বিনোদন

সৌমিত্রকে নিয়ে আশার আলো দেখছেন না চিকিৎসকরা

প্রখ্যাত অভিনেতা সৌমিত্র চ্যাটার্জির শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে খুব একটা আশার আলো দেখছেন না চিকিৎসকরা। ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যম এ খবর প্রকাশ করেছে।

দক্ষিণ কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে গত ২৭ দিন ধরে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সৌমিত্র চ্যাটার্জি। তার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান অরিন্দম কর।

রোববার (১ নভেম্বর) রাত ৯টায় মেডিক্যাল বুলেটিনে অরিন্দম কর বলেন—সকাল থেকে ইন্টারনাল ব্লেডিং বা অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হচ্ছিল সৌমিত্রবাবুর। সেই রক্তক্ষরণ এখনো সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। রক্তক্ষরণ ঠিক কোথা থেকে হচ্ছে, তা বুঝতে সিটি এনজিওগ্রাফি করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে পোস্ট সিটি এনজিও ডায়ালাইসিস করা হয়। কীভাবে রক্তক্ষরণ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, সেই চেষ্টা করছি।

সৌমিত্র চ্যাটার্জির আচ্ছন্নভাব কোনোভাবে কাটছে না। অক্সিজেনও চলছে আগের মতোই। কিন্তু কোনোভাবে উন্নতি হচ্ছে না তার। বিষয়টি উল্লেখ করে অরিন্দম কর বলেন—২৫-২৬ দিন হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু নিউরজিক্যাল সমস্যাটাই বেশি করে ভোগাচ্ছে। কোনোভাবেই আচ্ছন্নভাব কাটছে না। আর এটি মনে হচ্ছে তার স্বাস্থ্যের উন্নতি না হওয়ার কারণ। ৮৫ বছরে কো-মর্বিডিটি নিয়ে লড়ছেন। কিন্তু মনে হয়, খুব বেশি আশা করা যাবে না।

করোনা সংকটের কারণে দীর্ঘ দিন টলিউড ফিল্মইন্ডাস্ট্রির শুটিং বন্ধ ছিল। সতর্কতা মেনে সম্প্রতি শুটিংয়ের অনুমতি মেলে। যথাযথ সুরক্ষা মেনে শুটিংয়ে ফিরেছিলেন সৌমিত্র। নিজেকে নিয়ে তৈরি একটি তথ্যচিত্রের শুটিং করছিলেন। এর মধ্যে তিনি করোনায় আক্রান্ত হন। গত ৬ অক্টোবর এই শিল্পীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

১৯৩৫ সালের ১৯ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে জন্মগ্রহণ করেন সৌমিত্র চ্যাটার্জি। চ্যাটার্জি পরিবারের আদিবাড়ি ছিল বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কাছে কয়া গ্রামে। সৌমিত্রর দাদার আমল থেকে চ্যাটার্জি পরিবার নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরে বসবাস শুরু করেন। সৌমিত্র পড়াশোনা করেন—হাওড়া জেলা স্কুল, স্কটিশ চার্চকলেজ, কলকাতার সিটি কলেজ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

১৯৫৯ সালে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় ‘অপুর সংসার’ চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন। পরবর্তীতে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ১৪টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন সৌমিত্র। মৃণাল সেন, তপন সিংহ, অজয় করের মতো পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেন তিনি। কবি ও খুব উচ্চমানের আবৃত্তিকার হিসেবে তার দারুণ খ্যাতি রয়েছে।

২০১২ সালে ভারতের চলচ্চিত্রাঙ্গনের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার লাভ করেন সৌমিত্র। ২০০৪ সালে ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্মান পদ্মভূষণ পান তিনি। তাছাড়া ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, সংগীত নাটক একাডেমি পুরস্কার, ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কারসহ নানা পুরস্কার পেয়েছেন এই শিল্পী। এ ছাড়া দেশ-বিদেশের অসংখ্য সম্মাননা তার প্রাপ্তির ঝুলিতে জমা পড়েছে। উল্লেখযোগ্য হলো—ফ্রান্সের ‘লেজিয়ঁ দ্য নর’ (২০১৮)।