শোবিজ অঙ্গনে অনেক তারকাশিল্পী রয়েছেন, যারা আকাশের তারার মতো দীর্ঘ সময় জ্বলজ্বল করেছেন। অসংখ্য দর্শকপ্রিয় কাজ উপহার দিয়ে প্রশংসিত হয়েছেন। পর্দায় তাদের দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতেন দর্শক।
কিন্তু দর্শকপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও শোবিজ থেকে দূরে এই শিল্পীরা। অনেকটা যেন মেঘে ঢাকা তারা। এমন তারকাদের নিয়ে সাজানো হয়েছে এই প্রতিবেদন।
রিচি সোলায়মান
১৯৮৯ সালে বিটিভিতে প্রচারিত ‘ইতি আমার বোন’ নাটকের মাধ্যমে অভিনয়ে আসেন রিচি সোলায়মান। তবে ১৯৯৮ সালে ‘বেলা ও বেলা’ নাটকের মাধ্যমে ক্যারিয়ার শুরু করেন এই অভিনেত্রী। তারপর অনেক জনপ্রিয় নাটক-টেলিফিল্ম উপহার দিয়েছেন। নৃত্যশিল্পী হিসেবেও তার খ্যাতি রয়েছে। ২০০৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টে কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তা রাসেকুর রহমান মালিকের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন রিচি। বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে গেলেও স্থায়ী হননি। নিয়মিত অভিনয় ও নাটক নির্মাণ করেছেন। তার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে বেশকিছু নাটক নির্মিত হয়েছে। ২০১৬ সালে হঠাৎ করেই যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান রিচি। এরপর থেকে সংসার নিয়েই বেশি ব্যস্ত। মাঝেমধ্যে দেশে ফিরে টুকটাক অভিনয় করলেও নিয়মিত নন রিচি।
শিলা আহমেদ
‘বহুব্রীহি’ নাটকে শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে অভিনয়ে নাম লেখান শিলা আহমেদ। ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকেও অভিনয় করেন তিনি। এ নাটকে মিমির ছোট বোন হিসেবে তিনি পরিচিত। এ ছাড়াও বিপাশা হায়াতের সঙ্গে ‘ওইজা বোর্ড’ নাটকে তার অভিনয় এখনো দর্শকের মনে দাগ কেটে আছে। নাটকের পাশাপাশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। হুমায়ূন আহমেদের ‘আগুনের পরশমণি’ সিনেমায় অসাধারণ অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। তার সর্বাধিক জনপ্রিয় কাজ হলো ‘আজ রবিবার’ (১৯৯৮) নাটকে কংকা চরিত্র। এরপর আর কোনো নাটকে দেখা যায়নি হুমায়ূন কন্যাকে। অজানা কারণে দীর্ঘ দিন ধরে শোবিজের বাইরে রয়েছেন এই গুণী অভিনেত্রী।
মোজেজা আশরাফ মোনালিসা
মাত্র দশ বছর বয়েসে নাচ ও মডেলিংয়ের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পা রাখেন মোজেজা আশরাফ মোনালিসা। ২০০০ সালে মিস ফটোজেনিক খেতাব লাভ করেন তিনি। তারিক আনাম খান নির্দেশিত ফেয়ার অ্যান্ড লাভলির বিজ্ঞাপনে মডেল হয়ে প্রথম সবার নজর কাড়েন মোনালিসা। তারপর মডেলিংয়ের পাশাপাশি টেলিভিশন নাটকেও অভিনয় শুরু করেন। অনেক দর্শকপ্রিয় নাটক-টেলিফিল্ম উপহার দিয়েছেন এই অভিনেত্রী। ২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী ফাইয়াজ শরীফ ফাসবির সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। দীর্ঘ তিন বছর পর দেশে ফিরে আবারো নাটকে অভিনয় করেন। তবে বিয়ের পর থেকেই শোবিজ অঙ্গনে মেঘে ঢাকা তারার মতো মোনালিসা। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন এই অভিনেত্রী।
ইপশিতা শবনম শ্রাবন্তী
দর্শকপ্রিয় অভিনেত্রী ইপশিতা শবনম শ্রাবন্তী। মডেলিং, অভিনয় সবখানেই দ্যুতি ছড়িয়েছেন তিনি। শিমুলের সঙ্গে শ্রাবন্তীর হেনোলাক্সের বিজ্ঞাপনের কথা আজও মানুষ ভুলেনি। ‘রং নাম্বার’ এবং ‘ব্যাচেলর’ সিনেমার মাধ্যমেও সাড়া ফেলেছিলেন এই অভিনেত্রী। ক্যারিয়ারের তুঙ্গে থাকাবস্থায় কণ্ঠশিল্পী পার্থ বড়ুয়ার সঙ্গে প্রেমে জড়ান শ্রাবন্তী। সেই সম্পর্ক একসময় বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়। ভালোই চলছিল তাদের সংসার। হঠাৎ এ পথচলায় ছন্দপতন ঘটে। আলাদা হয়ে যান তারা। এই বিচ্ছেদের পর শোবিজ থেকে দূরে সরে যান শ্রাবন্তী।
