বিনোদন

‘আমরা কোথায় যাব, কার কাছে যাব!’

বিশ্বজুড়ে করোনার আধিপত্য। আতঙ্কিত মানুষ। এ অবস্থায় স্বেচ্ছায় হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন দুই পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও নির্মাতা মেহের আফরোজ শাওন।

সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর করায় দেশে ফিরেই এই সিদ্ধান্ত নেন তিনি। আজ সোমবার তার হোম কোয়ারেন্টাইনের অষ্টম দিন চলছে।

এদিকে দেশেও করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এরই মধ্যে বিশ্বের অনেক দেশ শাট ডাউন করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশে লক ডাউন অবস্থা তৈরির পরামর্শ দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর ফেসবুকে ‘আমরা কোথায় যাব, কার কাছে যাব!’ শিরোনামে খোলা চিঠি লেখেছেন শাওন। পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো—   

‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমার স্বশ্রদ্ধ সালাম নিবেন। আপনি কেমন আছেন এই প্রশ্ন আমি করব না। কারণ আমরা জানি আপনি ভালো নেই। সারা বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাস সংক্রমণের যে ভয়াবহ তাণ্ডব তা আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিতেও প্রবেশ করেছে। দেশের মানুষ এক অজানা শক্তির আক্রমণের আতঙ্কে দিন পার করছে। প্রিয় দেশবাসীর এমন বিভীষিকাময় দিনযাপনে আপনার মন কতখানি বিচলিত তা আমরা কিছুটা অনুভব করতে পারি।

আপনি নিশ্চয় সব বিষয়েই অবগত তারপরও বলছি, মিরপুর টোলারবাগ এলাকায় যে ২ জন বয়োজ্যেষ্ঠ ভদ্রলোক করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন তাদের পরিবারের কোনো সদস্যই কিন্তু সম্প্রতি বিদেশ ভ্রমণ করেননি! তাদের একজন স্থানীয় মসজিদে নামাজ পড়তে যেতেন। আর দ্বিতীয়জন সেই মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি ছিলেন। ধারণা করা যাচ্ছে যে, ওই মসজিদে করোনা আক্রান্ত কারো উপস্থিতির কারণে অন্যদের শরীরেও তা ছড়িয়েছে। মিরপুর টোলারবাগে মৃত প্রথম মানুষটিকে সেবা দানকারী ৩০/৩২ বছর বয়েসি ডাক্তারটিও এখন করোনা পজিটিভ!

তারমানে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বা সামাজিক সংক্রমণ শুরু হয়ে গেছে! আমরা বুঝতেও পারছি না কাদের আলাদা করা উচিত কিংবা কাদের থেকে দূরে থাকা উচিত! এখন আর ফিরে আসা প্রবাসীদের কেবল করোনা ভাইরাসের বাহক ভাবলে চলবে না। আমাদের আশেপাশে চলাফেরা করা সাধারণ যে কেউই হতে পারে ভয়ঙ্কর এই ভাইরাসের সম্ভাব্য বাহক!

এভাবে চলতে থাকলে আগামী এক-দুই সপ্তাহে করোনার বিস্তার কি রকম ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে তা অন্য অনেকের চেয়ে নিশ্চয় আপনি ভালো বুঝতে পারেন। পরিস্থিতি হাতের নাগালের বাইরে যাবার আগেই দেশের সর্বস্তরের জনগণকে আপনি গৃহবন্দি থাকবার কড়া নির্দেশ দিতে পারেন কি? ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ গৃহবন্দি থাকবার আদেশ দিলে প্রথম ২ সপ্তাহের মধ্যেই করোনা সংক্রমিত মানুষগুলো সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। ৩য় সপ্তাহের মধ্যে শুধু সংক্রামিত রোগীদের আলাদা করে ফেলে চিকিৎসা চালিয়ে গেলে নতুন কারো সংক্রমণের সম্ভাবনা একেবারে কমে যাবে।

জানি ৪ সপ্তাহ অফিস কলকারখানা বন্ধ করে গৃহবন্দি থাকলে দেশের অর্থনীতির চাকা কিছুটা থেমে যাবে। নিম্ন আয়ের মানুষগুলোর ৩ বেলা খাবার যোগানোই অসম্ভব হয়ে পড়বে। এ-ও জানি যে মানুষ বাঁচলে তবেই না দেশ বাঁচবে, বাঁচবে অর্থনীতি। দেশের বড় বড় ব্যবসায়ী মহলের সহযোগিতায় নিম্ন আয়ের মানুষগুলোর একমাসের খাবার যোগান দেয়া কঠিন হলেও অসম্ভব কিছু না।

প্রিয় বঙ্গবন্ধুকন্যা, দেশের এই ক্রান্তিকালে একমাত্র আপনিই পারেন আমাদের ভরসা দিতে। আপনি শক্তভাবে হাল ধরলে মনুষ্যসৃষ্ট কোনো অপশক্তিই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাকে পরাজিত করতে পারবে না।’ ঢাকা/শান্ত