বিনোদন

দিনে নীরব এফডিসি রাতের আঁধারে অন্য খেলা

চলচ্চিত্রের ‘আঁতুর ঘর’ বলা হয় বিএফডিসিকে। এখানেই চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়। কিন্তু সিনেমা নির্মাণ কমে যাওয়ায় এখন আর লাইট, ক্যামেরার ঝলকানি, পরিচালকের ‘অ্যাকশন-কাট’ ইত্যাদি তেমন আর শোনা যায় না। আগের মতো তারায় তারায় মুখরিত হয় না এফডিসি চত্বর।

কোলাহলপূর্ণ সেই এফডিসি অনেকটাই নীরব, নিস্তব্ধ। অন্যদিকে ক্ষমতা আর আমিত্ব প্রকাশে ব্যস্ত চলচ্চিত্রের কিছু মানুষ। এদের সংখ্যা কম হলেও এরা একে অন্যের সঙ্গে রেষারেষি, ক্ষমতা প্রদর্শনে ব্যস্ত। যে কারণে দিনে এফডিসি নীরব থাকলেও রাতের এফডিসি আবার অন্যরকম। 

চলচ্চিত্র নির্মাণের সংখ্যা তলানীতে ঠেকেছে। কিন্তু তাতে মোটেও কমেনি এফডিসির বিভিন্ন সংগঠনের নির্বাচনের আমেজ। বিশেষ করে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন বেশ আলোচিত। এই নির্বাচন ঘিরে থাকে শিল্পীদের সরব উপস্থিতি। আগামী ২৮ জানুয়ারি সংগঠনটি দ্বি-বার্ষিক নিবার্চন। এফডিসিতে বইছে নির্বাচনী আমেজ। সন্ধ্যার পর এফডিসি লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। এদের বেশিরভাগ বহিরাগত। কখনো পরিচিতজনের সঙ্গে, কখনো নিরাপত্তাকর্মীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে, আবার কখনো ৫০-১০০ টাকার বিনিময়ে এফডিসিতে ঢুকে পড়ে উৎসুক দর্শক।

এমনও অভিযোগও শোনা যায় প্রার্থীরা তাদের শক্তি প্রদর্শনের জন্য বহিরাগতদের নিয়ে আসেন। বহিরাগতদের কারণেই অনেক সময় ঘটে অপ্রীতিকর ঘটনা। এর আগে লাঞ্ছিত হতে হয়েছে শাকিব খানকে। এছাড়া এফডিসির কড়ইতলায় এক রাতে সহকারী পরিচালক সমিতির আনুমানিক ১০জন সদস্য সহকারী পরিচালক মনিরের উপর হামলা করে। ঘটনার এক পর্যায়ে উৎপাদন ও ব্যবস্থাপক সমিতির সদস্যরা সংগঠিত হয়ে সহকারী পরিচালক সমিতির সদস্যদের উপর হামলা চালায়। মুহূর্তের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। 

এছাড়া একই বছর সহকারী পরিচালকদের সঙ্গে চিত্রনায়ক শাকিব খানের বাকবিতণ্ডা হয়। পাশাপাশি দুই বিনোদন সাংবাদিক জিয়াউদ্দিন আলম ও সুদীপ্ত সাঈদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। এসব ঘটনার সময় বহিরাগত অনেকে জড়িত ছিলেন বলে জানা যায়। গত নির্বাচনে চিত্রনায়িকা মৌসুমীর সঙ্গেও এমন ঘটনা ঘটেছে। এসব অপ্রীতিকর ঘটনার পেছনে জড়িয়ে আছে বহিরাগতরা। ফলে অনেক বলেন চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট সমিতিগুলোর নির্বাচনের সময় গর্জে ওঠে এফডিসি। নিজেদের শক্তি আর ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য বহিরাগতদের নিয়ে শোডাউন করেন অনেকে। আর এসবের বেশির ভাগ হয় রাতে।

এদিকে সাংবাদিকের মাথা বিক্রি করে ঢুকে পরেন ইউটিউবাররা। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে যেখানেই শিল্পীরা কথা বলছেন সেখানেই মোবাইল বা ক্যামেরা ওপেন করে ভিডিও করছেন ইউটিউবাররা। এরা অনেক সময় বক্তব্যের মূল কথা ফেলে দিয়ে বির্তকিত অংশটুকু প্রকাশ করে ভাইরাল করেন শিল্পীদের। এতে করে চলচ্চিত্রের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় বলে মনে করেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টিরা।  

কেপিআইভুক্ত একটি এলাকায় কীভাবে বহিরাগতরা প্রবেশ করে? যতদূর জানা যায় বহিরাগতরা শিল্পীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়েই বিএফডিসিতে প্রবেশ করে। তাছাড়া এফডিসিতে নির্মাণ কাজ চলছে। সেখানে কাজ করছেন নির্মাণ শ্রমিকরা। এরাও শিল্পীদের সঙ্গে সেলফি তুলতে ভির জমান বলে অভিযোগ রয়েছে।

‘শিলপাটার ঘষাঘষি মরিচের জীবন শেষ’ বর্তমানে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ঢাকার চলচ্চিত্রে। রাঘব বোয়ালরা কথার ফুলঝুড়ি আর একে অন্যের প্রতি ক্ষমতা প্রদর্শন করছেন। চলচ্চিত্রের এ অস্থিরতায় ইউটিউবে সিনেমা দেখে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনা-সমালোচনার ঝড় তুলে নিজেদের বোদ্ধা ভাবছেন অনেকে। শিল্পীর সঙ্গে শিল্পীর, নির্মাতার সঙ্গে নির্মাতার, প্রযোজকের সঙ্গে প্রযোজকের নেই কোনো আত্মিক সম্পর্ক। দিন দিন বেড়েই চলছে তাদের রেষারেষি। বেড়েই চলছে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ, মামলা। হামলার ঘটনাও ঘটেছে। ক্ষমতা প্রদর্শন আর নোংরা রাজনীতি বাড়লেও দিনে দিনে কমে যাচ্ছে সিনেমা নির্মাণের সংখ্যা। ফলে হলে সিনেমা মুক্তির সংখ্যাও কমে গিয়েছে।

তবে অনেকে মনে করেন, কাদা ছোড়াছুড়ি করে নয়, নিয়মের মধ্যে থেকে চলচ্চিত্রের সুদিন ফিরিয়ে আনা সম্ভব। চলচ্চিত্রের স্বার্থে সকল ভেদ ভুলে এখন প্রয়োজন বেশি বেশি মানসম্পন্ন সিনেমা নির্মাণ করা। তাহলেই চলচ্চিত্রে আবারো সুবাতাস বইবে।