বিনোদন

মেকআপ ম্যানের বর্ণহীন জীবন: ঠাঁই হলো বৃদ্ধাশ্রমে

কিশোর বয়সে অন্যকে সাজানোর কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন রূপসজ্জা শিল্পী আবদুর রহমান। সত্তর বছর বয়সে এসেও এই কাজ করেছেন তিনি।

তার হাতের ছোঁয়ায় বদলে গেছেন অনেক তারকা। অন্যকে সাজাতে গিয়ে নিজের জীবনটাই সাজাতে ভুলে গিয়েছিলেন এই শিল্পী। কাজকে ভালোবেসে এতটাই ব্যস্ত ছিলেন যে, সাজানো হয়নি তার নিজের সংসারও।

১৯৬৫ সালে ‘মিলান’ শিরোনামের সিনেমার মাধ্যমে প্রথম চলচ্চিত্রে রূপসজ্জা শিল্পী হিসেবে কাজ শুরু করেন আবদুর রহমান। যদিও সিনেমাটি আলোর মুখ দেখিনি। এরপর অসংখ্য জনপ্রিয় সিনেমায় তিনি শিল্পীদের রূপসজ্জার কাজ করেছেন। এ পর্যন্ত কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তার হাতে উঠেছে অসংখ্য পুরস্কার। এর মধ্যে দুইবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি।

২০১০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মনের মানুষ’ সিনেমার জন্য শ্রেষ্ঠ মেকআপ ম্যান হিসেবে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। ২০১৪ সালে মাসুদ পথিক পরিচালিত সরকারি অনুদানে নির্মিত ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’ সিনেমার জন্য দ্বিতীয়বারের মতো শ্রেষ্ঠ মেকআপ ম্যান হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি। সর্বশেষ ‘ভুবন মাঝির নাও’ শিরোনামের সিনেমায় মেকআপ ম্যানের কাজ করেন তিনি।

গুরুতর অসুস্থ হয়ে দীর্ঘদিন বন্ধু আলীর বাসায় নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করেন আবদুর রহমান। তখন স্ট্রোক করলে রাজধানীর কমফোর্ট হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। প্রথমে কয়েকজন বন্ধু কিছু টাকা দিয়ে চিকিৎসা করান। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী ৫ লাখ টাকা আর্থিক সহযোগিতা করেন তাকে। এভাবেই কয়েক বছর পার করেন তিনি। তারপর শরীর এতটাই দুর্বল হয়ে পড়ে যে, নিজের কর্মক্ষমতাই হারিয়ে ফেলেন। বেকার অক্ষম হয়ে কতদিন অন্যের বাসায় থাকবেন! তাই তার শেষ ঠিকানা হলো বৃদ্ধাশ্রমে।

তিনি এখন সাভারের মিল্টন হোম কেয়ারে আছেন। করোনাকালে কেমন আছেন জানতে চাইলে রাইজিংবিডিকে এসব জানান আবদুর রহমান। এ শিল্পী বলেন, ‘আমি ভালো নেই, শরীরটাও ভালো না। অনেক দুর্বল। ঠিকভাবে কথা বলতে সমস্যা হয়। আমার কেউ নেই। অন্যের উপর বোঝা হয়ে কতদিন থাকবো। অনেক দিনতো ছিলাম। তাই গত মাসে এই বৃদ্ধাশ্রমে আসি।’

করোনার এই দুর্যোগ চলচ্চিত্রাঙ্গনের কেউ খোঁজ-খবর নিয়েছেন কি না? এমন প্রশ্ন শুনে কিছুক্ষণ নীরব থাকেন আবদুর রহমান। তারপর আবেগাপ্লুত হয়ে জানান, কেউ তার খোঁজ নেয়নি। এমনকি ফোনও করে না। পরিবার পরিজনহীন এই রূপসজ্জাকার কত শিল্পীকে সাজিয়েছেন। তাদের অনেকেই আজ সুপারস্টার। দেশ-বিদেশে খ্যাতি অর্জন করেছেন তারা। এক সময় চলচ্চিত্রের মানুষদের পরিবার মনে করতেন। কিন্তু মেকআপ ম্যানের এই আকুতি শোনার আজ কেউ নেই। আবদুর রহমানের মতো আরো অনেকে নীরবে চোখের জল ফেলছেন। ঢাকা/রাহাত সাইফুল/শান্ত