বিনোদন

স্মৃতিতে অমলিন পপ-গুরু আজম খান

বাংলাদেশের পপ ও ব্যান্ড সংগী‌তের 'গুরু' আজম খানের নবম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ক্যানসা‌রে আক্রান্ত হয়ে ২০১১ সালের এই দিনে তি‌নি সু‌রের বাঁধন ছিন্ন ক‌রে পর‌লো‌কে পা‌ড়ি জমান। দে‌শের অত্যন্ত জন‌প্রিয় এই সংগীতশিল্পীর প্রয়া‌ণে ভক্তরা হা‌রি‌য়ে‌ছে ব্যান্ড সংগীত জগ‌তের জন‌প্রিয় ধারা পপ এবং সফট রক মে‌লো‌ডি মিউ‌জিক।   সময়ের ঘূর্ণায়মান চাকায় পপগুরুর না থাকাটা বেদনাময় অতীত। তারপরও হয়‌তো আজম খা‌নের মৃত্যু‌দিন নিয়ে বি‌শেষ কো‌নো আয়োজন চো‌খে পড়‌বে না। ত‌বে ভক্তরা তা‌কে স্মরণ ক‌রে ঠিকই গাই‌বেন, 'ও‌রে সা‌লেকা ও‌রে মা‌লেকা', 'রেল লাই‌নের ওই ব‌স্তি‌তে' গানগু‌লো।

আজম খানের জন্ম ১৯৫০ সালের ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ঢাকার আজিমপুর কলোনির ১০নং সরকারি কোয়ার্টারে। তার পুরো নাম মাহবুবুল হক খান। বাবা আফতাবউদ্দিন আহমেদ, মা জোবেদা খাতুন।

১৯৫৬ সাল থেকে কমলাপুরে বসবাস শুরু করেন আজম খানের পরিবার।  একই বছর কমলাপুরের প্রভেনশিয়াল স্কুলে প্রাইমারিতে ভর্তি হন। ১৯৬৫ সালে সিদ্ধেশ্বরী হাইস্কুলে বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হন। এই স্কুল থেকে ১৯৬৮ সালে এসএসসি পাস করেন। ১৯৭০ সালে টিঅ্যান্ডটি কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে এইচএসসি উত্তীর্ণ হন।

মাত্র ২১ বছর বয়সে ঢাকা উত্তরের সেকশন কমাণ্ডার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এই পপতারকা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর গান নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আখন্দ ভ্রাতৃদ্বয় (লাকী আখন্দ ও হ্যাপি আখন্দ), আরো কয়েকজনকে নিয়ে গড়ে তোলেন ব্যান্ডদল ‘উচ্চারণ’।

১৯৭২ সালে ‘এতো সুন্দর দুনিয়ায় কিছুই রবে না রে’ এবং ‘চার কালেমা সাক্ষী দেবে’ গান দুটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয় বিটিভিতে। ব্যাপক প্রশংসা আর তুমুল জনপ্রিয়তা এনে দেয় এ দুটো গান। দেশজুড়ে পরিচিতি পেয়ে যায় তাদের ব্যান্ড।

১৯৮১ সালে ১৪ জানুয়ারি, সাহেদা বেগমের সঙ্গে বিয়ে হয় আজম খানের। তখন তার বয়স ছিল ৩১ বছর। সহধর্মিণী মারা যাওয়ার পর থেকে একাকী জীবন ‌বে‌ছে নেন। সুর হ‌য়ে ও‌ঠে জীব‌নের ধ্যানজ্ঞান। সেই সু‌রেই বেঁ‌চে আছেন তি‌নি। ভ‌ক্তের হৃদ‌য়ে বেঁ‌চে থাক‌বেন চিরকাল।

আজম খান ১৯৭৪-১৯৭৫ সালের দিকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে ‘রেললাইনের ওই বস্তিতে’ শিরোনামে গান গেয়ে হইচই ফেলে দেন। তার জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘আমি যারে চাইরে’, ‘রেল লাইনের ওই বস্তিতে’, ‘ওরে সালেকা ওরে মালেকা’, ‘আলাল ও দুলাল’, ‘একসিডেন্ট’, ‘অনামিকা’, ‘অভিমানী’, ‘আসি আসি বলে’, ‘হাইকোর্টের মাজারে’, ‘পাপড়ি’, ‘বাধা দিও না’, ‘যে মেয়ে চোখে দেখে না’ ইত্যাদি। অভিনয়ে আজম খান

১৯৮৬ সালে ‘কালা বাউল’ শিরোনামের একটি নাটকে কালা বাউলের চরিত্রে এবং ২০০৩ সালে শাহীন-সুমন পরিচালিত ‘গডফাদার’ চলচ্চিত্রে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন। ২০০৩ সালে ক্রাউন এনার্জি ড্রিংকসের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রথম বিজ্ঞাপনচিত্রের মডেল হন। এরপর ২০০৫ ও ২০০৮ সালে বাংলালিংক এবং ২০১০ সালে কোবরা ড্রিংকসের বিজ্ঞাপনের মডেল হন।

খেলাধুলায় ব্যাপক আগ্রহ ছিলো আজম খানের। ক্রিকেটার হিসেবে বেশ পরিচিত ছিলেন এ পপ তারকা। গোপীবাগ ফ্রেন্ডস ক্লাবের হয়ে ১৯৯১ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি প্রথম বিভাগ ক্রিকেট খেলেছেন। ৯ বছরে অনেকগুলো ক্রিকেট ম্যাচে নিজের খেলোয়াড় প্রতিভার প্রকাশ ঘটিয়েছেন।

অসাধারণ কণ্ঠের এই সংগীত জাদুকরের জীবন থেমে যায় ৬১ বছর বয়সে ২০১১ সালে ৫ জুন। আজম খান নেই, আছে তার তুমুল জনপ্রিয় সব গান। গানের মধ্য দিয়েই পপসম্রাট অমর হয়ে আছেন এবং থাকবেন আজীবন।

 

ঢাকা/রাহাত সাইফুল/তারা