বিনোদন

চলচ্চিত্রে ‘বয়কট’ কার স্বার্থে

‘দাদা আমি সাতে-পাঁচে থাকি না/ যে যা করে দেখে যাই, সুবিধাটা নিয়ে যাই-/ ধুম করে প্রকাশ্যে আসি না’- পশ্চিম বাংলার জনপ্রিয় অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষের লেখা এই কবিতার সঙ্গে দেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনের অনেকের চরিত্রের মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। যারা সুযোগ পেলেই সুবিধা আদায় করে নেন। অথচ কোনো কিছুতেই দেখা মেলে না তাদের। কোনো বিষয়েই রা করেন না। বলা যায়- ঘাপটি মেরে থাকেন। 

দেশে নতুন সিনেমা তৈরি হোক আর না হোক, চলচ্চিত্র অঙ্গনের লোকেরা প্রায়ই গর্জে ওঠেন। কখনও স্বার্থ সংরক্ষণের দাবিতে, আবার কখনও নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করতে। বয়কট, নিষিদ্ধ, অবাঞ্ছিত, বন্ধ করে দেওয়া- এসব নেতিবাচক শব্দ বারবার উচ্চারিত হয় চলচ্চিত্র পাড়ায়। কখনও শোনা যায় না- কাজ করতে দাও, হল খুলে দাও, সিনেপ্লেক্স চাই। এসব ইতিবাচক শব্দগুলো নিয়ে চায়ের কাপে ঝড় ওঠে। কিন্তু আন্দোলন হয় না। আন্দোলন হয় নেতিবাচক বিষয় নিয়ে। এতে কেউ হচ্ছেন বলির পাঠা। আবার কারো ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধার পায়। অথচ চলচ্চিত্রের ভাগ্য নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই!

করোনা মহামারিতে টালমাটাল বিশ্ব। দীর্ঘ পাঁচমাস সিনেমার সব কার্যক্রম বন্ধ। সিনেমা হলে তালা ঝুলছে। দেশের সবকিছু এখন স্বাভাবিকভাবে চলছে। অথচ হল খোলা নিয়ে শুধু চিঠি চালাচালি হচ্ছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণে চিরতরে সিনেমা হল বন্ধ করে দিয়েছেন অনেকেই। এ নিয়ে প্রতিবাদ হতে পারতো। চলচ্চিত্রের এই করুণ সময়ে মিশা সওদাগর-জায়েদ খানকে বয়কটের ঘোষণা দিয়েছেন চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতি, পরিচালক সমিতিসহ ১৮ সংগঠন।  এ নিয়ে চলচ্চিত্রের ১৮টি সংগঠন ও চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি মুখোমুখী অবস্থান নিয়েছে। দুই পক্ষ থেকেই সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। দুই পক্ষ থেকেই দেওয়া হচ্ছে হুঙ্কার। এতে বিপাকে পড়েছেন চলচ্চিত্রের কিছু শিল্পী ও কলাকুশলী। দুই পক্ষ থেকেই সাধারণ শিল্পী ও কলাকুশলীদের ফোন করে সঙ্গে থাকার কথা বলা হচ্ছে। এসব কারণে একটি পক্ষ কারো সঙ্গে না-থেকে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন। বর্তমান সময়ের ব্যস্ততম পরিচালক, শিল্পী ও প্রযোজকদের অনেকেই কারো সঙ্গে নেই। কোনো পক্ষকেই তারা সমর্থন করছেন না। তারা এই দলাদলির পক্ষেও না। তারা চাচ্ছেন কাজ। যে যা করে যাচ্ছে তা নিয়ে তাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই। এদিকে যারা বয়কটের পক্ষে-বিপক্ষে তাদের অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে চলচ্চিত্র নির্মাণ, প্রযোজনা বা অভিনয় করছেন না। কেউ কেউ এই সময় আগুনে ঘি ঢালছেন। সুযোগ পেয়ে একটা পক্ষ নিচ্ছেন তারা।

আবার কেউ হচ্ছেন বলির পাঠা। চলচ্চিত্রের এই ‘বয়কট’-এ বলির পাঠা হলো হিরো আলম। তিনি প্রযোজক সমিতির নবাগত সদস্য। তার প্রযোজিত সিনেমাটি এখনও আলোর মুখ দেখেনি। সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করে মিশা সওদাগর ও জায়েদ খানের বয়কটের ঘোষণা দেওয়া হয়। সেদিন চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতি, পরিচালক সমিতির নেতারা বক্তব্য দেন। বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পাননি অনেক বাঘা বাঘা নেতা। কিন্তু হিরো আলম সেদিন বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পান। যদিও তার সেদিন কোনো অভিযোগ ছিলো না। তারপরও তাকে কেন বক্তব্যের সুযোগ দেওয়া হলো? এমন প্রশ্ন অনেকের। এর উত্তরও রয়েছে অনেকের কাছে। তাদের দাবি- হিরো আলমকে দিয়ে কিছু বলাতে পারলেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল! অথচ সেদিনের বক্তব্যের কারণে অনন্ত জলিলের সিনেমা থেকে বাদ পড়েছেন হিরো আলম।

চলচ্চিত্রের বর্তমানে যারা ‘বয়কট’-এর পক্ষে-বিপক্ষে কথা বলছেন তারাই একটা সময় একসঙ্গে আন্দোলন করে শাকিব খান ও আব্দুল আজিজকে বয়কট করেছেন। সেসময় শাকিব খানের পক্ষ যারা নিয়েছিলেন তাদের অধিকাংশ এখন মিশা-জায়েদের বয়কটের পক্ষে। চলচ্চিত্রের এই বয়কট খেলা নতুন নয়। অতীতে দেখা গেছে, যে পারফর্মার জনপ্রিয়, তাকেই বয়কটে পড়তে হয়েছে। এই তালিকা থেকে অঞ্জু ঘোষ, ওমর সানি, মৌসুমী, পপি, শাকিব খান কেউ বাদ যাননি। এই জুলাই মাসেই বয়কট হতে হয়েছে অমর নায়ক সালমান শাহকে। সেসময় চলচ্চিত্রের অবস্থা ভালো ছিলো। অথচ চলচ্চিত্রের এখন ক্রান্তিকাল। এখন তো এতো বিভেদ থাকার কথা নয়। কারো ভুলত্রুটি থাকলে সিনিয়র শিল্পী, নির্মাতারা বসে সমাধান করবেন।  চলচ্চিত্রের সংকট নিরসনে এক হয়ে কাজ করলে চলচ্চিত্রের ভাগ্যের উন্নতি ঘটবে। তাতে উভয় পক্ষেরই মঙ্গল। 

   

ঢাকা/তারা