বিনোদন

মৃত্যুর আগে সাদেক বাচ্চুর কিছু কথা, কিছু ব্যথা

আজ (১৪ সেপ্টেম্বর) না-ফেরার দেশে চলে গেলেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের দাপুটে অভিনেতা সাদেক বাচ্চু। প্রায় ৪০০ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। মঞ্চ, টেলিভিশনেও নিয়মিত ছিলেন। অভিনয় করতে এসে চাওয়ার তুলনায় অনেক বেশি পেয়েছেন- সাদেক বাচ্চু এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন। দীর্ঘ অভিনয় জীবনে চলচ্চিত্রের নানা উত্থান-পতন দেখেছেন। এ প্রসঙ্গে ২০১৮ সালের ২১ জুন রাইজিংবিডির জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রাহাত সাইফুল কথা বলেছিলেন সদ্যপ্রয়াত এই গুণী অভিনেতার সঙ্গে। সেই সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ বরেণ্য এই শিল্পীর মৃত্যুদিনে পুনরায় প্রকাশ করা হলো।

চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে সাদেক বাচ্চু রাইজিংবিডিকে বলেছিলেন: ‘শীত, বর্ষা, গ্রীষ্ম নেই, শুটিং সেটে বারো মাসই আমের ডাল খেতে হয়। অধিকাংশ শুটিং হয় পরিকল্পনা ছাড়া। কোন শিল্পীর কখন কাজ পরিচালক ঠিকমতো বলতে পারেন না। যে কারণে দেখা যায় শিল্পীরা শুটিং সেটে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকেন কিন্তু শুটিং হয় না। এসব কারণে খাবার কখনও সঠিক সময়ে খাওয়া হয় না বরং পরে খেতে হয়। এতে ডাল নষ্ট হয়ে যায়। এই ভুল এড়াতে অনেক সময়ই বলা হয়- ডালে আম দেওয়া হয়েছে।’ আক্ষেপ করে সাদেক বাচ্চু অতীত দিনের স্মৃতিচারণ করে বলেছিলেন, ‘আমরা শহীদুল আলম খোকন ও সোহেল রানার শুটিং ইউনিটে কাজ করেছি। তারা ঠিক দুপুর ২টায় খাবার দিতেন। তাদের সেটে বসে থাকতে হয়নি।’

নকল সিনেমা নির্মাণ নিয়েও সাদেক বাচ্চুর মনে কষ্ট ছিল। মনের মতো চরিত্র পাচ্ছেন না বলে অনেক সময় পরিচিতজনদের কাছে আক্ষেপ করেছেন। এ প্রসঙ্গে সাক্ষাৎকারে এই অভিনেতা প্রশ্ন তুলেছিলেন- ‘এখন তামিল, তেলেগু সিনেমা মোবাইলে দেখে হুবহু শট দিতে বলেন কিছু পরিচালক। আমরাও বাধ্য হয়ে শট দেই। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, যে সব দৃশ্যের হুবহু শট দিচ্ছি ওইসব শিল্পী এবং কালচারের সঙ্গে আমার মিল আছে কিনা? যে শিল্পীর সংলাপ ও চরিত্রে আমি অভিনয় করছি আমার কি তার মতো ফিগার? তাই যদি না হয়, তাহলে তাদের হুবহু নকল করছি কেন?’

সাদেক বাচ্চু সিনেমা হলের চেয়ে সিনেমার গল্পকে বেশি প্রাধান্য দিতেন। তিনি মনে করতেন, গল্প ভালো হলে, মেকিং ভালো হলে ভাঙা সিনেমা হলে বসেও দর্শক চলচ্চিত্র উপভোগ করবে। এ জন্য মৌলিক গল্পকে গুরুত্ব দিতেন তিনি। বারবার বলতেন, ‘সিনেমায় অহেতুক মারামারি কেউ দেখতে চায় না। কারণ ছাড়া অস্ট্রেলিয়া শুটিং কেউ পছন্দ করে না।’

পরিচালকদের সেকাল-একাল নিয়েও তার গভীর পর্যবেক্ষণ ছিল। পরিচালকেরা তাদের সম্মানবোধ হারিয়েছেন মনে করতেন তিনি। উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, ‘খান আতাউর রহমান মেকআপ রুমে ঢুকলে মনে হতো রাজ্জাক ভাই যেন শক খেলেন। সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়াতেন। এখন মেকআপ রুমে ঢুকেই দেখবেন, হিরো হিরোইনরা পা তুলে চেয়ারে বসে আছেন। পরিচালক এসে পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘এখন শট আছে’। উত্তরে শিল্পী বলেন, ‘যান যান আসতেছি।’ যে ঘরের ছেলের ধমকে বাবা মাথা নত করে সেই সংসার কি সুখের হতে পারে?’

শুটিংয়ের ডাক পড়ায় সাক্ষাৎকারটি অসমাপ্তই থেকে যায়। সেসময় প্রতিবেদককে তিনি বলেছিলেন, ‘একদিন সময় নিয়ে আসো। অনেক কথা বলার আছে। আর কদিনই-বা বাঁচবো, সময় নিয়ে একদিন কথা বলবো আমরা।’

সাদেক বাচ্চুর অসমাপ্ত কথাগুলো আর শোনা হবে না। তার আগেই তিনি চলে গেলেন সব কিছুর ঊর্ধ্বে। পরপারে ভালো থাকুন এটুকুই কামনা। রইল গভীর শ্রদ্ধা।