বিনোদন

অনেক লোভনীয় প্রস্তাব পেয়েছি: বিপাশা

বলিউড অভিনেত্রী বিপাশা বসু। অভিনয় ও আকষর্ণীয় চেহারার কারণে ভক্তদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। কিন্তু এই অভিনেত্রী জানিয়েছেন, গায়ের রঙের জন্য ছোটবেলা থেকেই কথা শুনতে হয়েছে তাকে।

সম্প্রতি একটি স্বনামধন্য রঙ ফর্সাকারী ক্রিমের প্রতিষ্ঠান তাদের ব্র্যান্ডের নাম পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সৌন্দর্যের সংজ্ঞা মানুষকে ভিন্নভাবে তুলে ধরতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিষয়টিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিপাশা।

ফটো শেয়ারিং সাইট ইনস্টাগ্রাসে এই বিষয়ে তিনি লেখেন, “বাড়ন্ত বয়স থেকেই আমি সবসময়ই শুনতাম, ‘বোনি সোনির চেয়ে কম উজ্জ্বল। সে একটু ডাস্কি না?’ এমনকি আমার মাও ছিলেন ডাস্কি সুন্দর এবং আমি অনেকটাই তার মতো দেখতে। যখন ছোট ছিলাম কখনো বুঝতাম না, আমার দূর সম্পর্কের আত্মীয়রা সবসময় কেন এই বিষয়ে আলোচনা করতেন।

এরপর ১৫/১৬ বছর বয়সে মডেলিং শুরু করলাম এবং সুপার মডেল প্রতিযোগিতায় জিতলাম। প্রত্যেক সংবাদপত্রে লেখা হলো, কলকাতার ডাস্কি মেয়েটি জিতেছে। আমি আবারো অবাক হলাম, ডাস্কি কেন আমার প্রথম বিশেষণ হবে?

এরপর যখন নিউইয়র্ক ও প্যারিসে মডেলিংয়ের কাজে গেলাম, বুঝতে পারলাম আমার গায়ের রঙ তাদের কাছে একটু অন্যরকম মনে হয়েছে এবং এজন্য আমি কাজ ও মনোযোগ দুটোই পেয়েছি। এটি আমার আরো একটি আবিষ্কার।

যখন ভারতে ফিরলাম আমাকে সিনেমার প্রস্তাব দেওয়া হলো। অবশেষে আমার প্রথম সিনেমায় কাজ করলাম, একজন অপরিচিত হয়েও বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে। আমাকে হঠাৎ করেই সাদরে গ্রহণ করা হলো এবং ভালোবাসা পেলাম। কিন্তু আমার সঙ্গে বিশেষণটি থেকেই গেলো, যেটি আমি ধীরে ধীরে পছন্দ করতে শুরু করেছিলাম। ডাস্কি মেয়েটি প্রথম সিনেমাতেই দর্শকদের মুগ্ধ করল।

আমার কাজ নিয়ে যত প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে, ডাস্কি গায়ের রঙ প্রধান আলোচনা ছিল। যদিও এতে আমার আবেদন বেড়ে গিয়েছিল। আর বলিউডে আবেদনময়ী হওয়ায় অন্য স্থানেও আমাকে গ্রহণ করা হলো। আমি বিষয়টি কখনোই বুঝতে পারিনি। আমার মতে, আবেদনময়ী হওয়ার বিষয়টি একজনের ব্যক্তিত্ব, এটি শুধু গায়ের রঙের ওপর নির্ভর করে না। কেন আমার গায়ের রঙ সেই সময়ের অন্য নায়িকাদের থেকে আমাকে আলাদা করেছিল। কিন্তু এটিই ছিল একমাত্র পথ। আমি কখনোই ভিন্ন কিছু দেখতাম না কিন্তু মানুষ দেখত। সুন্দরের মানেই ছিল, একজন অভিনেত্রী দেখতে ও তার আচরণ কেমন। কিন্তু এই দিক থেকে আমি আলাদা ছিলাম। যা পছন্দ করতাম তা করেছি।

ছোটবেলা থেকেই নিজেকে নিয়ে আত্মবিশ্বাসী ও গর্বিত ছিলাম। গায়ের রঙ দিয়ে আমাকে মাপা যাবে না। যদিও আমার গায়ের রঙ পছন্দ করি কিন্তু চাই না এটি কোনো পার্থক্য তৈরি করুক।

গত ১৮ বছরে ত্বকের ক্রিমের বিজ্ঞাপনের জন্য অনেক টাকার প্রস্তাব পেয়েছি, কিছু লোভনীয় ছিল। কিন্তু আমার নীতিতে অটল থেকেছি।

এগুলো বন্ধ হওয়া উচিৎ। আমরা ভুল জিনিসের স্বপ্ন দেখাচ্ছি যে, ফর্সা হলেই আকর্ষণীয় এবং সুন্দর, যেখানে আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষের গায়ের রঙ বাদামী। এই ধারণা আমাদের রন্ধ্রে মিশে রয়েছে। এই ব্র্যান্ডের পক্ষ থেকে একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অন্য ব্র্যান্ডেরও এই পথ অনুসরণ করা উচিত।"

 

ঢাকা/মারুফ