বিনোদন

শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় সৌমিত্রের শেষ বিদায়

সন্তানকে কাঁধে তুলে নতুন এক সময়ের দিকে হেঁটে যাচ্ছেন অপু। সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’ চলচ্চিত্রের সেই অপু আজ সত্যি নতুন সময়ের দিকে পা বাড়ালেন! রোববার (১৫ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৭টার দিকে কেওড়াতলা মহাশ্মশানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। তার আগে অগনিত মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিক্ত হন বরেণ্য অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

দীর্ঘ ৩৯ দিন কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে রোববার দুপুরে হার মেনেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তার মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে শেষ হলো একটি অধ্যায়ের। শুধু সিনেমা নয়, সাহিত্য, রাজনীতি, কবিতা সব ক্ষেত্রেই ছিল তার উজ্জ্বল উপস্থিতি।

হাসপাতাল থেকে অভিনেতা সৌমিত্রের মরদেহ প্রথমে নেওয়া হয় তার গলফ গ্রিনের বাড়িতে। স্বজনদের সঙ্গে শেষ দেখার পর তাকে নেওয়া হয় টালিগঞ্জের টেকনিশিয়ানস স্টুডিওতে। শিল্পী-কুশলী-স্বজনদের শ্রদ্ধা জানানোর পর বেলা সাড়ে তিনটায় সৌমিত্রর মরদেহ নেওয়া হয় রবীন্দ্রসদনে। সকলের শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের জন্য সেখানে ২ ঘণ্টা রাখা হয় তার মরদেহ। এরপর শেষকৃত্যের জন্য কেওড়াতলা মহাশ্মশানে নেওয়া হয় তার মৃতদেহ। সেখানে শেষকৃত্যের আগে গার্ড অব অনার দেওয়া হয় প্রয়াত অভিনেতাকে।

১৯৩৫ সালের ১৯ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে জন্মগ্রহণ করেন সৌমিত্র চ্যাটার্জি। চ্যাটার্জি পরিবারের আদিবাড়ি ছিল বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কাছে কয়া গ্রামে। সৌমিত্রের দাদার আমল থেকে চ্যাটার্জি পরিবার নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরে বসবাস শুরু করেন। সৌমিত্র পড়াশোনা করেন—হাওড়া জেলা স্কুল, স্কটিশ চার্চকলেজ, কলকাতার সিটি কলেজ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

প্রথম থেকেই কবিতা, আবৃত্তি, সাহিত্য, বাম রাজনীতির দিকে ঝোঁক ছিল সৌমিত্রর। তাই সৌমিত্র মানেই শুধু সিনেমার পর্দায় ডাকসাইটে অভিনেতা তা একেবারেই নয়। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় নিজেকে মেলে ধরেছিলেন সংস্কৃতির নানা দিকে। কবি ও খুব উচ্চমানের আবৃত্তিকার হিসেবে তার দারুণ খ্যাতি রয়েছে।

১৯৫৯ সালে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় ‘অপুর সংসার’ চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন। পরবর্তীতে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ১৪টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন সৌমিত্র। মৃণাল সেন, তপন সিংহ, অজয় করের মতো পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেন তিনি। এক সাক্ষাৎকারে সৌমিত্র জানিয়েছিলেন—‘অপুর সংসার’ চলচ্চিত্রে প্রথমে তাকে নিতেই চাননি সত্যজিৎ রায়। কিন্তু পরে সৌমিত্রকেই সবচেয়ে বেশি পছন্দ ছিল সত্যজিতের।

২০১২ সালে ভারতের চলচ্চিত্রাঙ্গনের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার লাভ করেন সৌমিত্র। ২০০৪ সালে ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্মান পদ্মভূষণ পান তিনি। তাছাড়া ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, সংগীত নাটক একাডেমি পুরস্কার, ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কারসহ নানা পুরস্কার পেয়েছেন এই শিল্পী। এ ছাড়া দেশ-বিদেশের অসংখ্য সম্মাননা তার প্রাপ্তির ঝুলিতে জমা পড়েছে। উল্লেখযোগ্য হলো—ফ্রান্সের ‘লেজিয়ঁ দ্য নর’ (২০১৮)।

চলচ্চিত্র ভীষণ ভালোবাসতেন সৌমিত্র। তাই হয়তো করোনাকালেও শুটিং ফ্লোরে ফেরার জন্য ছটফট করছিলেন তিনি। ৮৫ বছর বয়েসেও ভালো চলচ্চিত্রে অভিনয়ের খিদে ছিল ষোলআনা। শেষ সময়ে তার অভিনীত ‘বেলাশেষে’, ‘ময়ূরাক্ষী’, ‘বসু পরিবার’, ‘সাঁঝবাতি’ চলচ্চিত্রও বক্স অফিসে দারুণ হিট ছিল।