বিনোদন

রেহানা আবিষ্কার

ছেলেবেলায় শেখানো সেইসব কথা আমরা ভুলে গেছি, ‘অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে...’ ইত্যাদি। পাঠ্যবইয়ের সব শিক্ষা মানলে চলে না। ‘লেখাপড়া করে যে গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে’ এসব কথাও যে সত্য নয়, তা আমরা বড় হতে হতেই দেখেছি।

‘রেহানা মরিয়ম নূর’ নামে যে চলচ্চিত্রটি দেখে এলাম- এ চলচ্চিত্রের বিষয়টা কিন্তু অন্যায়ের বিরুদ্ধে তীব্র অবস্থান। একজন রেহানা ছাত্রীর নকল করা, স্কুলে তার মেয়ে বাচ্চাকে ছেলে বাচ্চার চিমটি কাটা, অধ্যাপকের হাতে ছাত্রী যৌন নিগ্রহ ইত্যাদি অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে সে; আপোসহীন। ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ চলচ্চিত্রের নন্দনতত্ত্ব, কারিগরী দিক, সিনেমার ভাষা ইত্যাদি নিয়ে আলাপের আগে এই  বিষয়টিকেই সামনে আনতে হয়। কেননা, আমার বিবেচনায়, অন্যায় সহ্য করাটা যে ঘৃণার সেটা ভুলে যাওয়াটাই আমাদের আজকের সমাজের সবচেয়ে বড় অন্যায়।

এই যে সিনেমা হলে গিয়ে টাকা খরচ করে সিনেমা দেখা এটাই তো ন্যায়সঙ্গত। কিন্তু সিনেমা মুক্তির আগে অনেকেই এ সিনেমা দেখে ফেলেছেন অনলাইনে, অবৈধপথে সেটাও তো অন্যায়। আমরা একটা সিনেমার প্রতিও ন্যায় ব্যবহার করি না। কারণ, ন্যায়ের পক্ষে থাকাটা অসুবিধাজনক। অন্যায়কে মেনে নিলেই সুবিধা হয়। ধরা যাক, আপনার একটি ওয়াইফাই কানেকশন আছে, কম্পিউটার আছে, ব্যস আপনি যে কোনো সিনেমা ডাউনলোড করে দেখে ফেললেন। ঢাকা শহরে সিনেমা দেখতে যাওয়া কিন্তু অনেক পরিশ্রমের। জ্যামের শহর, যানবাহন পাওয়া কঠিন, যাতায়াত খরচও অনেক, এর সঙ্গে সিনেমা দেখার খরচ, হাল্কা কোক-কেক খাওয়ার খরচ। মানে আসা-যাওয়া, সিনেমা দেখা মিলে কয়েক ঘণ্টা এবং কয়েকশ টাকা খসে যাবে।

তো এই অর্থনাশ, সময়নাশ না করে যদি সিনেমাটা ঘরে বসে দেখা যায়- কে আর ন্যায়-অন্যায় নিয়ে ভাবে? কারণ, ন্যায়সঙ্গত কাজটা সব সময়ই ঝামেলার। কিন্তু আমি এই ঝামেলায় পড়ে খুশি হয়েছি। এই প্রথম বাংলাদেশের একটি সিনেমাকে সাহসী মনে হয়েছে, এই প্রথম একটা বাংলা সিনেমা দেখেছি যা পূর্ণাঙ্গ বার্তা দেয় এবং চলমান অনেকগুলো অসঙ্গতি তুলে ধরে। আমার কেবলই মনে পড়ছিল- এই দেশে একজন ডাক্তারকে বোকা-সোকা দেখানোয় হুমায়ূন আহমেদের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়েছিল, তার পরিবারের কাউকে চিকিৎসা দেবে না বলে ডাক্তাররা প্রতিবাদ করেছিল।

