বিনোদন

মাঝেমধ্যেই পত্রিকাগুলো আমাকে মেরে ফেলে: কাবিলা

ফুটবল তাঁর ধ্যান-জ্ঞান। আরামবাগ ক্লাবের পক্ষে এক সময় নিয়মিত খেলেছেন। খেলার মাঠেই পরিচয় পরিচালক কাজী হায়াতের সঙ্গে। তিনিই প্রথম কাবিলাকে সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। ১৯৮৮ সালে ‘যন্ত্রণা’ সিনেমার মাধ্যমে রুপালি পর্দায় আত্মপ্রকাশ ঘটে এই অভিনেতার। এরপর প্রায় সাতশ সিনেমায় অভিনয় করেছেন। পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। সিনেমায় এসেও ফুটবল ভুলে যাননি কাবিলা। এখনও নিয়মিত অনুশীলন করেন। ফুডবল ফেডারেশনের মাঠে বসেই রাইজিংবিডির জ্যেষ্ঠ বিনোদন প্রতিবেদক রাহাত সাইফুল কথা বলেন জনপ্রিয় এই খল অভিনেতার সঙ্গে।  

রাইজিংবিডি: দীর্ঘদিন আপনার কণ্ঠনালীর সমস্যার কথা শুনছি। এখন কেমন আছেন?

কাবিলা: খুব ভালো আছি! অপারেশনের পর কথা বলতে পারছি; তবে খুব নিচু স্বরে। এ জন্য সিনেমায় ডাবিংও করছি না। তবে মাঝেমধ্যে পত্রিকাগুলো আমাকে মেরে ফেলে। অনেক পত্রিকা আবার লিখেও দিয়েছে: ‘কাবিলার ক্যানসার’। এসব দেখে কষ্ট পাই। 

রাইজিংবিডি: করোনার কারণে অনেকদিন সিনেমার কাজ বন্ধ। এখন কী নিয়ে ব্যস্ত আছেন?

কাবিলা:  গ্রামে একটি বাগান বাড়ি রয়েছে, সেখানে শুটিং স্পট গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। এছাড়া ফুটবল অনুশীলন তো আছেই। এসব নিয়েই সময় কেটে যাচ্ছে। সর্বশেষ ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ-২’ সিনেমার শুটিং করেছি। নতুন সিনেমায় প্রস্তাব পেলে কাজ করবো। কষ্ট হলেও সিনেমা ছাড়তে পারবো না।

রাইজিংবিডি:  ঢাকাই সিনেমা কোন দিকে যাচ্ছে বলে মনে করেন?

কাবিলা: চলচ্চিত্রের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। অ্যানালগ থেকে ডিজিটাল হয়েছে। আমার বিশ্বাস, আমাদের চলচ্চিত্র আরও ভালোর দিকে যাবে। তবে শর্ত হচ্ছে, যদি সিনেমা হলগুলোর উন্নয়ন ও নতুন হল নির্মাণ করা হয়। হলের কারণে সিনেমা ভালো ব্যবসা করতে পারছে না। এখন হল সংখ্যা কম। এ ছাড়া যে হলগুলো চালু আছে সেগুলোর পরিবেশও তেমন ভালো না। আমাদের দেশে ১০ কোটি টাকা দিয়ে

সিনেমা নির্মাণ করার মতো প্রযোজক আছেন। হলের করুণ অবস্থার কারণে তারা সাহস পাচ্ছেন না। এই অবস্থার উত্তরণ ঘটলে আমি নিজেও সিনেমা প্রযোজনা করবো।

রাইজংবিডি: খলনায়ক ও কমেডিয়ান- দুটি পরিচয়ের মধ্যে কোনটি আপনি উপভোগ করেন?

কাবিলা: খল চরিত্রে আমি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছি। কমেডি চরিত্রে অভিনয় করে বাচসাস পুরস্কার পেয়েছি। তবে নিজেকে কমেডিয়ান হিসেবে পরিচয় দিতে বেশি ভালো লাগে। এর পেছনে যুক্তিও আছে। বাংলাদেশের মানুষ অনেকেই অভাবে আছেন এবং অশান্তিতে আছেন। আমাকে দেখলেই যখন মানুষ হাসে তখন ভালো লাগে। তাদের ভালোবাসা দেখে আমার চোখে পানি আসে। আর খল চরিত্রের সঙ্গে ভয় বিষয়টি জড়িত। ভিলেন হিসেবে লোকে আমাকে পর্দায় দেখলে ভয় পায়। এটা আমার জন্যও ভীতিকর।

রাইজিংবিডি: আপনার অভিনয় জীবনের টার্নিং পয়েন্ট কোন সিনেমা বলে মনে করেন?

কাবিলা: কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘ইতিহাস’। এ ছাড়া ‘আখেরি হামলা’ ‘মুক্তির সংগ্রাম’ ‘অন্ধকার’ ‘এক টাকার বউ’ ‘গরিবের প্রেম’সহ অসংখ্য সিনেমায় দর্শক আমাকে ভালোভাবে নিয়েছেন। 

রাইজিংবিডি: আপনার অভিনীত অধিকাংশ সিনেমায় বরিশালের আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করতে দেখা গেছে। কেন?

কাবিলা: পর্দায় আমি এই ভাষায় কথা বলি, দর্শক হয়তো এটা চায়। যে কারণে পরিচালকরাও আমাকে বরিশালের ভাষায় কথা বলতে বলেন। আমি সিলেটের ভাষাসহ অন্য ভাষায়ও পর্দায় কথা বলেছি।    রাইজিংবিডি: নতুন কোনো কাবিলা সৃষ্টি হচ্ছে না কেন?

কাবিলা: অনেকেই অভিনয় করতে আসছে। তবে তারা চর্চা করছে না। তাদের লক্ষ্য খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা পাওয়া। ভালো অভিনয়-শিল্পী হতে হলে অভিনয়ের চর্চা করতে হবে। এই সময়ের শিল্পীদের মধ্যে অভিনয়ে মনোযোগ কম। তারা দ্রুত গাড়ি-বাড়ি বানাতে চায়।

রাইজিংবিডি: আপনি এক সময় খেলোয়াড় ছিলেন।

কাবিলা: ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ জাতীয় দলের জার্সি গায়ে আমি ফুটবল খেলেছি। ছোটবেলা থেকেই ফুটবল আমার প্রিয় খেলা। আরামবাগ স্পোর্টিং ক্লাবের সেক্রেটারিও ছিলাম। 

রাইজিংবিডি: আপনার প্রকৃত নাম নজরুল ইসলাম শামীম। কাবিলা হলেন কীভাবে?

কাবিলা: পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম, দেওয়ান নজরুল, শেখ নজরুল, ম্যানেজার নজরুল, সহকারী পরিচালকের নাম নজরুল, এমনকি নজরুল নামে দুজন দাড়োয়ানও আছেন। এর মধ্যে আমি কীভাবে নজরুল থাকি! তাই পরিচালক কাজী হায়াৎ নাম বদলে দেন ‘কাবিলা’। তখন থেকে কাবিলা হয়ে গেলাম।