বিনোদন

ইলিয়াস কাঞ্চনের অবমাননায় শিল্পীদের প্রতিবাদ

ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন। সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রী জাহানারার মৃত্যুর পর নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংগঠনের মাধ্যমে তিনি নিরাপদ সড়কের দাবিতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলেন। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে দেশে এখন প্রতি বছর পালিত হয়- নিরাপদ সড়ক দিবস। সংগঠনটি জাতিসংঘেও প্রশংসিত হয়েছে। তারই স্বীকৃতি হিসেবে তিনি একুশে পদক পেয়েছেন। তবে এই আন্দোলন নিয়ে ইলিয়াস কাঞ্চনকে বিভিন্ন সময় শ্রমিকদের রোষানলে পড়তে হয়েছে। 

নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে গত কয়েকদিন বাংলাদেশের বাস-ট্রাক শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করেছেন। ইলিয়াস কাঞ্চন বিভিন্ন টক-শো ও সংবাদমাধ্যমে এই আইনকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। ঠিক এই সময় ইন্টারনেট-ভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ইলিয়াস কাঞ্চনের ছবি সম্বলিত ব্যানার টাঙিয়ে কিংবা কুশপুত্তলিকা তৈরি করে জুতার মালা পরানো হয়েছে। শ্রমিকদের ঘৃণ্য এই কর্মকাণ্ড ইলিয়াস কাঞ্চনকে ভীষণ কষ্ট দিয়েছে। তিনি মানসিকভাবে আঘাত পেয়েছেন জানিয়ে বলেন, ‘যাদের জন্য আমি সবকিছু জলাঞ্জলি দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছি; কোনো কিছু পাওয়ার আশায় নয়। দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমার ক্যারিয়ারে সময় না দিয়ে নিরাপদ সড়কে সময় দিয়েছি। যখন দেখি এই বিষয়টি নিয়ে বাজে মন্তব্য হচ্ছে তখন খারাপ লাগে, কষ্ট লাগে। এছাড়া আর কিছু বলার নেই।’

এই প্রতিবেদক বিষয়টি নিয়ে বেশ ক’জন চলচ্চিত্র শিল্পীর সঙ্গে কথা বললে ‘নজরে ছবিটি পরেনি’ বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে অনেকেই আবার এ ঘটনায় ধিক্কার জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট পরিবহন শ্রমিকদের। রাইজিংবিডির সঙ্গে আলাপকালে চিত্রনায়ক রুবেল বলেন, ‘নিরাপদ সড়ক সবার দাবি। নিরাপদ সড়কের দাবি নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করে যাচ্ছেন ইলিয়াস কাঞ্চন সাহেব। তার এই কাজ দেশব্যাপী প্রশংসা পেয়েছে। তার সঙ্গে দেশের মানুষ রয়েছেন। তাকে নিয়ে যেসব মানুষ এই ধরনের পোস্টার তৈরি করেছেন তারা নোংরা মনের পরিচয় দিয়েছেন। আমি এই ঘটনার প্রতিবাদের পাশাপাশি তাদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’

শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান বলেন, ‘আমরা কাঞ্চন ভাইয়ের পাশে আছি। তিনি যেভাবে চাইবেন আমরা তার সঙ্গে আছি। যারা নোংরামি করছেন তারা দেশের ও সমাজের শত্রু। শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাই। কাঞ্চন ভাই র্দীঘদিন ধরে মানুষকে সচেতন করে আসছেন, এটা আমাদের গর্বের বিষয়। তার এই সুন্দর কাজের সঙ্গে শিল্পীরা থাকবেন এবং শিল্পী সমিতি আছে।’

ইমন বলেন, ‘কাঞ্চন ভাইকে নিয়ে যারা কটূক্তি করছেন আমি আমার জায়গা থেকে তাদের ধিক্কার জানাই। কারণ কাঞ্চন ভাই আমাদের সিনিয়র পার্সন। নিরাপদ সড়ক প্রত্যেকটা মানুষের অধিকার। কাঞ্চন ভাইয়ের স্ত্রী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। এরপর থেকে তিনি সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ভূমিকা রেখে আসছেন। আমাদের দেশে বড় গাড়িগুলো রাস্তায় নামলে প্রাইভেটকার, রিকশা- এগুলোকে কিছুই মনে করে না। আমি ফেসবুকে দেখেছি কাঞ্চন ভাইকে নিয়ে বাজে ছবি পোস্ট করা হচ্ছে। আমি মনে করি কাঞ্চন ভাইয়ের সঙ্গে আমাদেরও একাত্মতা প্রকাশ করা উচিত।’

সাইমন সাদিক বলেন, ‘নিরাপদ সড়কের আইন সংশোধন করার কথা বলছেন। কেন আইন সংশোধন করতে হবে। আমরা নিজেরা সংশোধন হলেইতো হয়। আমরা আইন অমান্য করব না। তা হলেতো সংশোধন করার দরকার নেই বলে মনে করছি। সারাদেশের মানুষ তাকে সমর্থন দিচ্ছেন, দিবেন। কারণ আমরা সবাই নিরাপদ সড়ক চাই। এটার বিরোধ করার কোনো কারণ নেই। শ্রমিকদের ফিরে আশা উচিত। যারা ভুল বুঝাচ্ছেন তাদের সনাক্ত করা উচিত।’

গত ১ নভেম্বর থেকে নতুন সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ বাস্তবায়ন হয়। এর পরেই নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে গত কয়েকদিন বাংলাদেশের বাস-ট্রাক শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করেছেন।

 

ঢাকা/রাহাত সাইফুল/তারা/শান্ত