বিনোদন

‘মোশাররফ করিমের কমেডি নতুনরা করলে ভাঁড়ামির আশঙ্কাই বেশি’

অভিনেতা, নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা সালাউদ্দিন লাভলু। টানা দ্বিতীয়বারের মতো ডিরেক্টরস গিল্ড-এর সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। নতুন দায়িত্ব, কর্মপরিকল্পনা ও নির্মাণ নিয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। আলাপচারিতায় ছিলেন— আমিনুল ইসলাম শান্ত।

রাইজিংবিডি: অভিনন্দন। নব-নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে শুরুতেই কোন কাজটি করবেন?

সালাউদ্দিন লাভলু: গত দুই বছর ধরে গিল্ডের যেসব কাজ চলমান রয়েছে, সেসব আগে শেষ করব। বিশেষ করে আন্তঃসংগঠনের বেশকিছু কাজ চালমান। যেমন: শুটিংয়ের আগে চুক্তিপত্রে সাইন করা, সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত শুটিং করা ইত্যাদি। করোনার কারণে এসব কাজে ভাটা পড়েছে। অভিনয় শিল্পী সংঘ, নাট্যকার সংঘ, প্রোডিউসার এসোসিয়েশন, এফটিপিও-ভুক্ত সংগঠন যেগুলো আছে সেগুলোর সঙ্গে বসবো। মিডিয়ায় কাজের যে সুস্থ পরিবেশ তা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব। ডাবিংকৃত টিভি সিরিয়াল প্রিভিউ করার অনুমতি তথ্যমন্ত্রণালয় থেকে নিয়েছি। এই কাজও চলমান। বিদেশি টিভি সিরিয়াল পিক আওয়ারে প্রচারিত না হয়ে, যাতে অফ পিক আওয়ারে প্রচার হয় সে বিষয়েও কাজ করতে হবে। তাছাড়া, গিল্ডের সব সদস্যদের নিয়ে চলতি মাসে মিটিং করব। আমরা জানতে চাই, সম্মানিত সদস্যদের চাওয়াটা কী? তাদের চাওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ।

রাইজিংবিডি: ডিরেক্টরস গিল্ডের নিজস্ব কোনো কার্যালয় নেই। এ বিষয়ে ভাবছেন কিনা?

সালাউদ্দিন লাভলু: চারটি সংগঠন একটি বিল্ডিংয়ে স্পেস ভাড়া নিয়ে অফিসিয়াল কার্যক্রম পরিচালনা করছি। আমাদের নিজস্ব কোনো ভবন বা জায়গা নেই। তবে নিজস্ব ভবন হোক এটা চাই। কিন্তু ভবন বা জমি ক্রয়ের মতো অর্থ সংগঠনের নেই। এফডিসি ও শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গে কথা বলেছি এ ব্যাপারে। এবার লিখিত তাদের জানাব। এফডিসিতে নতুন ভবন হচ্ছে, সেখানে ডিরেক্টরস গিল্ডের কার্যালয়ের জন্য নামমাত্র ভাড়ায় জায়গার ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি, প্রযোজক সমিতি যেমন পেয়েছে।

রাইজিংবিডি: টেলিভিশন নাটকের বাজেটের স্বল্পতা আছে। এরপরও করোনা সংকটের সময় বেশ কজন শিল্পী পারিশ্রমিক বাড়িয়েছেন। ডিরেক্টরস গিল্ড এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেবে কিনা?

সালাউদ্দিন লাভলু: বিষয়টি খুবই সমালোচিত হয়েছে। এ বিষয়ে আলোচনার জন্য সংশ্লিষ্ট সবগুলো সংগঠনের একত্রে বসার কথা রয়েছে। বাণিজ্যিক চাহিদার কারণে একজন শিল্পী তার পারিশ্রমিক বাড়াতে পারেন। কিন্তু সেটা যদি অযৌক্তিক হয়, তবে খুবই দুঃখজনক। আমি মনে করি, ব্যক্তিগত দায়িত্ব বোধের জায়গা থেকে এটা ঠিক নয়। 

ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, ইউটিউবভিত্তিক কাজে তাদের চাহিদা থাকতে পারে। কিন্তু নাটকের শিডিউল দেওয়া বা নাটক করার ক্ষেত্রে তাদের খুব একটা আগ্রহ নেই। বরং তারা ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, ইউটিউবভিত্তিক কাজে বেশি আগ্রহী। এসব প্ল্যাটফর্মের কাজের জন্য কিছু এজেন্সির কাছে তারা সারা বছরের শিডিউল দিয়ে রাখে বা ওই এজেন্সি কিনে রাখে। এটা হলো বাস্তবতা। এই বিষয়গুলো সাংগঠনিকভাবে কতটা রোধ করা যাবে জানি না। তবে অভিনয় শিল্পী সংঘের সঙ্গে কথা বলেছি। সংগঠনটির নেতাদের সঙ্গে বসার কথা ছিল। কিন্তু নির্বাচনের কারণে হয়ে ওঠেনি।  

রাইজিংবিডি: আপনি নির্মাতা, অভিনেতা এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা। নির্মাতা হিসেবে কোনো সংকটের মুখোমুখি হচ্ছেন কিনা?

