বিনোদন

‘৪০ বছর এফডিসিতে থেকেও জায়গা হলো না, এখন যাব কোথায়?’

চলচ্চিত্র ও এফডিসি মানেই যেন রুপালি আলোর ঝলকানি। অনেকেই মনে করেন, এই অঙ্গনের প্রত্যেক মানুষের বাস্তব জীবনও রুপালি আলোর মতো রঙিন। ভাবনার আকাশ রঙিন হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। নায়ক-নায়িকা বা নন্দিত শিল্পীদের সঙ্গে এফডিসিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন স্বল্প আয়ের কিছু মানুষ। এফডিসি থেকে অনেকের ভাগ্য পরিবর্তন হলেও অনেকেই এখনো অভাব অনটনে দিনাতিপাত করেন।

দীর্ঘ চল্লিশ বছর কঠোর পরিশ্রম করেও ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে পারেননি ভাগ্য আব্দুল মান্নান। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে ফিরে যেতে চান নিজ গ্রামে। কিন্তু তাতেও অর্থ বাধা। কিছু টাকা হলেই শেষ নিঃশ্বাসটা নিজের গ্রামে গিয়ে নিতে চান। বলছি, আব্দুল মান্নানের কথা। প্রায় চার দশক ধরে এফডিসির চার দেয়ালে কাটছে তার জীবন। কখনো ক্যান্টিন বয়, কখনো ফল বিক্রি করেছেন মান্নান। এখন এফডিসিতে ঝালমুড়ি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি।

এদিকে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অর্ধেক শরীর অবশ হয়ে গেছে আব্দুল মান্নানের। এক হাতেই বানান ঝালমুড়ি। অর্থসংকটে কাটছে তার জীবন। সামান্য সহযোগিতা পেলে নিজের বাড়ি চলে যাবেন আব্দুল মান্নান মোল্লা। কান্নাজড়িত কণ্ঠে আব্দুল মান্নান বলেন—‘প্রতিমাসে ১২০০ টাকার ঔষধ লাগে। যা উপার্জন করি তা নিজেরই লাগে, পরিবারকে দিতে পারছি না। এদিকে এফডিসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এফডিসিতে আর থাকা যাবে না। পরে জেমি ও খোকন সাহেবকে দিয়ে দরখাস্ত করেছি, তারা আপাতত থাকতে বলছেন। ৪০ বছর এফডিসিতে থেকেও জায়গা হলো না, এখন যাব কোথায়? সবাই মিলে যদি আমাকে সহযোগিতা করে লাখ খানেক টাকা দেন তাহলে একেবারে গ্রামে চলে যেতাম।’

মুক্তিযুদ্ধের পরপরই এক আত্মীয়র সঙ্গে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় আসেন আব্দুল মান্নান। বেশ কয়েক মাস এক বাসায় ১০ টাকা বেতনে কাজ করেন। একদিন সেই আত্মীয়র হাত ধরেই এফডিসির সরকারি ক্যান্টিনে কাজ শুরু করেন। তখন মাসিক বেতন ছিল ৩০০ টাকা। কিন্তু ক্যান্টিন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চাকরিটি হারান, আর জীবনের রূঢ় বাস্তবতা সামনে এসে দাঁড়ায়। এরপর আমড়া, কামরাঙা, আমসহ বিভিন্ন ফলের পসরা সাজিয়ে বসেন তিনি। পাশাপাশি সুযোগ মিললেই সিনেমায় এক্সট্রা আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন। একজনের কাছ থেকে ৭৫ টাকা দিয়ে ঝালমুড়ির দোকানটি কিনেছিলেন মান্নান। অর্থের অভাবে এফডিসির মসজিদে রাত্রি যাপন করছেন তিনি।

মান্নান এ পর্যন্ত ত্রিশের অধিক মিনেমায় এক্সট্রা শিল্পী হিসেবে কাজ করেছেন। রাজ্জাক, শাবানা, ববিতা, সালমান শাহ, মান্না ও শাকিব অভিনীত সিনেমায় তাকে দেখা গেছে। ‘বাংলার হিরো’ সিনেমায় প্রথম অভিনয় করেন মান্নান। এরপর ‘কাবুলিওয়ালা’, ‘ধনবান’, ‘অনাহার’, ‘আম্মাজান’, ‘মালা’ সহ বেশকিছু সিনেমায় অভিনয় করেন। আব্দুল মান্নান অভিনীত সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘আমি নেতা হবো’।

মান্নানের চোখের সামনে অনেকে পেয়েছেন আকাশ ছোঁয়া দর্শকপ্রিয়তা। অনেকের ভাগ্য রুপালি পর্দার গল্পের মতোই বদলে যেতে দেখেছেন! কিন্তু তার জীবনের গল্পটাই বদলায়নি। তবে নায়ক মান্না বেঁচে থাকলে হয়তো তার ভাগ্যের পরিবর্তন হতো! বিষয়টি উল্লেখ করে আব্দুল মান্নান বলেন—‘জীবন বাঁচাতে অনেক কষ্ট করেছি। আজ পর্যন্ত ঘরবাড়ি করতে পারিনি। নায়ক মান্না বেঁচে থাকলে আমার ঘরবাড়ি হতো।’

মান্নাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে আব্দুল মান্নান বলেন—‘আগে সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার বাড়ি যেতাম। তখন মান্না আমার হাতে দুই হাজার করে টাকা দিতো। একবার অসুস্থ হয়ে পড়ি, তখন মান্না আমাকে ২০ হাজার টাকা দিয়েছিল চিকিৎসার জন্য।’