বিনোদন

যেখানে হাতির ভয়, সেখানেই অপুর রাত হয়

একদিকে পাহাড় ঘেরা সবুজের সঙ্গে মেঘের লুকোচুরি, অন্যদিকে চা বাগানের পাশ ঘেঁষে লুসাই কন্যা কর্ণফুলীর মন মাতানো ঢেউ। যা খুব সহজেই মনকে সতেজ করে দেয়। চা বাগানের দৃষ্টিনন্দন ব্রিটিশ বাংলো ও পাখির কিচিরমিচির শব্দ অন্যমাত্রা যোগ করেছে। বলছি, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার কোদালা চা বাগানের কথা।

চা শ্রমিকদের প্রতিদিনের ক্লান্তিহীন কর্মযজ্ঞ বিকাল গড়াতেই শেষ হয়। অবশ্য এই তড়িগড়ির পেছনে কারণ রয়েছে। স্থানীয়দের ভাষায়, বিকাল ৫টার পর চা বাগানে বন্য হাতি আসে। হাতির আক্রমণে কয়েকজন মানুষ মারা গেছেন। মূলত এই ভয়ে, কাজ শেষ করে ৫টার আগেই সবাই বাড়ি ফিরে যান। কিন্তু বন্য হাতির আতঙ্ক নিয়েই গত ১৫ দিন ধরে সেখানে চলছে ‘ছায়াবৃক্ষ’ সিনেমার শুটিং। ভোরের সূর্য আলো ছড়ানোর আগেই সবার ঘুম ভাঙে। সূর্য উঠার সঙ্গে সঙ্গে শুটিং শুরু করে শুটিং ইউনিট। আবার বিকাল গড়াতেই ক্যামেরা ক্লোজ করেন নির্মাতা।

‘ছায়াবৃক্ষ’ সিনেমায় প্রধান চরিত্রে অভিনয় করছেন চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস। তাকে কেন্দ্র করেই এর গল্প এগিয়েছে। বন্ধন বিশ্বাস পরিচালিত এ সিনেমায় তার বিপরীতে অভিনয় করছেন নায়ক নিরব। অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করছেন সুমিত সেন গুপ্ত, কাজী নওশাবা প্রমুখ।

অগ্রাহায়ণের সূচনা লগ্নে মৃদু শীতে পড়েছে কোদালা চা বাগান এলাকায়। তবু ভোর ৫টায় ঘুম থেকে উঠেই মেকআপ নিতে শুরু করেন শিল্পীরা। তড়িগড়ি করে কোদালা চা বাগানে স্থানীয় চা শ্রমিকদের নিয়ে শুরু করেন শুটিং। শুটিংকে কেন্দ্র করে আশেপাশের বাজার ও গ্রামে যেন মেলা বসেছে। কুমিল্লা, চট্টগ্রামসহ নানা জায়গা থেকে মানুষ আসছে শুটিং দেখতে। তাদের একটাই চাওয়া—অপু বিশ্বাসকে একটু দেখবেন। সুযোগ পেলে সেলফি আর তা না হলে দূর থেকে ক্যামেরাবন্দি করেন প্রিয় নায়িকাকে। কেউ কেউ প্রিয় শিল্পীর জন্য খাবার তৈরি করেও নিয়ে আসেন।

অপু বিশ্বাস রাইজিংবিডির এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমার সঙ্গে দেখা করতে দূরদূরান্ত থেকে লোকজন আসছে। প্রায় প্রত্যেকেই আমার জন্য খাবার নিয়ে আসছেন। এখানে কমন খাবার হচ্ছে কলা। আরেকটি খাবার আমার খুব পছন্দ হয়েছে। এটি সেমাই দিয়ে তৈরি করা হয়। নাম ঠিক মনে নেই। তবে খাবারটি খুব সুস্বাদু। এক ভক্ত আমার জন্য তৈরি করে এনেছিলেন। তাছাড়া এই এলাকার মানুষজনও খুব হেল্পফুল। পরিবেশটা ভালো লেগেছে। স্থানীয়দের আঞ্চলিক ভাষায় কথা শুনতে ভালো লাগে। যদিও তাদের কথা বুঝতে একটু সময় লাগে!’

অপু বিশ্বাসের গাড়ি রাস্তায় বের হওয়ার আগেই রাস্তার দুপাশে অপেক্ষায় থাকেন তার ভক্তরা। গাড়ি দেখলেই ঝাপিয়ে পড়েন গাড়ির ওপর। মাঝে মাঝে উৎসুক জনতার ভিড় সামাল দিতে বেগ পেতে হয় শুটিং ইউনিটসহ নিরাপত্তাকর্মীদের। কখনো কখনো নিরাপত্তাকর্মীদের চোখ ফাঁকি দিতে উৎসুক ভক্তরা চা গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকেন। পরিবেশ একটু শান্ত হলেই মাথা উঁচু করে দেখতে থাকেন শুটিং। কিন্তু ক্যামারায় যখন তাদের মাথা চলে তখনই শুরু হয় বিপত্তি। আর নিরাপত্তাকর্মীরাও বাঁশি বাজাতে শুরু করেন। ভক্তরা তখন দ্রুত বসে পড়েন চা গাছের আড়ালে। এভাবেই শুটিং চলছে ‘ছায়াবৃক্ষ’ সিনেমার।

বিকাল ৫টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে শুটিং বন্ধ করে ঘরে ফিরে আসে শুটিং ইউনিট। কিন্তু ইউনিটের একটি অংশকে রাত কাটাতে হয় চা বাগানেই। তবে সেখানে একটি বাংলোর দরজা বন্ধ করে রাখেন তারা। রাতে বাইরে বের হন না। বলা চলে—হাতির ভয় নিয়েই রাত কাটান তারা।