘটায়। শিল্পী সমিতির নির্বাচন শুধু মালা বদলের নির্বাচন।

রাহাত সাইফুল : গতবার প্রথমবার নির্বাচনে অংশ নিয়েই সাধারণ সম্পাদক পদে জয়ী হলেন। এবারও একই পদে। এই জয় কীভাবে সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন?

জায়েদ খান : শিল্পীদের পাশা থাকা। এখানে এসে একটা বিষয় শিখেছি। পর্দার জনপ্রিয়তা আর শিল্পী সমিতির নেতা হওয়া ভিন্ন বিষয়। নির্বাচনে আসার আগে আমি দুই বছর কাজ করেছি। আমি পাইরেসি নিয়ে শিল্পীদের নিয়ে কাজ করেছি। তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। একজন নায়করাজ রাজ্জাকের ভোট, একজন কবরীর ভোট, একজন সোহেল রানার ভোট পাওয়া খুব দুষ্কর। কাজ করেছি বলেই ভোট দিয়েছেন।

রাহাত সাইফুল : সিনিয়র শিল্পীদের এফডিসি আসতে কম দেখা যায়। কিন্তু গত নির্বাচন থেকে তাদের এফডিসিমুখী হতে দেখা গিয়েছে। তাদের এফডিসিমুখী কীভাবে করলেন?

জায়েদ খান : আমরা এজন্য হুট করেই ফারুক ভাইয়ের বাসায় ফুল নিয়ে চলে গিয়েছি। সমিতিতে আসার জন্য অনুরোধ করেছি। একদিন সোহেল রানা ভাইয়ের বাসায় গিয়েছি। তাকেও এফডিসে আসার অনুরোধ করি। এভাবে সকল সিনিয়র শিল্পীদের বাসায় গিয়ে গিয়ে অনুরোধ করেছি। সবচেয়ে মজার বিষয় সোহেল রানা ভাইয়ের জন্মদিনে ফারুক ভাইকে তার বাসায় নিয়ে গিয়েছি। ৩২ বছর পরে সোহেল রানার ভা্ইয়ের বাসায় গিয়েছেন ফারুক ভাই। এই কমিটি আসার পর নয়জন সিনিয়র শিল্পীদের দিয়ে একটি উপদেষ্টা কমিটি করেছি। সিনিয়ররা আমাদের কাছে শুধু সম্মান চান। এটা আমরা দিতে পেরেছি।

রাহাত সাইফুল : যদি বলি- এটা আপনাদের নির্বাচনের কৌশল!

জায়েদ খান : এটা কৌশল নয়। এমন চিন্তা করলেও তাদের আমরা পাশে পাব না। তারা আমাদের কাজ দেখে খুশি। তাই আমাদের মাথার উপরে ছায়া হয়ে আছেন।

রাহাত সাইফুল : শিল্পীদের স্বার্থে উল্লেখযোগ্য কী কাজ করেছেন?

জায়েদ খান : সমিতির ফান্ডে টাকা এনেছি। এই আমলে শিল্পীদের সহায়তা করেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে অনুদানের ক্ষেত্রে শিল্পী সমিতির ভূমিকা ছিলো। এরই মধ্যে আমরা যাদের হারিয়েছি শিল্পী সমিতি নিজ খরচে তাদের লাশ এফডিসিতে এনেছে। শিল্পীদের বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। শিল্পীদের জন্য কল্যাণ ট্রাস্ট করা হয়েছে। যেটা মন্ত্রণালয়ে পাশ হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে। চলচ্চিত্র পুরস্কারের সময় মানীয় প্রধানমন্ত্রী সেটা ঘোষণা করবেন। আমরা গরু কোরবানী দিয়ে শিল্পীদের বাসায় বাসায় দিয়ে আসছি। অনিয়মে বাইরের শিল্পী আসা বন্ধ করেছি। এটাও শিল্পীদের স্বার্থে। শিল্পীদের বিপদে আমরা পাশে দাঁড়িয়েছি। আবার নির্বাচিত হলে সব সংগঠনের সঙ্গে কথা বলে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বসে সিনেমার সংখ্যা, সিনেমার হলের সংখ্যা বাড়ানো নিয়ে কথা বলবো।

রাহাত সাইফুল : আপনাদের ব্যর্থতা বলতে তাহলে কী ছিলো?

জায়েদ খান : ব্যর্থতা বলতে আমরা চাচ্ছিলাম শিল্পীদের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করা। যেটা দুই বছরে সম্ভব হয়নি। আমার মনে হয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এটা চাইলেই হয়ে যাবে। আমরা তাঁর সঙ্গে দেখা করে এটা চাইবো। শিল্পীরা কারো কাছে হাত পাততে চায় না। খুব অভিমানী তারা। শিল্পীরা কাজ চা্য়।

 

ঢাকা/রাহাত সাইফুল/তারা