বিনোদন

ঈদে বুক ফেটে কান্না এসেছিল: মনির খান

জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী মনির খান। অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন। চল্লিশের অধিক একক অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। প্রাপ্তির ঝুলিতে জমা হয়েছে তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। মাঝখানে এই কণ্ঠশিল্পী রাজনীতিতে মনোযোগী হয়েছিলেন। পুনরায় ফিরে এসেছেন গানের মঞ্চে। সর্বশেষ প্রয়াত এন্ড্রু কিশোরের স্মরণে গান গেয়ে প্রশংসিত হয়েছেন।

মনির খানের কাছে জানতে চেয়েছিলাম কোরবানি ঈদ প্রসঙ্গে। মনির খান বলেন, ‘করোনার কারণে গত পাঁচমাস গাজীপুরে স্বেচ্ছা গৃহবন্দি ছিলাম। যে কারণে গত রোজার ঈদেও বাড়ি যেতে পারিনি। মা খুব অভিমান করেছেন৷ এবার ঈদে বাড়ি গিয়েছিলাম।’

কথাপ্রসঙ্গে জানা গেল ‘অঞ্জনা’খ্যাত এই কণ্ঠশিল্পীর বাড়ি ঝিনাইদহের মহেশপুর। প্রতি কোরবানি ঈদে নিজ হাতে গরিব-দুঃখীদের মধ্যে মাংস বিলিয়ে দেন। যদিও তিনি হাটে গিয়ে গরু কেনেন না। এ প্রসঙ্গে মনির খান বলেন, ‘ঢাকায় কোরবানি দিলে এক ব্যবস্থা, গ্রামে ভিন্ন। গাজীপুরে আমাদের জায়গা আছে, ওখানে গরু পালার ব্যবস্থা রয়েছে। ঈদে ঢাকা থাকলে সেখানকার গরু কোরবানি দেই। গ্রামে ছোট ভাইয়েরা গরু কিনে রাখে। কেনার আগে ওরা আমাকে গরুর ছবি তুলে পাঠায়। আমি গরু পছন্দ করে দেই।’

ঢাকা এবং গ্রামের ঈদের বিস্তর ফারাক। মনির খান বলেন, ‘আমি বন্ধুপ্রিয় মানুষ। বন্ধুদের সঙ্গে অনেক স্মৃতি রয়েছে। ঈদগাহে গিয়ে একসঙ্গে নামাজ পরা, কোলাকুলি করা, কোলাকুলি করতে গিয়ে পাঞ্জাবির পকেট মেরে দেওয়া। এগুলো এখনও হয় বন্ধুদের সঙ্গে।’

মনির খানের প্রথম অ্যালবাম ‘তোমার কোনো দোষ নেই’ প্রকাশ পায় ঈদে; প্রায় দুই যুগ আগে। এখনও উজ্জ্বল সে সময়ের স্মৃতি। জানালেন জীবনের সবচেয়ে খারাপ ঈদ কাটিয়েছেন সেবার। বিস্তারিত জানতে চাই। বললেন, ‘প্রথম অ্যালবাম। ভিন্ন রকম উত্তেজনা ছিল। কিন্তু প্রকাশের পর দেখলাম কেউ ছুঁয়েও দেখছে না। ঈদে বাঘা বাঘা শিল্পীদের অ্যালবামের ভিড়ে আমার অ্যালবাম হারিয়ে গেল। আমার বুক ফেটে কান্না এসেছিল!’

কিন্তু ‘তোমার কোনো দোষ নেই’ তো বাম্পার হিট অ্যালবাম! স্মরণ করিয়ে দিতেই বললেন, ‘‘সেটা তিনমাস পরের ঘটনা। তখন টেলিভিশনে ‘গীতিবিচিত্রা’ নামে অনুষ্ঠান হতো। সেই অনুষ্ঠানে আমি গান গাওয়ার সুযোগ পেয়ে যাই। তখন ‘তোমার কোনো দোষ নেই’ গানটি গেয়েছিলাম। এ নিয়েও আছে দুঃখের ঘটনা। জীবনের প্রথম টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছি। গ্রামের ছেলে। পরিচালক যেভাবে চাচ্ছিলেন, সেভাবে এক্সপ্রেশন দিতে পারছিলাম না। তখন তিনি একটা গালি দিয়েছিলেন। আমি এতোটাই ভেঙে পড়ি যে, চোখ দিয়ে পানি চলে আসে। তখন তিনি সেভাবেই শট নিয়েছিলেন। এই ঘটনা আমার জীবনে শাপে বর হলো। গানটি প্রচার হওয়ার পর হইচই পড়ে গেল। একদিন গানটির প্রযোজক আমাকে ফোন করে ডাকলেন৷ গিয়ে দেখি শ্রোতা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আমার ক্যাসেট কিনছেন। আমি দোকানে বসা। কেউ চিনলো না! আমার চোখের সামনে চারশ ক্যাসেট বিক্রি হয়ে গেলো! সেদিনের সেই আনন্দ প্রতি মুহূর্তে মনে পড়ে।’’ 

গান এখন টেকনোলজি-নির্ভর। এর দুই ধরনেরই প্রভাব রয়েছে। মনির খান বলেন, ‘পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে-আমরা বলছি। আমি বলবো- পৃথিবী পিছিয়ে যাচ্ছে। ধরুন, সংগীতের যে আমেজ ছিল  ঈদকেন্দ্রীক, পূজাকেন্দ্রীক, পহেলা বৈশাখকেন্দ্রীক। এটা এখন নেই। আগে স্টুডিওতে বসে সুরকার, গীতিকার, শিল্পী একসঙ্গে কাজ করতো। এই বিষয়টিও এখন নেই। ঘরে বসেই কাজ হচ্ছে। গান এখন অনলাইনে মুক্তি পাচ্ছে, অনলাইনে গাওয়া হচ্ছে। সব এখন অদৃশ্য হয়ে গেছে। দৃশ্যমান না থাকলে আন্তরিকতা থাকে না। সেই সৃষ্টির মধ্যে আনন্দ নেই। নতুন শিল্পীদের জন্য এ সময় তাই প্রতিষ্ঠিত হওয়া কঠিন। এখন নতুন শিল্পীরা বিভিন্ন চ্যানেলে গিয়ে জনপ্রিয় শিল্পীদের গান গাইছে। নিজেদের গান নেই! ফলে তারা টিকতে পারছে না।’