সালাউদ্দিন লাভলু: ব্যক্তিগতভাবে কেমন সংকটের মুখোমুখি হচ্ছি, এর চেয়ে ইন্ডাস্ট্রি কোন ধরনের সংকট পার করছে তা নিয়ে কথা বলা ভালো! যেমন: ভালো নাট্যকারের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এখন চিত্রনাট্য ছাড়াই নাটক নির্মাণের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। দু’একজন যারা নাটক লিখছেন, তারাই সব সিরিয়াল লিখছেন। অভিজ্ঞ, দক্ষ নাট্যকারের সংখ্যা কমে যাওয়া আমাদের জন্য দুঃখজনক। ২০-২৫ বছর আগে গ্রুপ থিয়েটার থেকে ডেডিকেটেড শিল্পী উঠে এসেছেন, তারাই মূলত টেলিভিশনে নেতৃত্ব দেন। গ্রুপ থিয়েটার থেকে আগের মতো ডেডিকেটেড অভিনেতা-অভিনেত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। ওই জায়গাটাতে শূন্যতা আছে। আর বাজেট গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। চ্যানেল কর্তৃপক্ষ বা যাদের কথাই বলেন তাদের কাছে ব্যবসাটাই প্রধান হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কারণে টিভি নাটকের মান কমে যাচ্ছে। আগে প্রত্যেকটি টিভি চ্যানেলে প্রিভিউ কমিটি ছিল। চিত্রনাট্য নিয়ে আলোচনা হতো। এখন বেশিরভাগ চ্যানেলে এসব একদমই নাই। টেলিভিশনের চাঙ্ক আগেই বিক্রি হয়ে যায় এজেন্সির কাছে। এজেন্সি ব্যবসা করার জন্য নাটককে পণ্য হিসেবে দেখে। দর্শকের কাছে সুস্থ ধারার নাটক পৌঁছে দেওয়ার তাগিদ তাদের নেই, তারা ভাবেও না। বরং হাতে গোনা তারকা শিল্পীদের নিয়ে নাটক তৈরি করে ভিউ-লাইকের আশায়। এসব বিষয় মিলিয়ে টেলিভিশন নাটকে সংকট তৈরি হয়েছে। এই সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য সংগঠনের খুব প্রয়োজন। ব্যক্তিকেন্দ্রিক কিছু হয় না। এজন্য প্রত্যেক সংগঠন মিলে কিছু পদক্ষেপ করোনার আগে নিয়েছিলাম। এভাবে কিছু পদক্ষেপ নিলে কিছু সংকট কাটিয়ে ওঠা যেতে পারে!

রাইজিংবিডি: বর্তমান টিভি নাটকে কমেডি নয়, ভাঁড়ামো বেশি হচ্ছে—এমন অভিযোগ রয়েছে।

সালাউদ্দিন লাভলু: নাটক বাণিজ্যিক পণ্য হওয়ার পর নাটকের সুস্থ ব্যাপারটা নষ্ট হয়ে গেছে। পারিবারিক গল্প, পারিবারিক মূল্যবোধ, সমাজের চিত্র তুলে ধরা— এসব এখন আর নেই। শিল্পের কঠিনতম একটি মাধ্যম কমেডি। সেই কাজটি করার জন্য যোগ্য শিল্পী, পরিচালক প্রয়োজন। তা না হলে ভাঁড়ামো হয়ে যায়! দুঃখজনক ব্যাপার হলো, যারা প্রযোজক তারাও এই ভাঁড়ামোগুলো চাচ্ছেন। দর্শক যে এই ভাঁড়ামো পছন্দ করছেন না তা তারা বুঝতে পারছেন না। আমি নাটক করতে চাইলে তারা বলেন, ‘মানুষ সারাদিন ক্লান্ত হওয়ার পর টিভি দেখে প্রাণ ভরে হাসতে চায়।’ সবই ঠিক আছে, কিন্তু মন খুলে হাসার জন্য তো সঠিক কমেডি, স্যাটায়ার প্রয়োজন, ভাঁড়ামো নয়। আমার বিশ্বাস, একজন মোশাররফ করিম যদি কমেডি করেন তার মধ্যে যে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা, সুস্থতা ফুটে উঠবে, একই কাজ নতুন কোনো ছেলেমেয়ে করলে সেটা ভাঁড়ামো হওয়ার আশঙ্কাই বেশি।

রাইজিংবিডি: চলচ্চিত্র নির্মাণ থেকে দূরে চলে গেলেন কেন?

সালাউদ্দিন লাভলু: আমি সুস্থ ধারার বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চাই। একটি চিত্রনাট্য লিখেছি। এজন্য যে বাজেট দরকার, তা পাইনি বলে কাজটি শুরু করিনি। বর্তমানে চলচ্চিত্রের ক্যারেক্টার বদলে গেছে। অধিকাংশ কাজ এখন ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য নির্মিত হচ্ছে। আগে বুঝতে চাই, ওই ধরনের কাজ আমি করব কিনা। আমার ভালো লাগার বিরুদ্ধে গিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করব না।