আবার মনে পড়ছিল- কিছুদিন আগে দেখা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর একটা ওয়েব সিরিজের কথা। সেখানেও অফিসের নারী কর্মী ঊর্দ্ধতন কর্তার যৌন অবদমনের শিকার হন। কিন্তু আমি মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে বলে নেই, এই সিনেমাটি সবার ভালো লাগবে না। একটা সিনেমা কিংবা গল্প কিংবা বইয়ের একেক রকম পাঠক থাকে। কে ভালো দর্শক, পাঠক, কে বোদ্ধা, কে সাধারণ- সে তত্ত্ব এখানে কপচাবো না। আমি শুধু বলবো, সিনেমা যার কাছে নেহাতই বিনোদন, আনন্দ, তার কাছে অবশ্যই এই ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ ভালো লাগবে না।

কিন্তু ভালো লাগুক, না-লাগুক, এটা নিশ্চিত যে, রেহেনা মরিয়ম নূর একটা প্রতিবাদ। শুধু বিষয় বস্তুর জন্যই প্রতিবাদ তা নয়, আরো অনেক কিছুই আছে এখানে। প্রথমত, বাংলাদেশের সিনেমা জগতের জন্যই ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ একটি প্রতিবাদ। ‘হু হু হা তোকে আজ কেউ বাঁচাতে পারবে না’, ‘ছেড়ে দে শয়তান’, ‘তুই আমার দেহ পাবি মন পাবি না’ জাতের সংলাপ আর মুহূর্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। সিনেমা মানেই অনেক ধুমধারাক্কা, গানবাজনা, মারামারি, প্রতিশোধ, রক্তপাত- সেই সব ভুল মানের বিরুদ্ধেই রেহানা মরিয়ম নূর একটা প্রতিবাদী সিনেমা। এমনকি ছবির নামকরণটাই তো একটা প্রতিবাদ। ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ এই নামেই একটা সিনেমা হতে পারে তা কে কবে ভেবেছি আমরা? ‘রেহানা’ নামটি হলেও তবু একটা কথা ছিল। তানভীর মোকাম্মেলের দারুণ একটি সিনেমা আছে ‘রাবেয়া’ শিরোনামে। নারীর নামে গুটিকয়েক সিনেমা হয়েছে, নারীকে কেন্দ্র করেও গুটিকয়েক সিনেমা হয়েছে।

কিন্তু আমরা কি এই স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের কোনো সিনেমায় এমন শক্তিশালী নারী দেখেছি? এমন নারীকেন্দ্রিক, নারীর জন্য, নারীর মতো করে একটা সাহসী সিনেমা কেউ এর আগে নির্মাণ করেছেন? আমার নজরে পড়েনি। এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে সিনেমাও তো পুরুষতান্ত্রিক হওয়ার কথা। তাই হয় সচারাচর। কিন্তু সাদ ‘রেহানা মরিয়ম নূর’কে একাই দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন পুরো সিস্টেমের বিরুদ্ধে। রেহানা, আপাত ঠাণ্ডা, চুপচাপ, কিন্তু দৃঢ়, জেদি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার। একটু প্রেম, একটু যৌনতার সুরসুরি, একটু মেলোড্রামার খিচুরির বাইরের জাতের সিনেমা এটি। প্রচলিত সিনেমা দর্শনের অভিজ্ঞতার বাইরের সিনেমা ‘রেহানা মরিয়ম নুর’। নারীর জন্য এবং নারীর সঙ্গী পুরুষের জন্য আজকের দিনের প্রেক্ষাপটে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সিনেমা। সুখের কথা, এ দেশ দীর্ঘকাল নারীর নেতৃত্বে চালিত। এ দেশের নারীরা এখন পাহাড়ে যায়, একটা দুটা নয়, সাত সাতটা পর্বত চূড়া জয় করতে যায়। উল্লেখ্য ছবিতে সেভেন সামিট জয় প্রত্যাশী ওয়াসফিয়া নাজনীনের খবরটি এ ছবিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করে। নারীরা সিনেমাও বানিয়েছে এ দেশে।

