বিনোদন

সাইমনের স্বপ্নযাত্রা

রাহাত সাইফুলঢাকা, ১৯ এপ্রিল : ইচ্ছা ছিলো ব্যবসা কিংবা রাজনীতি করবেন। পরিবারের সবার চাওয়া রাজপুত্রের মতো দেখতে ছেলেটি একদিন নায়ক হবেন। দেশের মানুষ তাকে চিনবে-জানবে। কিন্তু লাজুক সাইমন ক্যামেরাকে বড় ভয় পেতেন। ফলে পড়ে যান বিপাকে। অবশেষে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেন একদিন। পূর্ণ হলো পরিবারের চাওয়া। ঢাকাই চলচ্চিত্র পেলো নায়ক সাইমন সাদিককে।

 

সাইমন অভিনীত প্রথম সিনেমা জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত জি হুজুর। ২০১২ সালে মুক্তি পায় এটি। তার বিপরীতে ছিলেন সারাহ জেরিন। প্রথম চলচ্চিত্রে অভিনয় প্রসঙ্গে সাইমন বলেন, ‘আমি চলচ্চিত্রের নায়ক হব তা কখনই ভাবিনি। সাগর শিকদার নামে চলচ্চিত্রের এক জুনিয়র শিল্পীর সঙ্গে পরিচয় ছিল আমার।

তিনি আরো বলেন, ‘নায়ক হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই কেটে যায় আরেকটি বছর। এরপর একটু আশার আলো দেখতে পাই। নতুন ছবির জন্য বিনিয়োগকারী খুঁজে পান রাজু স্যার। তিনি হলেন আনন্দমেলা চলচ্চিত্রের আব্বাসউল্লাহ শিকদার স্যার। জীবনের প্রথমেই এত বড় ব্যানার পেয়ে সত্যিই আমার খুব ভালো লাগে। আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া আদায় করি। একদল নতুন মুখ নিয়ে শুরু হয় জী হুজুর ছবির কাজ।’

জীবনের প্রথম অভিনয় করতে গিয়ে এ নায়ককে পরতে হয়েছে অনেক বিপাকে। এবার শোনালেন তার সেই বিপাকের কথা। তিনি বলেন, ‘কারো কারো কথায় অন্তরটা বিষিয়ে উঠতো। কান্না পেত। ওয়াশরুমে গিয়ে অনেক কেঁদেছি। কেউ কেউ কটুউক্তি করে বলতেন, ‘রাজু ভাই এটাকে কোথা থেকে ধরে এনেছেন! এটা কোন নায়ক হলো! মানুষ মানুষকে এভাবে কষ্ট দিতে পারে তা বিশ্বাস করতেও কষ্ট হয়। সবকিছু ছেড়ে দিয়ে গ্রামে ফিরে যেতে চেয়েছি। কিন্তু পরিচালক আমাকে যেতে দেননি। রাজু স্যার বলতেন, ‘এসব কষ্ট মেনে নিয়েই সামনে এগিয়ে যেতে হবে। কষ্টকে শক্তিতে পরিণত করো।’ তার এ উৎসাহে আবার চাঙ্গা হয়েছি। সত্যিই রাজু স্যারের মতো মানুষ হয় না। তিনি যদি তখন আমাকে অনুপ্রেরণা না দিতেন তাহলে আমার জীবন হয়তো এমন হতো না।’

 

সাইমন পরিচিতি

পুরো নাম : সাদিক মুহাম্মদ সাইমন।জন্ম : ১৯৮৫, ৩০ আগস্টজন্মস্থান : কিশোরগঞ্জের কলাপাড়া গ্রামে।উচ্চতা : ৬ ফুট।ওজন : ৭৪ কেজি।পছন্দের রং : কালো।খাবার : ঝাল চিকেন।পোশাক : জিন্স প্যান্ট, টি শার্ট। ফিক্সড কোন ব্র্যান্ড পরেন না। যখন যেটা ভালো লাগে সেটাই পড়েন তিনি।প্রিয় সংগীত শিল্পী : জেমস।স্মরণীয় ঘটনা : প্রথম ছবির মহরত।শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : এস,এস.সি ও এইচ এসসি পাস করেছেন কিশোরগঞ্জ থেকে।বিএসএস করেছেন এশিয়ান ইউনির্ভাসিটিতে।বাবার নাম : মোঃ সাদেকুর রহমান।বোনের নাম : পপি, পলি, দিপু (বোনেরা বড়); ভাই সাদিক মুহাম্মদ সাফায়ত (ছোট)। স্টামফোর্ড-এ ফ্লিম এন্ড মিডিয়াতে পড়ছেন।

