বিনোদন

গাড়ির মধ্যে বসেই গরু পছন্দ করতাম: ববিতা

‘করোনাভাইরাসে দেশের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতিদিন মৃতের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে নতুন নাম। এ অবস্থায় ঈদ উদযাপন বা আনন্দ উপভোগ করার মতো মানসিক অবস্থায় আমরা কেউই নেই।’ ববিতা যখন কথাগুলো বলছিলেন তখন মোবাইল ফোনের এ-পাশ থেকে তাঁর কণ্ঠে বেদনার ছাপ বুঝতে পারছিলাম। তারপরও নাছোড়বান্দার মতো চেপে ধরা। চলচ্চিত্রের সোনালি অতীত তাঁদের হাতেই তৈরি। সুতরাং সুখের সেই দিনগুলোর কথাই না হয় হোক।

জানতে চাইতেই চিরচেনা ববিতাকে পাওয়া গেল। বললেন, ‘হ্যাঁ, সে এক সময় এসেছিল জীবনে। চারপাশটা যেন রোদ ঝলমলে! মানুষের মনে আনন্দ ছিল।’ ঈদে নতুন সিনেমা দর্শকের মনে নিশ্চয়ই আরো বাড়তি  আনন্দ যোগ করতো? প্রশ্ন করতেই বললেন, ‘ঈদের ১৫ দিন আগেই এফডিসি, কাকরাইলে সিনেমার অফিসগুলোতে, সিনেমা হলগুলোতে সাজসাজ রব পড়ে যেত। চারদিকে ঈদের আমেজ তৈরি হতো৷ ঈদে মুক্তির মিছিলে অনেকগুলো সিনেমা থাকত। এ নিয়ে দর্শকের মধ্যেও ছিল বাড়তি কৌতূহল। বলা যায়, ঈদের সিনেমা মুক্তি নিয়ে তখন প্রতিযোগিতা হতো প্রযোজকদের মধ্যে, হল মালিকদের মধ্যে।’ 

ঈদ যায়, ঈদ আসে। ঈদ নিয়ে সিনেমা পাড়ার সেই ব্যস্ততা আর নেই। আমি প্রসঙ্গ পাল্টাই। জানতে চাই ছেলেবেলার ঈদের কথা। ববিতা বলেন, ‘শুটিং নিয়ে যতো ব্যস্তই থাকি না কেন, একটা কাজ সবসময় করতাম।’

‘কোনটা?’

‘গরুর হাটে যেতাম।’ ববিতা এবার হেসে ফেলেন। হাসির রেশ টেনে বলেন, ‘আমরা বড় একটা গাড়ি নিয়ে তিন বোন এবং ভাইয়েরা মিলে ঢাকার কয়েকটা হাট ঘুরে দেখতাম। হাটে গিয়ে গাড়ির মধ্যে বসে থাকতাম। আমরা বোরকা পরে যেতাম। ছেলেরা সুন্দর দেখে গরু পছন্দ করে গাড়ির কাছে নিয়ে আসতো। আমরা গাড়ির মধ্যে বসেই গরু পছন্দ করতাম। তিন বোন অনেকদিন এভাবে গরু কিনেছি। কেউ চিনতেই পারত না।’

‘চিনলে অবশ্য রক্ষা ছিল না।’ স্মরণ করিয়ে দিতেই ববিতা পুনরায় হেসে ওঠেন। ‘কোরবানির গরু কিনেছেন। রান্নাও নিশ্চয়ই করেছেন?’ জানতে চাই। ববিতা বলেন, ‘তা তো করতেই হয়েছে। কোরবানির গরুর মাংস খেতে অন্যরকম স্বাদ হয়! এই মাংস জ্বাল দিয়ে রেখে পরে ভাজা ভাজা করে খেতে খুব ভালো লাগে! অনেকদিন ধরে খাওয়া যায়। যতো পুরনো মাংস হয় স্বাদও বাড়ে। আরেকটি জিনিস প্রিয়— গরুর ওঝরি (ভুড়ি)। সুন্দর করে নারকেলের দুধ দিয়ে রান্না করলে অন্যরকম মজা হয়! চম্পা, বড় আপা (সুচন্দা) সবাই এর পাগল! একমাত্র কোরবানির সময় আমি এই রেসিপিটা করি।’

‘এখন সব অন্যরকম হয়ে গেছে।’ হঠাৎ করেই কণ্ঠে পুনরায় ছন্দপতন টের পাই। ‘এখন মানুষ অনলাইনে গরু কিনছেন। হাটেও যেতে হয় না। আনন্দ হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। আমরা অবসরে আড্ডা দিতাম, গল্প করতাম। এখন এক জায়গায় তিনজন মানুষ থাকলে তিনজনই মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আগে নায়িকাদের সিনেমা হলে টাকা দিয়ে দেখতে হতো। শিল্পীদের ভিউকার্ড বের হতো। এখন মোবাইলে শিল্পীদের প্রতি মুহূর্তের খবর জানা যায়, দেখা যায়। আমি মনে করি, টেকনোলজির কারণে নায়ক-নায়িকাদের আবেদন কমেছে।’ ববিতা বলেন। ‘এবার ঈদের পরিকল্পনা কী?’ প্রশ্ন করেই বুঝতে পারি ঠিক হলো না। শুরুতেই মন খারাপের কথা বলেছেন। সেভাবেই বললেন, ‘কিচ্ছু করবো না। আমার এক বান্ধবি আছে। ওরা আমার নামে কোরবানি দিয়ে গরিবদের মধ্যে মাংস বিলিয়ে দেবে- ব্যাস। সবাই ভালো থাকুক, করোনা মুক্ত হোক বিশ্ব- আপাতত এই প্রার্থনা।’