বিনোদন

‘নারীরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে’

‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’

নারীর সমান অবদানের কথা স্বীকার করেছেন আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। নারীর কর্মের সমান স্বীকৃতি তিনি কবিতায় উল্লেখ করেছেন। কিন্তু আমাদের সমাজ আদৌ কি সেই স্বীকৃতি পুরোপুরি দিয়েছে?

বছর ঘুরে ফিরে এসেছে নারী দিবস। বিশেষ এই দিনটির পেছনে রয়েছে নারীদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস। অন্য সাধারণ নারীর মতো বর্তমানে শোবিজ অঙ্গনে নারীর স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা কতটুকু? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে কথা হয় দুই প্রজন্মের দু’জন অভিনেতার সঙ্গে। একজন বরেণ্য অভিনেতা আবুল হায়াত, অন্যজন চঞ্চল চৌধুরী। পুরুষশাসিত বাঙালি সমাজ ব্যবস্থায় নারীদের অবস্থান নিয়ে কথা বলেছেন এই দুই তারকা শিল্পী।

ষাটের দশকের শেষের দিকে শোবিজে পা রাখেন আবুল হায়াত। এখনো এ যাত্রা অব্যাহত রয়েছে। দীর্ঘ অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে এ অভিনেতা বলেন, ‘আগের চেয়ে নারীরা এখন অনেক স্বাধীন ও নিরাপদ। স্বাধীনতা, পড়ালেখা সব দিক থেকেই নারীর অবস্থান এখন অনেক ভালো। বিশেষ করে পড়াশোনার ক্ষেত্রে নারীরা এখন অনেক এগিয়েছে। ভালো করছে। তারা পরিশ্রম করে সংসার চালাচ্ছে। প্রান্তিক পরিবারের নারীরাও এখন আর আগের মতো স্বামীর কঠিন শাসনের মধ্যে থাকে না। কারণ তারাও এখন রোজগার করছে। সেদিক থেকে স্বামীরাও খুশি। এজন্য বলব, নারীরা আগের চেয়ে অনেক ভালো আছে।’

নারীর পরিবর্তন ইতিবাচকভাবে দেখছেন আবুল হায়াত। তবে সমাজে কিছু অসঙ্গতি তৈরি হয়েছে। যার শিকার হচ্ছেন নারী। এই অভিনেতা বলেন, ‘সমাজের মানুষের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা এসেছে। মানুষের মধ্যে লোভ, হিংসা বেড়ে গেছে। অনেক সময় নারীরা এসবের শিকার হচ্ছে। আমরা পুরুষরা যদি নারীদের বিষয়ে আরো অগ্রণী ভূমিকা পালন করি, তবে নারীরা সব অঙ্গনে আরো বেশি স্বাধীন হবে বলে বিশ্বাস করি।’

বিশেষ দিবসকে কেন্দ্র করে কাজ করার প্রবণতা খারাপ বলে মনে করেন চঞ্চল চৌধুরী। যেমন: ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর এলেই দেশপ্রেম দেখানো অথবা নারী দিবসে এসেছে, এদিন নারীকে শ্রদ্ধা জানাতে হবে— ব্যাপারটা তা নয় বলে জানান তিনি। এই অভিনেতার ভাষায়, ‘এই শ্রদ্ধাবোধের জায়গা পারিবারিকভাবে তৈরি হতে হবে। জীবনযাপনের সব ক্ষেত্রে নারীর প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। যেকোনো দিবসকে সম্মান করি। কিন্তু দেশপ্রেম বলেন, আর নারীর প্রতি সম্মান— সেটা আমার ৩৬৫ দিনই থাকে। বিশেষ কোনো দিনের জন্য আমি এসব উদযাপন করি না। আজ আমরা যে প্রতিজ্ঞা করছি কিংবা বড় বড় কথা বলছি, তা যেন প্রতিদিনের জীবনে মেনে চলি।’

শোবিজ অঙ্গনে কাজের ক্ষেত্রে নারীরা কতটা স্বাধীন? এই প্রশ্নের উত্তরে চঞ্চল চৌধুরী বলেন, ‘এই অঙ্গনে নারীদের প্রতিবন্ধকতা আগের চেয়ে কমেছে। মানুষ কিছু কিছু জায়গায় সভ্য হচ্ছে, আবার কিছু কিছু জায়গায় পেছনের দিকে যাচ্ছে। তারপরও মনে করি, এই অঙ্গনে নারীর স্বাধীনতা রয়েছে। তবে আরো বেশি স্বাধীনতা কামনা করি।’

নারী সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এ অভিনেতা বলেন, ‘নারীর অধিকার নিয়ে আমরা বড় বড় বুলি ছাড়ছি কিন্তু নারীরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে। কারণে-অকারণে নারীরা যেন নিজেদের পুরুষের কাছে বিকিয়ে না দেন। এমনটাও কিন্তু চোখের সামনে ঘটতে দেখা যায়! এজন্য বলছি, নারীদেরও সেই জায়গায় শক্ত থাকতে হবে। এটা তাদের প্রতি আমার আহ্বান।’

দেশের প্রধানমন্ত্রী নারী। সংসদের স্পিকার নারী। নারীদের কল্যাণে প্রধানমন্ত্রী পদক্ষেপ নিয়েছেন। সর্বক্ষেত্রে নারীর সমান অধিকারের জন্য লড়াই করছেন। নারীরা যাতে এগিয়ে আসতে পারেন সেজন্য সুযোগ করে দিচ্ছেন। আগের তুলনায় নারীরা অনেক এগিয়েছেন, অনেক স্বাধীন। ভবিষ্যতে নারী তার নিজ যোগ্যতায় সমান অধিকার নিয়ে বাঁচুক এমনটাই প্রত্যাশা করেন এই অভিনেতা।

**

** ‘প্রজন্ম হোক সমতার, সকল নারীর অধিকার’

ঢাকা/শান্ত/মারুফ/নাসিম