বিনোদন

যেভাবে ইউসুফ খান থেকে দিলীপ কুমার

বলিউডের কিংবদন্তি অভিনেতা দিলীপ কুমার। হিন্দি সিনেমা জগতের প্রথম সুপারস্টার বলা হয় তাকে। সিনেমার চরিত্রকে সম্পূর্ণ নিজস্ব ভঙ্গিমায় পর্দায় উপস্থাপন তাকে দর্শকের কাছে আরো গ্রহণযোগ্য করে তুলেছিল।

দিলীপ কুমারের জন্ম ১৯২২ সালের ১১ ডিসেম্বর পাকিস্তানের পেশোয়ারে। তার মা-বাবার বারো সন্তান। বাবা লালা গুলাম সারোয়ার ছিলেন ফলের ব্যবসায়ী। পেশোয়ার ও দেওলালিতে (নাসিক) তাদের ফলের বাগান ছিল। দিলীপ কুমার লেখাপড়াও করেছেন দেওলালিতে।

বলিউড দর্শকদের অনেকেই জানেন দিলীপ কুমারের আসল নাম মোহাম্মদ ইউসুফ খান। সিনেমায় নাম লেখানোর সময় এটি পরিবর্তন করে দিলীপ কুমার রাখেন। কিন্তু কেন তিনি এটি করেছিলেন তা অনেকের কাছেই অজানা।

অভিনেতা রাজ কাপুরের বন্ধু ছিলেন দিলীপ কুমার। বাবার সঙ্গে রাগ করে ১৯৪০ বাড়ি থেকে বের হয়ে যান তিনি। পরে একটি স্যান্ডউইচ স্টল খোলেন। বেশ কিছুদিন সেটিই করেন। পরবর্তী সময়ে জমানো পাঁচ হাজার রুপি নিয়ে মুম্বাই পাড়ি জমান। এরপর বম্বে টকিজে যোগ দেন। সেখানে অভিনেতা অশোক কুমারের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং অভিনয়ের বিভিন্ন বিষয় শেখেন। পরবর্তী সময়ে প্রযোজক দেবিকা রানি তাকে ‘জোয়ার ভাটা’ সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব দেন কিন্তু নাম পরিবর্তন করে দিলীপ কুমার রাখতে বলেন।

যদিও এক সাক্ষাৎকারে দিলীপ কুমার বলেন, “আপনারা কী সত্যটা জানতে চান? বাবার ভয়ে আমি দিলীপ কুমার নাম রেখেছিলাম। আমার বাবা সিনেমা এবং এই ব্যবসার বিষয়ে খুবই কঠোর ছিলেন। তার বন্ধু দেওয়ান বিশ্বনাথের ছেলে পৃথ্বিরাজ কাপুর একজন অভিনেতা। বাবা প্রায়ই তাকে বলতেন, ‘তুমি কী করছো? তোমার যুবক ও সামর্থ্যবান ছেলে কেন এই কাজ করছে?”

‘দেবদাস’ সিনেমার দৃশ্য

তবে শুরুতে অমত থাকলেও ধীরে ধীরে রুপালি পর্দায় ছেলের প্রতিভা দেখে বিষয়টি মেনে নিয়েছিলেন দিলীপ কুমারের বাবা।

১৯৪৪ সালে ‘জোয়ার ভাটা’ সিনেমার মাধ্যমে দিলীপ কুমারের রুপালি পর্দায় অভিষেক হয়। প্রথম সিনেমাতেই বাজিমাত করেন। এরপর ‘জুগনু’, ‘শহীদ’, ‘মেলা’, ‘আন’, ‘দাগ’, ‘আরজু’, ‘দিদার’ প্রভৃতি সিনেমায় অভিনয় করেন। মাত্র আট বছরেই দিলীপ কুমার তারকা হয়ে ওঠেন।

দীর্ঘ ছয় দশকের অভিনয় ক্যারিয়ারে ৬০টির বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন দিলীপ কুমার। তার উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে— ‘নয়া দৌড়’, ‘মধুমতি’, ‘গঙ্গা যমুনা’, ‘রাম অউর শ্যাম’, ‘আজাদ’, ‘দেবদাস’, ‘মুঘল-ই-আজম’, ‘কোহিনূর’, ‘পয়গাম’, ‘আদমি’, ‘শক্তি’, ‘লিডার’ ইত্যাদি, যা তাকে একজন সুপারস্টার হিসেবে খ্যাতি দিয়েছে। ১৯৯৮ সালে ‘কিলা’ সিনেমায় তাকে শেষবার রুপালি পর্দায় দেখা গেছে।

মুঘল-ই-আজম সিনেমার দৃশ্য

কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ দিলীপ কুমার অসংখ্য পুরস্কার জিতেছেন। তিনি তার অভিনয় জীবনে ৮ বার ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেতা পুরস্কারসহ ১৯ বার ফিল্মফেয়ার মনোনয়ন ছাড়াও অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। ১৯৮০ সালে মুম্বাই শহরের সম্মানজনক শেরিফ পদটি অলংকৃত করেন তিনি।

ভারত সরকার ১৯৯১ সালে তাকে পদ্মভূষণ পুরস্কার পদক দিয়ে সম্মানিত করে। দিলীপ কুমারকে ১৯৯৩ সালে ফিল্মফেয়ার আজীবন সম্মাননা পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করা হয়। ১৯৯৪ সালে ভারত সরকার দিলীপ কুমারকে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার পদকে ভূষিত করে।

২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি ভারত সরকার তাকে পদ্মবিভূষণ দেওয়ার ঘোষণা দেয়, আর তা ২০১৫ সালের ১৩ ডিসেম্বর তার জন্মদিন উপলক্ষে তাকে প্রদান করা হয়। এ ছাড়া পাকিস্তান সরকার তাকে ভূষিত করেছে ‘নিশান-এ-ইমতিয়াজ’ সম্মাননায়।

পুরস্কার গ্রহণ করছেন দিলীপ কুমার

দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন  বলিউডের ‘ট্র্যাজেডি কিং’। সম্প্রতি মুম্বাইয়ের হিন্দুজা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। বুধবার (৭ জুলাই) সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন দিলীপ কুমার।