দীর্ঘদিন একা বসবাস করে ২০১০ সালের নভেম্বরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক খোরশেদ আলমের সঙ্গে সংসার পাতেন শ্রাবন্তী। এরপর স্বামীর সঙ্গে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। এ সংসারে শ্রাবন্তীর দুটি কন্যাসন্তান রয়েছে। তবে গত বছরের ৭ মে তাকে তালাকের নোটিশ পাঠান তার স্বামী মোহাম্মদ খোরশেদ আলম। তালাকের নোটিশ পেয়ে দেশে ফিরেন শ্রাবন্তী। ১২৪ দিন বাংলাদেশে থেকে সন্তানদের নিয়ে আবারো যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তিনি। এর মধ্যে কখনো অভিনয়ে দেখা যায়নি এই অভিনেত্রীকে।
আফসান আরা বিন্দু
২০০৬ সালে লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শোবিজে পা রাখেন আফসান আরা বিন্দু। এরপর নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ‘দারুচিনি দ্বীপ’ সিনেমায় অভিনয় করে রাতারাতি জনপ্রিয়তা পান এই অভিনেত্রী। ঢালিউড কিং শাকিব খানের সঙ্গে বেশকিছু সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি। সিনেমার পাশাপাশি বিন্দু ব্যস্ত ছিলেন টেলিভিশন পর্দায়ও। ২০১৪ সালে ব্যবসায়ী আসিফ সালাহউদ্দিন মালিকের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। তখন ক্যারিয়ারের সোনালি সময় থাকলেও বিন্দু অভিনয় না করার ঘোষণা দেন। তারপর থেকে মিডিয়ার অন্তরালে হারিয়ে যান এই অভিনেত্রী।
শায়না আমিন
দশম শ্রেণিতে পড়াকালীন একটি বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়ার মধ্য দিয়ে শোবিজে পা রাখেন শায়না আমিন। পরের বছর ‘ক্রস কানেকশন’ নাটকের মধ্য দিয়ে অভিনয়ে নাম লেখান তিনি। তারপর অসংখ্য নাটক-টেলিফিল্ম, বিজ্ঞাপনে কাজ করেছেন। অভিনয় করেছেন তিনটি চলচ্চিত্রে। ২০১১ সালে ‘এক জীবন’ শিরোনামে একটি গানে মডেল হয়ে তুমুল আলোচনায় উঠে আসেন শায়না। ক্যারিয়ারের সেরা সময়ে অর্থাৎ ২০১১ সালে আসাদুজ্জামান সেতুকে বিয়ে করেন শায়না। তারপর হঠাৎ করে মিডিয়া থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন তিনি। পাড়ি জমান যুক্তরাজ্যে। কিছুদিন পর জানা যায়, মাসুদ রানা নামে এক প্রবাসীর সঙ্গে দ্বিতীয় সংসার পেতেছেন তিনি। এ সংসারে তার দুটি সন্তান রয়েছে। দীর্ঘদিন পর চলতি মাসে দেশে ফিরেছেন শায়না। কিন্তু শোবিজে আর ফেরেননি এই অভিনেত্রী।
নাফিজা জাহান
২০০৬ সালে লাক্স প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শোবিজ অঙ্গনে পা রাখেন নাফিজা জাহান। এতে তার অবস্থান ছিল সপ্তম। ২০০৮ সালে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘৪২০’ নাটকে বিজলী চরিত্রে অভিনয় করে আলোচনায় আসেন এই সুহাসিনী। তারপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০১২ সাল পর্যন্ত নাটক-টেলিফিল্মে নিয়মিত অভিনয় করেছেন নাফিজা। ২০১৩ সালের মাঝামাঝি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। ২০১৫ সালে সংগীতশিল্পী এস আই টুটুল ও অভিনেত্রী তানিয়া আহমেদের ভাগ্নে দীপকে বিয়ে করেন তিনি। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন নাফিজা। দীর্ঘ ৫ বছর পর গত বছরের শেষের দিকে বাংলাদেশে এসেছিলেন তিনি। তখন একটি নাটকে অভিনয় করেন। এরপর আবারো যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যান এই অভিনেত্রী।
প্রিয়াংকা অগ্নিলা ইকবাল
অগ্নিলার বয়স যখন মাত্র ছয় মাস, তখন তিনি প্রথম মডেলিং করেন। প্রথম টেলিভিশন নাটকে অভিনয় ১০ বছর বয়সে। তারপর ২০০১ সালে গিয়াসউদ্দিন সেলিমের ‘বিপ্রতীপ’ নাটকে অভিনয় করে ক্যারিয়ারে নতুন অবয়বে ফিরেন। এরও অনেক পরে গ্রামীণ ফোনের বন্ধু প্যাকেজের বিজ্ঞাপনে তার ঝলমলে উপস্থিতির কথা এখনো ভুলেননি দর্শক। তারপর অনেক জনপ্রিয় নাটক-টেলিফিল্ম উপহার দিয়েছেন অগ্নিলা। ২০০২ সালে সপরিবারে কানাডা চলে যান তিনি। সেখান থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। বর্তমানে কানাডায় বসবাস করছেন। ২০১৭ সালে ‘তোমার আমার প্রেম’ নাটকে সর্বশেষ দেখা যায় এই অভিনেত্রীকে। ঢাকা/শান্ত