আজমেরী হক বাঁধন

কিন্তু সাদের মতো এতো বাস্তবসম্মত অথচ শক্তিশালী ভঙ্গিতে কেউ নারীকে তুলে ধরতে পারেনি। নারীর জন্য তো বটেই, সাদের এই সিনেমা পুরুষের জন্যও জরুরি। নারী-পুরুষের দ্বান্দ্বিক সম্পর্কের যথার্থ চিত্রায়ন করেছেন সাদ। জোরালো বক্তব্য অথচ কোথাও কোনো বক্তৃতা নেই, উচ্চকিত সংলাপ নেই, বাড়াবাড়ি নেই। গল্প বলার তাড়াহুড়া নেই, সাসপেন্স, ক্লাইমেক্স নামক ফিল্মি ব্যাপার সৃষ্টির কোনো চেষ্টাই নেই। তবুও ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ এক টানটান উত্তেজনাময় সিনেমা।

কিন্তু অনেকেই বলেছেন, এ চলচ্চিত্র বড় ধীর গতির। আসলে গতির সংজ্ঞাটাই আমরা ভুলে গেছি। গতি মানেই বাইরের অস্থিরতা নয়। ভেতরে ভেতরে যে মানুষ ভাঙে, ভেতরে ভেতরে যে মানুষ নতুন করে গড়ে ওঠে তার চলার গতিটা তো বাইরে থেকে তেমন ধরা যায় না। কেউ যদি ‘রেহানা মরিয়ম নূর’-এর অন্তর্গত দ্বন্দ্ব ধরতে পারেন, তার ছোট্ট কন্যা, তার ছোট ভাইয়ের সমস্যাগুলোকে নিজের সংবেদনশীল মন দিয়ে দেখতে পারেন তবে আমি নিশ্চিত এ সিনেমা দেখার সময় তিনি সিট থেকে উঠতে পারবেন না, পপকর্ন চিবুতে পারবেন না। অনেক দৌড়, ভাঙচুর, মারামারি, কথায় কথায় নাচ-গানই সিনেমার প্রাচুর্য নয়, গতিও নয়।

কিন্তু, বাংলাদেশের সিনেমায় সবচেয়ে বড় অভাব কি? আমার বিবেচনায়- বাস্তবতা। আমাদের শাকিব খান, অপু বিশ্বাসরা অন্য জগতের মানুষ। তাদের খাওয়া, পোশাক, চালচলন, কথাবার্তা কোনো কিছুর সঙ্গে এই বাংলাদেশের মানুষের মিল নেই। রূপালী পর্দার মানুষ যেন এলিয়েন। তারা আমাদের মতো করে হাসে না, কাঁদে না। তাদের শোক-সুখ সবই আলাদা কোনো ভঙ্গির। কিন্তু ‘রেহানা মরিয়ম নূর’-এর চরিত্ররা বাস্তব। তারা মোবাইল টেপে, পরীক্ষার খাতায় নকল করে, মেয়েকে বকা দেয়, মেয়েকে ভালোবাসে, ভাই তার বোনের কাছ থেকে বাজার খরচ বুঝে নেয়, শিক্ষক তার ছাত্রীকে লাঞ্ছিত করে, ছাত্রী চায় শিক্ষকের কাছ থেকে বাড়তি সুবিধা নিতে, অভিভাবক তার নিজের সন্তানকে একপাক্ষিক বিচার করে, ছোট্ট মেয়ে শিশুটিও সহপাঠীর চিমটি থেকে রক্ষা পায় না। এ সবই আমাদের বড় চেনা-জানা ঘটনা। আমরা এগুলো নিয়ে কথা বলি না। কথা বললেই ঝামেলা। আমরা নাগরিক মানুষ ঝামেলা এড়িয়ে যার যার খুপরিতে বাঁচতে চাই যেন সব নিরাপদ দানা খাওয়া পোষা কবুতর।

