বিনোদন

গরুর হাটে ঘটেছে জীবনের স্মরণীয় ঘটনা: মাকসুদুল হক

ঘটনাটি ১৯৭৪-৭৫ সালের। তখন আমার বয়স ১৪ বছর। বাবার শরীর ভালো না থাকায় ঈদের দিন কোরবানির গরু কেনার জন্য হাটে গিয়েছিলাম। সেদিন প্রচণ্ড বৃষ্টি ছিল! বৃষ্টি মাথায় নিয়েই গরু কিনতে গেলাম। আমার সঙ্গে ছিলেন কাদের ভাই। বৃষ্টিতে ভিজে কয়েক ঘণ্টা ধরে গরু খুঁজলাম। কিন্তু একটা গরুও পছন্দ হচ্ছিল না।

অনেক ঘুরে অবশেষে সন্ধ্যার আগে একটি গরু পছন্দ হলো। দরদাম করে কিনেও ফেললাম। কাদের ভাই সামনে থেকে গরুর রশি ধরে নিয়ে যাচ্ছেন। পেছনে আমি লেজ ধরে আছি। গরুর হাট থেকে বের হওয়ার পথ কাদায় মাখামাখি। আমি ছোট মানুষ। আমার পা কাদায় হাঁটু পর্যন্ত দেবে যাচ্ছিল। হঠাৎ হ্যাচকা এক টানে আমি সেই কাদায় উপুড় হয়ে পড়লাম। 

বিষয় হলো গরু ছুটতে শুরু করেছে। আমি তাল সামলাতে পারিনি। একেবারে কাদা, গোবরে মাখামাখি। সেই কাদায় সারা শরীর ডুবিয়ে আমি আপ্রাণ চেষ্টা করছি উঠে দাঁড়াতে। কিন্তু যতবারই চেষ্টা করছি পিছলে পড়ে যাচ্ছি। কাদা পানিতে হাবুডুবু খাওয়ার অবস্থা! হঠাৎ লক্ষ্য করলাম, হাটের সব মানুষ আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। এটা আমার জীবনের স্মরণীয় ঘটনা। সেদিন খুব লজ্জা পেয়েছিলাম।  

এখন আর হাটে যাওয়া হয় না। এবার তো করোনা আক্রান্ত পৃথিবী। ফলে কোথাও যাওয়া হয়নি। একদিন ঘুম থেকে উঠে যদি দেখি করোনা নেই, তাহলে সবার আগে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়বো। চলে যাবো আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে দেখা করতে। কাছের বন্ধুদের সঙ্গে আগে দেখা করবো।

আসলে সবারই এ সময় মন খারাপ থাকা স্বাভাবিক। সবাই কম-বেশি হতাশায় ভুগছেন। কিন্তু একথা মনে রাখতে হবে- এই সমস্যায় আমি একা পড়িনি। পৃথিবীর সবাই এ সমস্যায় জড়িত। এই ভেবে অন্তত সান্ত্বনা খোঁজার চেষ্টা করা যেতে পারে।

আমার মনে হয়, এ সময় মানুষের প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী হওয়া উচিত। ‘আমাকে করোনা স্পর্শ করতে পারবে না’, ‘নিজের মতো করে নিজেকে সংরক্ষিত রাখবো’- এভাবে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হতে হবে। সচেতন থাকতে হবে।

আগে যেমন মানুষের সঙ্গে ওঠাবসা করতাম, এখন করছি না। আরো এক বছর না হয় করবো না। আমার আত্মবিশ্বাস- আমি বেঁচে থাকবো এবং এই করোনার শেষ দেখবো। করোনা সহজে চলে যাচ্ছে না। এখন কীভাবে তাকে মানিয়ে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া যায় সেই পরিকল্পনা করছি।   

হ্যাঁ, অন্য অনেকের মতো করোনা আমারও যথেষ্ট ক্ষতি করেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সংগীতের। গান-বাজনা বন্ধ। আমি লাইভ প্রোগ্রামগুলো করি না। মাসে একটা-দুইটা শো করতাম। এখন পারছি না। অথচ গানই তো একমাত্র অবলম্বন। সুতরাং আর্থিকভাবে খারাপ অবস্থায় আছি। কিন্তু আমি জানি, পরিস্থিতি একদিন ঠিক হয়ে যাবে।

অনুলিখন: আমিনুল ইসলাম শান্ত