বিনোদন

তারকাদের শুভেচ্ছায় ভাসছেন সুবর্ণা মুস্তাফা

বরেণ্য অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা। একাধারে তিনি নির্মাতা, আবৃত্তিশিল্পী, উপস্থাপক ও সংসদ সদস্য। আশির দশকে নিজেকে জনপ্রিয় অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন সুবর্ণা মুস্তাফা। কিন্তু মেঘে মেঘে অনেক বেলা হয়েছে। জীবন থেকে পেরিয়ে গেছে ৬২টি বছর। আজ (২ ডিসেম্বর) তেষট্টিতে পা দিলেন এই নন্দিত অভিনেত্রী।

জানা যায়, বিশেষ এই দিনে দেশে নেই সুবর্ণা মুস্তাফা। বর্তমানে কানাডায় অবস্থান করছেন। দেশে না থাকলেও শোবিজ অঙ্গনের তারকাদের জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসায় সিক্ত সুবর্ণা মুস্তাফা। এ অভিনেত্রী কানাডায় গেলেও দেশেই রয়েছেন তার স্বামী নির্মাতা বদরুল আনাম সৌদ। দূরে থাকায় প্রিয় মানুষকে খুব মিস করছেন তিনি। সৌদ তার ফেসবুকে লিখেন, ‘মুস্তাফা, তোমাকে খুব মিস করছি। শুভ জন্মদিন। দ্রুত আসো প্লিজ।’ দূরে থাকলেও ভালোবাসার মানুষের এই আকুতি দৃষ্টি এড়ায়নি সুবর্ণা মুস্তাফার। জবাবে তিনি লিখেন, ‘আমিও তোমাকে অনেক বেশি মিস করছি। তোমাকে সবসময় ভালোবাসি।’

অভিনেতা সাজু খাদেম সুবর্ণা মুস্তাফার সঙ্গে তোলা একটি ছবি পোস্ট করে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। কানাডায় এখন অনেক শীত। তাই মজা করে সাজু খাদেম ক্যাপশনে লিখেন, ‘চোখের পানি মুছে দেয়ার লোক কানাডায় প্রচুর পাবেন। কিন্তু নাকের পানি মুছে দেয়ার লোক পাবেন না। তাই এই শীতে প্লিজ ঠান্ডা লাগাবেন না। শুভ জন্মদিন সুবর্ণা মুস্তাফা আপা।’

দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দিয়ে বিশেষ দিনে সুবর্ণা মুস্তাফাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী। শুরুতে তিনি লিখেন, ‘সুবর্ণা আপা, কষ্টের সময়গুলোতে যিনি মায়া-মমতা, ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখেছিলেন আমাকে, আমার পরিবারকে। তুমি কি জানো আজ তোমার কাজের ৫৩ বছর! তুমি ভাবতে পারো এখনো তুমি সদর্পে কাজ করছো এই প্রজন্মের সঙ্গে এবং তুমি আমাদের দেশের মাননীয় সাংসদ সদস্য। হুম, আমরা ভাবতেই পারি, কারণ তুমি যোগ্য। অভিনন্দন তোমাকে। অনেক ভালোবাসা, শুভকামনা।’

অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি ১৯৯৪ সালে প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। আর তার সহশিল্পী ছিলেন সুবর্ণা মুস্তাফা। সেই সময়ের কয়েকটি ঘটনা বর্ণনা করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রিয় শিল্পীকে। অভিনেত্রী অপর্ণা ঘোষ লিখেন, ‘শুভ জন্মদিন ম্যাম।’ বন্যা মির্জা সুবর্ণা মুস্তাফার সঙ্গে তোলা ছবি পোস্ট করে লিখেন, ‘শুভ জন্মদিন।’ এমন অসংখ্য শুভেচ্ছা বার্তায় ভেসে বেড়াচ্ছেন চিরসবুজ অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা।

১৯৫৯ সালের ২ ডিসেম্বর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন সুবর্ণা মুস্তাফা। তার পৈত্রিক নিবাস ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়নে। পিতা গোলাম মুস্তাফা ছিলেন প্রখ্যাত অভিনেতা ও আবৃত্তিশিল্পী। তার মা পাকিস্তান রেডিওতে প্রযোজনার দায়িত্বে ছিলেন। মায়ের হাত ধরে মাত্র ৫/৬ বছর বয়সে বেতার নাটকে কাজ শুরু করেন তিনি। নবম শ্রেণিতে পড়াকালীন প্রথম টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেন। ১৯৭১ সালের পূর্ব পর্যন্ত শিশুশিল্পী হিসেবে নিয়মিত টেলিভিশনে কাজ করেন এই অভিনেত্রী।

সত্তর দশকে ঢাকা থিয়েটারে নাট্যকার সেলিম আল দীনের নাটক ‘জন্ডিস’ ও ‘বিবিধ বেলুন’-এ অভিনয় করেন সুবর্ণা মুস্তাফা। আশির দশকে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় টিভি অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন তিনি। বিশেষ করে আফজাল হোসেন এবং হুমায়ুন ফরীদির সঙ্গে তার জুটি ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা লাভ করে। নব্বই দশকে বরেণ্য কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের লেখা ‘কোথাও কেউ নেই’ ও ‘আজ রবিবার’ নামে টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেও খ্যাতি অর্জন করেন। ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকে মুনা চরিত্রে অভিনয় করেন সুবর্ণা। যা এখনো দর্শক মনে গেঁথে আছে।

১৯৮০ সালে সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী পরিচালিত ‘ঘুড্ডি’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন এই অভিনেত্রী। ১৯৮৩ সালে ‘নতুন বউ’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৮৪ সালে ‘নয়নের আলো’ সিনেমার মাধ্যমে সব শ্রেণির দর্শকের মনে নাড়া দেন সুবর্ণা মুস্তাফা। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হলো—‘ঘুড্ডি’ (১৯৮০), ‘নয়নের আলো’ (১৯৮৪), ‘পালাবি কোথায়’ (১৯৯৭), ‘গহীন বালুচর’ (২০১৭) প্রভৃতি।

১৯৮৩ সালে ‘নতুন বউ’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন সুবর্ণা মুস্তাফা। অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করেছে।