কিন্তু সত্যি কথা হলো, সাদের ছবি দেখতে আরাম লাগেনি আমার। ভীষণ কষ্ট হয়েছে। বলা দরকার, আমার নিজের ক্লাস্ট্রোফোবিয়া (claustrophobia) আছে। যে কোন আবদ্ধ স্থানে বেশিক্ষণ থাকলে ভেতরে আতঙ্ক জমে আমার। সাদের এই ছবি পুরোটাই আবদ্ধস্থানে। হাসপাতালের ক্লাসরুম, করিডোর, হোস্টেলের মশারি টানানো ঘর, সব সময় একটা দমবন্ধ করা আবহ তৈরি করে দৃশ্যগুলো। অন্যদিকে টানা নীলচে একটা আবহ ছবিজুড়ে কেমন যেন মগজের মধ্যে চাপ ফেলে। আমরা কি একটা দুঃস্বপ্নের রাতের মধ্যেই আছি? এমনকি পোশাক পরিকল্পনাতেও নীল, কালো, ছাই রঙ কেমন যেন অনিঃশেষ রাত্রির দিকে ঠেলতে থাকে। এই আলো-আঁধার কি ফুরাবে না। ক্রমশ চাপ সৃষ্টি হতে থাকে আমার ভেতরে।

কি আশ্চর্য, সিনেমা দেখতে গিয়ে এতো চাপ! মনের উপর, মগজের উপর, চোখের উপর কী ভয়ঙ্কর চাপ সৃষ্টি করতে জানেন সাদ। একবার লাশের ঘর দেখেছিলাম, ঠাণ্ডা ফ্রিজারে লাশ, এমনই নীল আলো ছিল সেখানে। সেই স্মৃতি মনে পড়তে থাকে। রেহানা মরিয়ম নূর দেখতে দেখতে আমার ভয় করে। এই চাপ, এই ভয় বাড়তে থাকে তুহিন তামিজুলের সিনেমাটোগ্রাফিতে, বিশেষত ক্যামেরা মুভমেন্ট। ছবির চরিত্রগুলোর মতো, গল্পের মতো এবং ছবি দেখতে দেখতে আমার মনের মতোই ক্যামেরা এখানে অস্থির। এ্যানি কথা বলছে। কেমন করে স্যার তাকে ব্যবহার করেছে, কেমন করে জামার ভেতরে হাত দিয়েছে। এই সময় ক্যামেরা কাঁপতে থাকে, মৃদু দুলতে থাকে। এটা কি এ্যানির কম্পন? নাকি আমার ভেতরের কম্পন। আমার অস্বস্তি লাগে। এক অস্বস্তিকর গল্পের আয়নায় দাঁড়িয়ে আমি দমবন্ধ অনুভব করি, আটকে যেতে থাকি। নিজেকে বয়ামের ভেতরে আটকা পড়া একটা মাছি মনে হয়। যে কোনো হত্যা, খুন, নৃশংস ঘটনার চেয়ে আমার ভেতরে বেশি টেনশন তৈরি হতে থাকে।

কিন্তু বিস্ময়কর রকমের শীতল আর পরিমিত অভিনয় দিয়ে আমার টেনশন আরো বাড়িয়ে তোলেন আজমেরি হক বাঁধন। কী আশ্চর্য ব্যাপার যে, এমন একজন অভিনেত্রীকে আমরা এতোদিনে যথার্থ একটা চরিত্রে দেখলাম। সত্যিই এ দেশে প্রতিভাকে কতোটাই কাজে লাগাতে পারি আমরা? কতোগুলো চরিত্র একাই ধারণ করলেন বাঁধন? শিক্ষক, চিকিৎসক, বোন, মা, প্রতিবাদী নারী, ব্যথিত নারী আবার যোদ্ধা নারী। পুরুষ শাসিত সমাজে সে একাই এক অদম্য, বলিষ্ঠ চরিত্র। এমনকি কোনো নারীও নেই তার পাশে। এমন একটি চরিত্র রচনা করার জন্য সাদকে মনে রাখবো আমরা বহুকাল আর এমন একটি চরিত্রকে বাস্তবসম্মত করে তুলে ধরার জন্য বাঁধনকেও।