 

জী হুজুরসহ এ পযর্ন্ত চারটা সিনেমা রিলিজ হয়েছে এ নায়কের। এগুলো হলো- পোড়ামন; এতে আরো অভিনয় করেছেন মাহিয়া মাহি ও আনিসুর রহমান মিলন। এরপর মুক্তি পায় সাইমন ও নিঝুম অভিনীত এর বেশি ভালোবাসা যায় না সিনেমাটি। সাইমন অভিনীত সর্বশেষ মুক্তি পাওয়া সিনেমা শাহাদাৎ হোসেন লিটনের তোমার কাছে ঋণী। এতে তার সহশিল্পী ছিলেন তমা মির্জা। বর্তমানে তিনি পাঁচটি সিনেমার কাজ শেষ করেছেন। ছবিগুলো এখন মুক্তির অপেক্ষায় আছে। এগুলো হলো- নজরুল ইসলাম খানের রানা প্লাজা, রাজু চৌধুরীর তুই শুধু আমার, শফিক হাসানের স্বপ্ন ছোয়া, এ জে রানার অজান্তে ভালোবাসা এবংবন্ধুর লাগি পরান কান্দে।

 

বর্তমানে এ চিত্রনায়কের হাতে রয়েছে ১৩ টি চলচ্চিত্র। সারা বছর এই ছবিগুলোর কাজে ব্যস্ত থাকবেন তিনি। মাত্র দুবছর হয়েছে অভিনয়ের বয়স। তৃতীয় বছরে এসেই একসঙ্গে এতোগুলো কাজ হাতে নিয়েছেন। তবে এতে মোটেও চিন্তিত নন সাইমন। কারণ তিনি মনে করেন কাজটি কঠিন হলেও মোটেও অসম্ভব নয়।

চলচ্চিত্রে ব্যস্ত এ অভিনেতার কাছে ছোটর্পদার নির্মাতাদের কাছ থেকেও আসছে অনেক প্রস্তাব। কিন্তু আপাতত কোন সময় রাখছেন না অন্য কাজের জন্য।

 

সাইমন বলেন, ‘অভিনয়ের অবসরে অভিনয়ই করতে চাই। অভিনয়কে এত বেশি আপন করে নিয়েছি যে অবসর রাখতে ইচ্ছা করে না। অবসরে গাড়িকে সঙ্গী করে ঘুরে বেড়াই। অভিনয়ে আমার নির্ধারিত কোন আইডল নেই। একটা রিকশাওয়ালাকে দেখে আমি শেখার চেষ্টা করি, তিনি কিভাবে রিকশা চালান। যেমন জ্বি হুজুর সিনেমাতে কাজ করার সময় আমি হুজুরদের সঙ্গে মিশে বোঝার চেষ্টা করেছি তাদের চরিত্র কেমন। এক কথায় আমার আইডল সাধারণ মানুষ।’

জীবনে কখনও পরিকল্পনা করে কোন কাজ করেননি সাইমন। তাহলে কি অভিনয় নিয়েও কোন পরিকল্পনা নেই তার? এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘পরিকল্পনা নেই, তবে স্বপ্ন আছে। সবার মুখে চিত্রনায়ক সাইমনের নামটা শুনতে চাই। আমি যখন থাকবো না তখন আমার নামটা উচ্চারণ করে লোকে যেন বলে, সাইমন ভালো অভিনয় করেছে। ব্যাস এটুকুই।’  

উঠতি এ তরুণ চিত্রনায়ক জন্ম কিশোরগঞ্জের কলাপাড়ায়। এখন সাইমনকে নিয়ে গ্রামের মানুষের আনন্দের শেষ নেই। সম্প্রতি ইটিস পিটিস প্রেম নামের নতুন চলচ্চিত্রের শুটিং নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ছবিটিতে তিনি কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করছেন। তার সঙ্গে আরো অভিনয় করছেন নবাগত নায়িকা প্রীয়ন্তি, মিশা সওদাগার, আলি রাজ। ছবিটি পরিচালনা করছেন মোস্তাফিজুর রহমান মানিক।

   

রাইজিংবিডি/শান্ত/রাশেদ শাওন