বিনোদন

সৌমিত্রর ফুসফুসে আরো বেশি অক্সিজেন সরবরাহের সিদ্ধান্ত

অভিনেতা সৌমিত্র চ্যাটার্জির শারীরিক আবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। সোমবার (৯ নভেম্বর) রাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে বুধবার (১১ নভেম্বর) সৌমিত্র চ্যাটার্জির ট্রাকিওস্টোমি করা হতে পারে। এ দিন রাজ্য সরকারের পাঠানো চিকিৎসকদের একটি প্রতিনিধি দল তাকে দেখেছেন। সবকিছু পর্যবেক্ষণ করেই চিকিৎসকরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, চিকিৎসকদের প্রতিনিধি দল হাসপাতালে গিয়ে সৌমিত্র চ্যাটার্জির স্বাস্থ্য সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ খোঁজখবর নিয়েছেন। সৌমিত্রর বিভিন্ন রিপোর্ট দেখে তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন। এরপরই মূলত ট্রাকিওস্টোমি পদ্ধতি প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। ফুসফুসে বেশি অক্সিজেন পৌঁছে দিতেই ট্রাকিওস্টোমি পদ্ধতি প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তারা মনে করছেন—এই পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে নিশ্চিতভাবে উপকৃত হবেন সৌমিত্র চ্যাটার্জি।

ট্রাকিওস্টোমি পদ্ধতি প্রয়োগের ফলে সৌমিত্রর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে প্লাজমা থেরাপি দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সৌমিত্রর শরীরে প্লাটিলেটের পরিমাণ কম। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি সপ্তাহের শেষে সৌমিত্রকে প্লাজমা থেরাপি দেওয়া হতে পারে বলেও এ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

করোনা সংকটের কারণে দীর্ঘ দিন টলিউড ফিল্মইন্ডাস্ট্রির শুটিং বন্ধ ছিল। সতর্কতা মেনে সম্প্রতি শুটিংয়ের অনুমতি মেলে। যথাযথ সুরক্ষা মেনে শুটিংয়ে ফিরেছিলেন সৌমিত্র। নিজেকে নিয়ে তৈরি একটি তথ্যচিত্রের শুটিং করছিলেন। এর মধ্যে তিনি করোনায় আক্রান্ত হন। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত ৬ অক্টোবর কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এই শিল্পীকে।

১৯৩৫ সালের ১৯ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে জন্মগ্রহণ করেন সৌমিত্র চ্যাটার্জি। চ্যাটার্জি পরিবারের আদিবাড়ি ছিল বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কাছে কয়া গ্রামে। সৌমিত্রর দাদার আমল থেকে চ্যাটার্জি পরিবার নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরে বসবাস শুরু করেন। সৌমিত্র পড়াশোনা করেন—হাওড়া জেলা স্কুল, স্কটিশ চার্চকলেজ, কলকাতার সিটি কলেজ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

১৯৫৯ সালে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় ‘অপুর সংসার’ চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন। পরবর্তীতে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ১৪টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন সৌমিত্র। মৃণাল সেন, তপন সিংহ, অজয় করের মতো পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেন তিনি। কবি ও খুব উচ্চমানের আবৃত্তিকার হিসেবে তার দারুণ খ্যাতি রয়েছে।

২০১২ সালে ভারতের চলচ্চিত্রাঙ্গনের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার লাভ করেন সৌমিত্র। ২০০৪ সালে ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্মান পদ্মভূষণ পান তিনি। তাছাড়া ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, সংগীত নাটক একাডেমি পুরস্কার, ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কারসহ নানা পুরস্কার পেয়েছেন এই শিল্পী। এ ছাড়া দেশ-বিদেশের অসংখ্য সম্মাননা তার প্রাপ্তির ঝুলিতে জমা পড়েছে। উল্লেখযোগ্য হলো—ফ্রান্সের ‘লেজিয়ঁ দ্য নর’ (২০১৮)।