কিন্তু অভিনয়ই তো সব নয়। একটা সিনেমার বড় দিক হলো সম্পাদনা। ফ্রেম থেকে ফ্রেমে আমি কী দেখবো, কীভাবে দেখবো সেটা ঠিক করে দেন একজন চলচ্চিত্র সম্পাদক। সুখের কথা, সাদের সবচেয়ে বড় যোগ্যতা তিনি একজন উঁচুদরের সম্পাদনাকারী। তার কারণেই আমরা রেহানাকে দেখি ক্ষণে ফ্রেমের ডান দিকে, ক্ষণে বাম দিকে। দেখার নানান দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে হাসপাতালের ভেতরের দৃশ্যগুলোকে তিনি নানান মন্তাজে সাজান। সামগ্রিকভাবে এ সিনেমার একটা বড় সম্পদ প্রোডাকশন ডিজাইন, আলো-পোশাক-শব্দ পরিকল্পনা ও শিল্পনির্দেশনা। এ কথা কে না জানে, সিনেমা একটা টোটাল ওয়ার্ক, টিম ওয়ার্ক। পুরো দল মিলে নিঁখুত সবকিছুর জোড়া দিয়েই তৈরি হয় একটা পুর্ণাঙ্গ সিনেমা। সেই দিক থেকে ‘রেহানা মরিয়ম নুর’ একটা পূর্ণাঙ্গ সিনেমা। চলচ্চিত্রের জন্য সবচেয়ে বড় জিনিস হলো সমন্বয়। চিত্রনাট্য, ক্যামেরা, আলো, পোশাক, অভিনয়, মিউজিক, শব্দ, আবেগ, কারিগরি দিক ইত্যাদির সমন্বয়। এই সমন্বয়টা সাদ খুব ভালো বোঝেন।

কিন্তু এর কথ্য ভাষারীতি আমার পছন্দ হয়নি। করসে, খাইসে ভাষা এখন ঢাকায় খুব চলে। এই চলতি ভাষাটা আমার পছন্দ নয়, জীবনেও নয়, সিনেমায়ও নয়। আমার মনে হয়- বাংলা ভাষার যে নিজস্ব, গতিময়, মধুর একটা ছন্দ আছে তা প্রমিত বাংলাতে যেমন আছে, তেমনি যে কোনো আঞ্চলিক কথ্যরীতিতেও আছে। তবে এই করস, খাইস, আইস রীতির মধ্যে আমি মাধুর্য পাই না। তবে সুখের কথা, এই সংলাপ রীতি খুব বেশি ব্যবহৃত হয়নি ‘রেহানা মরিয়ম নূর’-এ। এমনিতে এই ছবির সংলাপ ভীষণ শক্তিশালী।

কিন্তু অন্যায়ের শক্তির চেয়ে ন্যায়ের শক্তিটাই বেশি। ছবিতে যখন ধর্ষণকারী অধ্যাপক বলেন, ‘সত্যি কথা কি জানো? রেপড সব মেয়ে হয় না, তোমার মতো মেয়েরাই রেপড হয়।’ -তখন আমাদের বুঝতে অসুবিধা হয় না, পুরুষতন্ত্রের গোড়া কতো শক্ত। চোরের মা’র বড় গলা এই পাঠ্য বইয়ে পড়া বাগধারা আমি তখন নতুন করে আবিষ্কার করি। ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ আমাকে অনেক কিছু আবিষ্কারের সুযোগ করে দেয়। বাংলা সিনেমার সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি আগ্রহী হয়ে উঠি।

একটা অফটপিক দিয়ে লেখাটা শেষ করি। সাদের পূর্ববর্তী ছবি ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’-এর নায়িকার নামও ছিল রেহানা। সে রেহানা কিন্তু বিয়ের আগেই গর্ভবতী হয়। তার প্রেমিকটি তাকে ছেড়ে প্রবাসে চলে যায়। সেই রেহানাই কি আজকের ‘রেহানা মরিয়ম নূর’-এর বঞ্চনার ধারাবাহিকতা টানছেন?